বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
যানজটমুক্ত ঢাকা গড়া এখন সময়ের দাবি  
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৩ পিএম আপডেট: ১২.১১.২০২০ ২:১৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

সারা বিশ্বের রাজধানী শহরের সঙ্গে তুলনা করলে ঢাকার যানজট সবচেয়ে ভয়াবহ। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে হয়। গন্তব্যের নাগাল যেন যাত্রীরা আর খুঁজে পান না, এমন-ই অসহনীয় যানজট রাজধানীর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। দুর্বিসহ এই যানজট নিরসনের উপায় বাতলাতে  কত সভা-সেমিনার, গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের নিবন্ধ-প্রবন্ধ এবং যানজটের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন সবই অরণ্যে রোদনের মত নিষ্ফলা হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও যেন রাজধানীবাসীকে যানজট অক্টোপাসের মত বেধে ফেলেছে। সমাধানের সূত্র কোন কাজেই আসছে না। তাই প্রশ্ন উঠছে আর কতদিন মানুষকে এই ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হবে?

তবে যানজট নিরসনের দায়িত্ব যাদের তাদের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সমস্যা সমাধানে যে একেবারেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমনটি বলা না গেলেও গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের সদিচ্ছার অভাব অনেকটাই স্পষ্ট বলে সাধারণে অভিযোগ রয়েছে। কিছু উদ্যোগ-পদক্ষেপ নগরবাসী প্রত্যক্ষ করে সুফলের প্রত্যাশা করলেও সেটি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই উদ্যোগে যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর চরম গাফলতিতে ভরা বলেই তা সার্থকতা পায়নি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতায় অসহনীয় যানজট লেগেই থাকত। এজন্য কলকাতাবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কিন্তু তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় সেটি এখন দূরীভূত হয়েছে। যানজটের এই বিষফোড়া থেকে কলকাতাবাসী মুক্তি পেয়েছে।

এখন কলকাতায় যানজট নেই বললে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না।  ম্যাজিক্যালি কলকাতার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরেছে। কলকাতা, যানজট থেকে মুক্তি পেয়েছে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে। তাহলে ঢাকায় কেন সারাক্ষণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে? কেন গরমে ঘামে যাত্রীদের বাসের মধ্যে পচতে হবে? এক জেলা থেকে আর এক জেলায় যেতে যে সময় লাগে, ঢাকার একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যেতে তার চেয়েও কখনো কখনো বেশি সময় লাগে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এতদিন রাজধানীর যানজট এবং বিশৃঙ্খলা গণপরিবহণের বিষয়টি সমাধানে কি করলেন? বিষয়টি তারা আমলেই নেননি বলাটি হয়তো ঠিক হবে না। তবে ধরে নেওয়া যায়, যানজট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছেন, অথবা এটিকে ইচ্ছে করে এমন করে রেখেছে। তাহলে কি গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতার কারণে সরকারের দায়িত্বশীলরা যানজটমুক্ত রাজধানী উপহার দিতে পারছেন না? সবাই হয়তো, যদি, কিন্তু, অথবার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যানজটের কারণে রাজধানীতে প্রতিদিন মানুষের যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, তা বিস্ময়কর। বিশ্বের আর কোনো রাজধানীতে এত বিপুল  পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় কি-না সন্দেহ।  এই কর্মঘণ্টার অর্থমূল্যে বিচার করলে কত অর্থ নষ্ট হচ্ছে তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন? এ নিয়ে অনেক গবেষক গবেষণা করে প্রতিদিন কত টাকা ক্ষতি হচ্ছে তার হিসাব বহুবার বহু গবেষক দিয়েছেন। আমরা আর এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না। এক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া যানজট মুক্ত ঢাকা। অবশ্য অনেকেই বলতে পারেন, মেট্রোরেল চালু হলে এর অবসান ঘটবে।

