বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেন এসব জলদস্যু। হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া এসব জলদস্যুর বিরুদ্ধে চলমান অন্য মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। টিকতে না পেরে তারা বেছে নিতে শুরু করে আত্নসমর্পণের পথ।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে র্যাবের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে বাঁশখালী, মহেশখালী, চকরিয়া ও কুতুবদিয়ার ১১টি বাহিনীর ৩৪ জনদস্যু।
আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা হলেন– মহেশখালীর বাইশ্যা বাহিনী ও ফুতুক বাহিনীর মো. আব্দুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত (৫২), মো. আহামদ উল্লাহ (৪২), মো. আব্দুল গফুর ওরফে গফুর (৪৭), মো. দিদারুল ইসলাম ওরফে পুতিক্যা (৩২), মো. জসিম উদ্দিন (২৬), মো. মিজানুর রহমান (২৩), মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাইশ্যা (২৯), মো. বেলাল মিয়া (৩০), মো. আব্দুল হাকিম ওরফে বাক্কু (৩৫), মো. রশিদ মিয়া (৩৬)।
কুতুবদিয়ার খলিল বাহিনীর সদস্য, আব্দুর রহিম (৬৪), মো. মাহমুদ আলী ওরফে ভেট্টা, মো. ওবায়দুল্লাহ (৩৬), মো. ইসমাইল (২৪), সাহাবুদ্দিন ওরফে টুন্নু (৩২)।
এবং বাঁশখালীর রমিজ বাহিনীর মো. ইউনুস (৫৬), মো. তৌহিদ ইসলাম (৩৪), মো. ফেরদৌস (৫২), মো. রেজাউল করিম (৪০)।
এ ছাড়া পেকুয়ার বাদশা বাহিনীর মো. নিজাম উদ্দিন ভাণ্ডারী, মো. ইউনুস (৫১), মো. কামাল উদ্দিন (৪৭), মো. আব্দু শুক্কুর (২৮), মো. ইউনুচ (৪২), জিয়া বাহিনী ও নাছির বাহিনীর সাহাদাত হোসেন (দোয়েল) (৪১), মো. পারভেজ (৩৩), মো. নাছির (৫১), আমির হোসেন (৪৮), মো. সাকের (৪০)।
এ ছাড়া আত্মসমর্পণ করেছেন চকরিয়ার কালাবদা বাহিনীর মো. সেলিম বাদশা (৩৪), মো. আব্দুল গফুর ওরফে গফুর, মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৩১), মো. মামুন মিয়া (২৭) ও মো. মন্জুর আলম (৪২)।
আব্দুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত বলেন, আমি ভালো মানুষের ছেলে। কিছু ভুল বুঝে আর কিছু খারাপ মানুষের প্রলোভনে অন্ধকার পথে গেছি। প্রশাসনের ভয়ে রোডে, বাজারে যেতে পারি না। এক সময় সব ভুল বুঝতে পেরে ভালো হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকি। র্যাব সেই সুযোগটা দিয়েছে। এরপরই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারবো। আর খারাপ পথে যাবার (যেতে) চাই না।
তিনি আরো বলেন, এখনও যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তারা দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। এ সুযোগ আর পাবেন না। এই সুযোগ কাজে লাগান। আপনারা সুযোগ কাজে লাগিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় এ জলদস্যু নেতা তার কৃতকর্মের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান।
অনুষ্ঠানে জলদস্যুদের হামলায় আহত ভুক্তভোগী নেছার মাঝি বলেন, জলদস্যুরা আমার ফিশিং ট্রলারে আক্রমণ করে। তাদের গুলিতে আমার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ডান পাশের গালে এখনো গুলি রয়ে গেছে। যা এখনো বহন করছি। এই এলাকার জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের কারণে হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। আজ খুব খুশি হয়েছি ৩৪ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণ দেখে। অবশেষে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
র্যাব-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ৯০টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৫৬ রাউন্ড গুলি নিয়ে আত্মসমর্পণ করে জলদস্যুরা।