বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নতুন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট আরামবাগ-মতিঝিলে: ওঠে এসেছে নতুন কাউন্সিলরের নাম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

আরিফুর রহমান
ক্লাব ও ক্যাসিনোপাড়া খ্যাত রাজধানীর আরামবাগ-মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা সম্রাট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমলেও গজিয়ে উঠছে নতুন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এবার সেই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে নাম ওঠে এসেছে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলে নির্বাচিত হওয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের নাম। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপর্কমের অভিযোগ জমা পড়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন এসব অপকর্ম কে বা কারা করছে তিনি জানেন না।  
মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ডটি দীর্ঘদিন দাপিয়ে বেড়াতেন সাবেক যুবলীগ নেতা ও ক্যাসিনোকা-ের হোতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সহযোগী, সাবেক কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদ। এক বছর আগে হঠাৎ করে ক্যাসিনোকা- ও যুবলীগ নেতাদের নানা অপকর্ম সামনে চলে আসা এবং অপকর্মে জড়িত যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গ্রেফতার হয় সম্রাট ও তার সহযোগীরা। এসময় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন মমিনুল হক সাঈদও। দীর্ঘদিন সিটি করপোশেনের কাজে অনুপস্থিত থাকায় হারাতে হয় তার কাউন্সিলর পদটি। তার শূন্য ওয়ার্ডে পনঃনির্বাচন দিলে সেখানে জয়ী হন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোরহস্ত বলে খ্যাত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক। কিন্তু বছর গড়াতে না গড়াতেই সেই ‘ক্লিন ইমেজ’ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও উঠতে শুরু করেছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। শুধু তাই নয়, দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ধান্দাবাজ, চাঁদাবাজ, বহিরাগত লোকজনকে দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দখলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন দলের অনেকে।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেছেন, এখানে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চলে গুরু-শিষ্য পরম্পরায়। বিএনপি-আওয়ামী লীগ যেই ক্ষমতায় থাকুক, চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট একই থাকে। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে কেন্দ্র করেই এই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। ফলে চাঁদাবাজি ও দলবাজি এখানে একাকার। চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী যে দলেরই হোন তিনি সব সময় কাউন্সিলরের লোক হিসেবে গুরুত্ব পান। মোজাম্মেল হকও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন। মমিনুল হক সাঈদ কাউন্সিলর পদ হারানোর পর এলাকার ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় চাঁদাবাজি থেকে তারা রক্ষা পাবেন। কিন্তু চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টে রাতারাতি ভিড়ে গেছেন নতুন কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের বলয়ে। মোজাম্মেল হকও এসব চাঁদাবাজদের বেশ কদর করেন।
গত অক্টোবরেই চাঁদাবাজির মামলায় মোজাম্মেল হকের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আরামবাগ কালভার্ট রোড এলাকার ব্যবসায়ী সালাম খানের করা মামলায় ২০ অক্টোবর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এবার মোজাম্মেল হক সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগের বরাত দিয়ে দুদক সূত্র জানায়, কাউন্সিলর তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে নিয়মিত ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। সরকারি-বেসরকারি জায়গা দখল করে দোকান বসিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি-বাট্টা ও ভাড়া দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তার লোকজন। এমনকি কাউন্সিলরের লোকজনই এলাকায় ময়লা বাণিজ্য, নিরাপত্তা বাণিজ্য, পানি ও বিদ্যুতের মতো সরকারি সম্পদ চুরি করে বিক্রি, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার প্রদানসহ নানা অপকর্মের রাজত্ব কায়েম করেছে। চক্রটি এলাকায় থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করছে চক্রটি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ড এলাকার চা, ফল, শাকসবজি, কাপড়ের দোকান, ঝুপড়ি হোটেলসহ অন্তত ৫ হাজারের ওপরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিল, বর্জ্য বিল, মেনটেইনেন্স বিলসহ সব মিলিয়ে গড়ে অন্তত আড়াইশ টাকা হারে উত্তোলন করে কাউন্সিলরের লোকজন। ওপেন সিক্রেট এ চাঁদাবাজি নিয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। তবে এ ব্যাপরে কথা বলেছেন কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক। তিনি তার নামে চলা চাঁদাবাজির অভিযোগকে একেবারে অস্বীকার করেছেন। ভোরের পাতাকে বলেছেন, ‘এসব অপকর্ম কে বা কারা করেছে আমি জানি না। আমার নামে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি দীর্ঘ ৪২ বছর এলাকায় রাজনীতি করছি। আমার এলাকার  ভোটার সংখ্যা ২৬ হাজার। কখনো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিইনি।
এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টির তদন্ত হচ্ছে’।
এলাকায় নব্যদের দাপটে কোনঠাসা ত্যাগীরা :এদিকে নব্যদের দাপটে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন ত্যাগী ও প্রবীণ নেতারা। রাজনীতির সকল স্তরেই চলেছে নব্যদের প্রভাব-প্রতিপত্তি। ফলে দলের গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতার সঙ্গে। তারা নাম না প্রকাশের শর্তে ভোরের পাতাকে জানান, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় ফকিরাপুল-আরামবাগের বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে নানা কৌশলে ওয়ার্ড কমিটিতে ঢুকে পড়ছে। তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সুবিধাবাদী কিছু নেতার আশপাশে বিচরণ করছে।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, এসব নব্য আওয়ামী প্রেমী গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনায়ন পাওয়া প্রার্থীর পাশে থেকে নির্বাচনী খরচ বহনসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে কাছের মানুষ বনে গেছেন। নির্বাচনের আগেও যারা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধশিবিরে ছিল আজ তারা কৌশলে কাউন্সিলরের কাছের লোক হয়ে এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। এ নব্যদের ষড়যন্ত্রের কারণে ত্যাগী ও আওয়ামী লীগের আদশির্ক নেতা-কর্মীরা এখন অনেকটাই নির্বাসনে। এলাকায় অভিযোগ আছে মো. মোজাম্মেল হক তার পছন্দের নব্য নেতাকর্মীদের নিজের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে রাখেন। যাতে তারা এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে পারে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, ফকিরাপুল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মজিবুল হক খোকন ভিন্নমতের লোক হলেও মোজাম্মেল হক কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এ জনপ্রতিনিধির কাছের লোক বনে যান। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে জানান দেন। মজিবুল হক খোকন এর আগে অন্য রাজনৈতিক দলের লোক ছিলেন এবং সাবেক কাউন্সিলর ক্যাসিনো সাঈদের একান্ত সহযোগী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া গিয়াস উদ্দিন আল-মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার আপন ভাই লিটনের বাসা থেকে। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]