ভূমিদস্যুদের ফাঁদে শেষ সম্বলটুকু হারানো এক মায়ের আকুতি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় চার দশক আগে স্বামীকে হারান মেহেরুন্নেছা। এরপর ৭ ছেলে-মেয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন সংগ্রামে নামেন শতবর্ষী এই নারী। সম্বল শুধু স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য জমি। কিন্তু বিধবার এই শেষ সম্বলটুকুতেও পড়ে ভূমিদস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি। তাই ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে সেই জায়গায় ভাগ বসায় ভূমিদস্যুরা। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন নিজের কষ্টগুলো। স্বামীর রেখে যাওযা সম্বলটুকু ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান এই নারী।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন ভূঁইয়া মারা যান। তারপর তিন ছেলে ও চার মেয়ের দায়িত্ব চাপে আমার কাধে। শুরু হয় নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। সম্বল শুধু স্বামীর রেখে যাওয়া ৩৯ শতাংশ জমি। নরসিংদী জেলার শালিধা গ্রামের এই চমিতে চাষাবাদ করে যা আয় হতো তা দিয়েই এই সাত ছেলে-মেয়েকে মানুষ করি। তিনি আরো বলেন, সব কিছু ভালই চলছিল। ২০১০ সালে স্থানীয় ভূমিদস্যূ হোসেন আলী দলবল নিয়ে জোরপূর্বক আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সেই জমির ১৬ শতাংশ নিজের দাবি করে দখল করে নেয়। তারা জমির ভূয়া দলিল করে নিজের বলে দাবি করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারা আমার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। তবে এই জমি ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে তারা ত্রিশ লক্ষ টাকা দাবি করে। অন্যথায় এই জমি তারা ফেরত দেবে না বলেও জানায়। এ বিষয়ে যদি প্রশাসনের কোন আশ্রয় নেই তাহলে আমাদের পরিনতি ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেয়। এছাড়া আমার ও আমার পবিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়।
মেহেরুন্নেছা জানান, ‘আমার স্বামীর সম্পত্তি দখলে নিতে আমি নরসিংদী সদর এসিল্যান্ড কোর্টে মামলা করলেও সেই রায় আমাদের পক্ষে আসে। পরবর্তীতে ভূমিদস্যুরা এ ডি এম কোর্টে আপিল করলে সেই রায়ও আমাদের পক্ষেই আসে। তবুও ভূমিদস্যূ হোসেন আলী হাত থেকে আমার স্বামীর সম্পত্তি দখল মুক্ত করতে পরিনি। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার এখন অসহায়। চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়ে আছে আমার পুরো পরিবার। এই প্রভাবশালী ভূমিদস্যূদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আমার নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রসাশনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাই নি। তাই এখন একমাত্র ভরসা প্রধানমন্ত্রী। তিনিই এখন পারেন আমার স্বামীর শেষ সম্বলটুকু উদ্ধারে সহায়তা করতে।’ এভাবেই জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল মেহেরুন্নেছা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন নিজের কষ্টগুলো।