এ কথায় সত্য আছে অস্বীকার করা যাবে না। আবার রাজধানীতে পাতাল রেল তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাতাল রেল হলে তো রাজধানীবাসীর চলাচলে আরো সহজ হবে। কিন্তু এসব তো অনেক দূরের কথা।  প্রশ্ন থাকলেও আমরা বলতে পারি বর্তমান অবস্থায়ও যানজট মুক্ত ঢাকা উপহার দেওয়ার সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই আছে। ব্যাপারে আমরা বলতে চাই যে, রাজধানীর গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা-যানজট দূর করার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস যা বলেছেন, তার বাস্তবায়ন করা গেলে অবশ্যই আমরা যানজটমুক্ত ঢাকা পেতে পারি। মেয়রের কথায় যেমন যুক্তি আছে, তেমনি রয়েছে সমসাময়িক সমস্যার দিক নির্দেশনা।  তাপস বলেছেন, ‘নগরবাসীর জন্য শৃঙ্খলা ও যানজটমুক্ত সড়ক উপহার দিতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি কাজ করছে। কমিটির কাজের অগ্রগতিও অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা মালিক, শ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২৯১টি রুটকে কমিয়ে ৪২টি রুটে আনার প্রস্তাব করেছি। যেখানে ঢাকায় চলাচলরত সাড়ে ৪ হাজার গাড়ির ২৫০০ মালিককে ২২টি কোম্পানির অধীনে আনা হবে। এটা সম্পন্ন করতে পারলে যানজট অনেকটা কমে যাবে। পাশাপাশি ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর যেমন গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা গাড়িগুলোর জন্য শহরের বাইরে করা হবে নির্ধারিত টার্মিনাল। যেখানে যাত্রী নামানোর পর আবার নিজ শহরে সেগুলো ফিরে যাবে। এতে যানজট কমবে, আবার শহরের বাড়তি চাপও কমবে।’

আমরা মনে করি এই পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে যানজট মুক্ত রাজধানী। রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে অলীক বা অবাস্তব মনে হবে না যানজট মুক্ত নগর পেতে। এমনিতেই রাজধানীর গণপরিবহনে কোনো শৃঙ্খলার লেশমাত্র নেই, বাস মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক গাড়ি চালান, তার ওপরে রাজধানীর পাশের জেলাগুলোর গাড়ি রাজধানীতে ঢুকে পড়ে পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। রাজধানীতে পার্শ্ববর্তী জেলার বাস ঢোকার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে, তা খুবই সময়োপযোগী পদক্ষেপ। নগরীতে প্রতিদিন লাখ লাখ বাস চলাচল করে। রাজধানীর এই লাখ লাখ বাস যাত্রী পরিবহন শেষে কোথায় যায় বা কোথায় রাখা হয়, এটা হয়তো কেউ কেউ জানেন- রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় গাড়িগুলো রাখা হয়। রাজধানীতে পর্যাপ্ত বাসটার্মিনাল না থাকায় এ দশা। মেয়র তাপস বলেছেন, রাজধানীতে একাধিক নতুন টার্মিনাল বানানো হবে। এই উদ্যোগও সময়োপযোগী। টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে মেয়র তাপস বলেছেন, ‘ঢাকার দুই সিটিতে তিনটি টার্মিনাল আছে যা পর্যাপ্ত না, এতে অধিকাংশ গাড়িই রাস্তার ওপর অবস্থান করতে বাধ্য হয়। আমরা ঢাকায় ১০টি টার্মিনালের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করেছি।

যেগুলো থেকে কয়টি টার্মিনাল হবে তার চূড়ান্ত প্রস্তাব আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে। জানুয়ারির পরবর্তী সভায় এটা নির্ধারণ হবে। তবে আমাদের কমিটির করা সব প্রস্তাব মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে করা হবে।’ পরিশেষে বলতে চাই, রাজধানীতে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরানোর যে উদ্যোগ তা শতভাগ সফল হোক। যানজট মুক্ত রাজধানী গড়তে পারলে আমাদের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই অর্থনীতির প্রভাবটি একদমই হেলাফেলার নয় তা, সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে ভেবে দেখতে হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]