প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী ব্যুরো
পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে মসজিদ মন্দির এতিমখানায় নিয়মিত অনুদান দিয়ে যাওয়া রাজশাহীর সেই খুুকি নামের নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে সেখানকার জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবদুল জলিল তার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুকিকে নিয়ে তৈরি করা দেশ টিভির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অসহায় খুকিকে কীভাবে সবাই ঠকিয়েছে। চরম দুর্দিনেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। এজন্যই তিনি পত্রিকা বিক্রি করে অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করেন। তার নিজস্ব বাড়ি আছে। পৈত্রিকভাবে তারা স্বচ্ছল ছিলেন। কিন্তু কিছুটা মানসিক সমস্যা হওয়ায় নিজের ভাই-বোনও তাকে দেখেন না। কিন্তু জীবন সংগ্রামে দমে যাননি খুকি। পত্রিকা বিক্রি করে যে অর্থ পান সে অর্থের সামান্য কিছু নিজের জন্য রেখে সিংহভাগই দান করে দিতেন অসহায় মানুষ ও মসজিদ-মন্দির ও এতিম খানায়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে রাজশাহীর পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীনের মনে তা নাড়া দেয়। এরপর তিনি খুকির বাড়িতে যান। তার সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন। শেখ এহসান উদ্দীন জানান, তাকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসক পত্রিকা বিক্রেতা খুকির বাসায় যান। এরপর তারা খুকির সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে দেখভালের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নেওয়া হবে বলে জানান।
এ সময় খুকি রাজশাহী জেলা প্রশাসককে জানান, তার বাবা রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন। তার মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই তাকে ঠকিয়েছে। চরম দুর্দিনেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, খুকির জমি আছে। বাড়ি আছে। তবে তা বসবাস উপযোগী করা প্রয়োজন। তার সেবা-যতœ বেশি প্রয়োজন। কারণ তিনি একা থাকেন। এখন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বাড়িটি বসবাস উপযোগী করে দেওয়া হবে। যদিও এরই মধ্যে অনেকেই খুকির পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। এরপরও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুকিকে প্রতি মাসের বাজার খরচ দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাকে দেখভালের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সহকারী কমিশনার।
ডিসি মো. আবদুল জলিল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা খুকির পাশে আছি। তাকে দেখভালের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত তিনিই খুকিকে দেখভালের জন্য বলেছেন। তিনি নিজেই খুকির দায়িত্ব নিয়েছেন। এদিকে, খুকি রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দেশটিভির রিপোর্টটি ২০০৯ সালে করা হয়। এতে দেখানো হয়েছে- প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন অফিস থেকে পত্রিকা নিয়ে শহরে বেরিয়ে পড়েন দিল আফরোজ খুকি। ওই ভিডিওতে খুকির জীবনের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়। ভাইরাল ওই ভিডিও দেখে অনেকেরই মন বিমর্ষ হয়ে ওঠে। অনেকেই তার পুরানো সেই ভিডিওটি আবারও শেয়ার দিয়ে খুকির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। জীবন যুদ্ধে হার না মানা খুকি সংবাদপত্র বিক্রি করলেও কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে নিজের খরচ যুগিয়ে চলেছেন। খুকি যখন কিশোরী। তখন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। মাস না ঘুরতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার ও স্বজনরাও তাকে বাড়ি ছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তির কারণে বাবার বাড়িতে তার স্থান হয়নি। এরপর থেকেই অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন নারী পত্রিকা বিক্রেতা খুকি। পরে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে একাই থাকেন।