বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মজবুদ হচ্ছে দুদকের জাল
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিপরায়ন আমলা, নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর থেকে স্বরূপে ফিরেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান কতটা সফলতার মুখ দেখবে তা নিয়ে সংশয় প্রথম থেকেই ছিল। দুদকের প্রতি আস্থার দোলাচল ছিল বরাবরই। কারণ গত কয়েক বছরে দুদকের জালে ধরা পড়তে পড়তেই ফসকে গেছেন অনেক বাঘা বাঘা মন্ত্রী-এমপি-আমলা। তবে তৃতীয় দফায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দুদককে নতুন শক্তি যুগিয়েছে। বিশেষ করে নিজ দল ও অঙ্গ সংগঠনের দুর্নীতিপরায়ন নেতাকর্মীদের দিয়েই যখন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তখন আস্থার জায়গা খুঁজে পেয়েছে সাধারণ মানুষ। গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা মহানগর যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে দুদক। একের পর এক গ্রেফতার হতে থাকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা ছোট-বড় কুমির। আর সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসতে থাকে বিভিন্ন আমলা, মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও ক্ষমতার আশ্রয়ে-প্রশয়ে থাকা ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ তৈরির চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবেই গত বছরের অক্টোবরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ ব্যাংক চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে দুদক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে জব্দকৃত ব্যক্তিদের লেনদেনের তথ্য চায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছে বেকায়দায়। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, সেই সময় যাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়, তাদের মধ্যে সরকারদলীয় এমপি, রাজনীতিবিদ, আমলা, চাকরিজীবী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি আছেন। তিনি জানান এ অভিযান চলবে।
অভিযানের অংশ হিসাবেই ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রকে গত সোমবার বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে বিধি-১২ এর বিধান অনুসারে ১১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত জুন মাসে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামকে কুয়েতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার কমিশনের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এই মামলা করেন বলে সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করায় পাপুল-সেলিনার মেয়ে ওয়াফা ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।  এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন প্রধান পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পরপরই দুদকের অনুসন্ধানের জালে পড়েন সরকারের ৮জন সংসদ। তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ পায় সংস্থাটি। দুদক সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে প্রথমে নাম আসে ৫ জন সংসদ সদস্যের। এমনকি দুদকের কাছেও আসতে থাকে এদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য। তারা হলেন জাতীয় সংসদের হুইপ চট্টগ্রামের শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নারায়ণগঞ্জ-২ এর নজরুল ইসলাম বাবু, ভোলা-৩ এর নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। এ ছাড়াও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক।
দুদক জানিয়েছে, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন ক্ষমতাশালী এসব মন্ত্রী-এমপি। এসব সংসদ সদস্যদের নিজ নামেই নয়, তাদের স্ত্রী সন্তানদের নামেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ’র কাছ থেকে বিপুল সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সম্প্রতি নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা এবং সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমান সংসদের ১১জন সংসদ সদস্য এবং সাবেক ১০ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ তথা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর মধ্যেই দুদক জানিয়েছে এ তালিকায় যুক্ত হতে পারেন আরো ২০ সংসদ সদস্য। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।  কুয়েতে গ্রেফতার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিরুদ্ধে বুধবার অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়েরর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান দুদকের কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানে থাকা অন্যান্য এমপিদের বিষয়েও আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলমান অভিযানে কতটা সফল হবে দুদকÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কাজে থেমে নেই। আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী চেষ্টা করি যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে আইনের সম্মুখীন করা হবে। এই ব্যাপারে কোনো বিলম্ব হবে না। শিগগিরই তা করা হবে। তবে টাইম বলা যাবে না।’ ক্ষমতাসীণ দলের প্রভাব খাটিয়ে এসব হাই প্রোফাইল দুর্নীতিবাজ এমপি ছাড়া পেয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো দল-মত নেই, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে আমরা কাজ করি। আইন আমাদেরকে যেভাবেই নির্দেশ করে সেভাবেই আমরা কাজ করি।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলন প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন সাত বছর এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তি, বাতিল হবে সংসদ সদস্যপদ। এদিকে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পদক্ষেপ নিতে দুদকের যে ঘাটতি তা দূর করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে টিআইবি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দেখা যায় না। যদি এট করা হয়; তাহলে সেটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখানো হবে। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]