প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদকসন্ত্রাস ও চাদাবাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে নারায়ণগঞ্জে খুন হওয়া আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাকা-ের মামলা নিয়ে ব্যবসা করছেন মামলার বাদি ও তার বড়ভাই বিএনপি নেতা অ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকার। আলোচিত এ হত্যাকা-ের দাখিলকৃত চার্জশিটের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৬ বছর যাবত টানা নারাজি দিয়ে অবশেষে নারাজি পিটিশনের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। নিহতের পরিবারের অভিযোগ মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এ মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের মূল উদ্দেশ্য ছিল- মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে বাঁচিয়ে দেওয়া। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৈমুরের পক্ষে গিয়াসউদ্দিন সর্বাত্মক কাজ করবেন এমন শর্ত সাপেক্ষেই তৈমুর নারজি পিটিশন প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়া অন্তরালে রয়েছে কোটি টাকার নির্বাচনে অনুদান দেওয়ার কানাঘুষা। অথচ হত্যাকা-ের পর থেকেই তৈমুর ও তার পরিবার অভিযোগ করে আসছিল-গিয়াসউদ্দিন সাব্বির আলম হত্যাকা-ের মূল নায়ক। মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে রাজনৈতিকভাবে গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে চরম বিরোধীতায় থাকা তৈমুর আলম খন্দকারের এগুপ্ত সমোঝোতার খবর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিহত সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার আন্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে অপারেশন ক্লিন হার্ট চলাকালে একটি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে সাব্বির আলম নিজের জানাজায় সকলকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্য দেওয়া কয়েকদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির হত্যাকা-ের তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালিন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান, তার ভাই জিকু খান ওমামুন খান, শাহনি খান, রায়হানসহ ১৭জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জনকে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল তৈমুর আলম খন্দকার যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ও ২০০৮ সালের মে মাসে জামিনে মুক্তি পেলেও নানা অজুহাতে নারাজি প্রদানে বিরত ছিলেন। বরং তিনি বার বার মামলাটি বিলম্ব করেছেন। এসব ব্যপারে সাব্বির হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত নারাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কারণ, তৈমুর চাচ্ছেন দ্রুত মামলাটির নিষ্পত্তি করতে। নারাজি প্রত্যাহারের পর আদালত অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আসলে গিয়াসউদ্দিন নিজেও আমার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। নির্বাচনের আগে আমর পক্ষে তার সর্বাত্মক পরিশ্রম করার কথা থাকলেও তিনি করেন নেই। বরং আমার বিরুদ্ধে নেপথ্যে কূটকৌশল করেছেন। আমি আশা করি দ্রুত সাব্বির হত্যা মামলার বিচারিক কাজ শেষ হবে।’