যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের থেকে শিক্ষা-দীক্ষা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটদান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর উত্তরার আই ই এস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন সিইসি।
সিইসি বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন নিজের গরজে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিষয়ে আমি সবসময় বলি, এটা দেখতে হবে গ্লোবালি, কাজ করতে হবে লোকালি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সংস্কৃতি ১৫০ বছরের। তাছাড়া সেখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ থেকে ভালো সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করি। আমার একটা কথা, তাদেরও আমাদের থেকে শিক্ষা-দীক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চার-পাঁচ দিনেও ভোট গণনা করতে পারে না। ইভিএমে আমরা ১০ মিনিটে ভোট গণনা করে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা দিয়ে দেই। এই জিনিস যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তাদের প্রায় ২৫০ বছরের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতায় সেটা এখনও পারেনি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে তাদের কেন্দ্রীয় কোনও নির্বাচন কমিশন নেই।
বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রও কেউ দখল করেনি। কেউ পাঁয়তারা করেনি। বিএনপির পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে যায়নি। আমি খোঁজ নিয়েছি। আমার প্রিজাইডিং অফিসার আমাকে জানিয়েছে বিএনপির পোলিং এজেন্ট কেউ তার কাছে রিপোর্ট করেনি। আর বিএনপির একজন সম্মানীয় ব্যক্তি আমাকে সকালে ফোন করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন কয়েকজন আসবেন আমার কাছে অভিযোগ জানাতে। আমি তার জন্য অফিসে গিয়ে বসেছিলাম। তারা আসেননি। পরে আমি আমার অফিসে বলে এসেছি কেউ যদি অভিযোগ নিয়ে আসে সেটা গ্রহণ করতে। আমি অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। অভিযোগ সত্য নয়।
ভোটার উপস্থিতি কম এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ইভিএমের সঙ্গে ভোটারদের পরিচিতি কম হতে পারে। আমি সঠিক জানি না, এটা বিশ্লেষণের বিষয়। তবে এটা সব ক্ষেত্রে সঠিক না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৮১ শতাংশ ভোট পড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটু কম হয়। আমার মনে হয়, ভোটাররা আসছেন না কেন এটা তারা ভালো বলতে পারবেন। আমাকে জিজ্ঞেস করবেন আমার ম্যানেজমেন্ট ঠিক আছে কিনা। ভোটাররা কেন্দ্রে তো যাবেন নিজের গরজে। আর এর আগে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার ফলে দেখা গেছে অনেকেই ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে যায়। এই কারণে ভোটার কম হয়। এটা বিবেচনা করে, আর ভোট দিতে তো বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না−তাই এবার আর সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়নি।
জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। গত ১৩ জুন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৮ আসন। এই উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ জন। এতে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান, বিএনপির এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন সরকার, গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ওমর ফারুক ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) মবিবুল্লাহ বাহার।
এদিকে সকালে বিএনপির প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেছেন, ভোট কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। এতে ভয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না। তবে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিব হাসান বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। বিএনপি প্রার্থী অহেতুক অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় ও বিএনপির প্রার্থী সেলিম রেজা। কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ আসন গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৩ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৬৮টি।