বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে আছেন বেশ কয়েকজন লুটেরা ব্যবসায়ী। এরা বিদেশে রাজার হালে অবস্থান করছেন। আত্মসাতের যে টাকা, সেই টাকা পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নেই। তাদেরকে দেশে আনার কোন ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না।
এ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। এদেরকে কে আনবে? এই নিয়ে যেন এক ধরনের দ্বন্দ্ব এবং সমন্বয়হীনতা। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে তারা বহাল তবিয়তে বিদেশে আছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বড় অবমাননা। আমাদের অর্থনীতির জন্য একটা বড় আঘাত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে রাজকীয়ভাবে যারা আছেন তাদের মধ্যে আলোচিত হলেন ৩ জন।
পিকে হালদার:
এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পিকে হালদার। পিকে হালদার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। তার বিলাসবহুল বাড়ি আছে, তার কিছু ব্যবসাও আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পিকে হালদার বলেছিলেন যে, তিনি দেশে আসতে চান এবং দেশে আসার জন্য তিনি নিরাপত্তা চেয়ে ছিলেন। এজন্য কানাডা থেকে দেশে আসার টিকিটও কেটেছিলেন। আর তার পক্ষে একজন আইনজীবী হাইকোর্টের দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে তিনি নিরাপদে দেশে ফিরতে চান। তখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল পিকে হালদার দেশে আসা মাত্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে এবং আইনি হেফাজতে নেয়া হবে।
পরে তিনি জানিয়েছেন, অসুস্থতার জন্য দেশে আসছেন না। কেন তিনি দেশে আসতে চেয়েছিলেন এবং কেন তিনি আসছেন না, সেটিও একটি কোটি টাকার প্রশ্ন। দুর্নীতি দমন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, পিকে হালদার ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি কীভাবে আত্মসাৎ করলেন এবং কীভাবে তিনি সবার চোঁখ ফাঁকি দিয়ে কানাডা চলে গেলেন। সেটি একটি বিষয় বটে।
আব্দুল আজিজ:
জাজ মাল্টিমিডিয়া করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। একের পর এক ছবি বানিয়ে ছিলেন এবং এ সমস্ত ছবি লাভ-ক্ষতি কি হয়েছে সে নিয়ে যখন মানুষ হিসেব-নিকেশ করছে, তখন জানা গেল যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে আব্দুল আজিজ। যখন তাকে তারা জন্য তোড়জোড় শুরু হল, তখন তিনি পালিয়ে গেলেন।
এখন তিনিও কানাডায় আছেন বলে জানা গেছে। আব্দুল আজিজকে ধরার কোন উদ্যোগ নেই। জাজা মাল্টিমিডিয়ারও কোন কার্যক্রমের কোন খবর শোনা যায় না। তবে আব্দুল আজিজ ঢাকার বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছেন যে, তিনি হলিউডের সিনেমা বানাচ্ছেন। জনগণের টাকা লুট করে হলিউডের সিনেমা বানানোর মন্ত্র কি?
মিঠু:
পুরো নাম মোতারেজুল ইসলাম মিঠু। তাকে স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া হিসেবে দেখা হয়। এখন পর্যন্ত যে হিসেব নিকেশ তাতে দেখা যাচ্ছে যে মিঠু স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। স্বাস্থ্য খাতের এই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে দিনের পর দিন রাজত্ব করেছিলেন। এখন মিঠু দেশে নেই। মিঠুকে দুর্নীতি দমন কমিশন তলব করেছিল, কিন্তু তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।
তার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কেবল স্বাস্থ্যখাতকে তিনি ফোকলা করেনি, এই মিঠু ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাত করেছেন এবং সেই টাকা পরিশোধ করেনি। মিঠু এখন দেশে আসবেন কি আসবেন না সেটি যেমন এক অমীমাংসিত প্রশ্ন, কিন্তু বিভিন্ন নামে মিঠু এখনও বহাল তবিয়তে তার ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন। স্বাস্থ্য খাতের যে কোন কাজ এখন মিঠু সিন্ডিকেটের দাপট রয়েছে।
এর মধ্যে মিঠু আরেকটি কাজ করেছেন, স্বাস্থ্যখাতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যারা। এরকম ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে তিনি কালো তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে এখন স্বাস্থ্যখাতে কোন টেন্ডার বা ব্যবসা হওয়া মানেই সেটি মিঠুর দখলে চলে যাওয়া। মাফিয়া ডনদের মতো কিংবা নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে দাউদ ইব্রাহিমের মত আমেরিকায় বসেই তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তাকেও আনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ রকম আরো কিছু ব্যবসায়ী আছে যারা ব্যাংকের টাকা লুট করে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। আইনজ্ঞরা মনে করেন যে, আমাদের এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন আইপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এই দুর্বৃত্তদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন না। হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটি একটি বাজে সংস্কৃতি তৈরি হবে। ব্যাংকের টাকা লুট করে এভাবে বিদেশে পাড়ি দিলে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হতে বাধ্য।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার