শহীদ নূর হোসেন: যার রক্তের সিড়ি বেয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় '৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে!
প্রকাশ: সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩৬ পিএম আপডেট: ০৯.১১.২০২০ ৭:৪০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আগামীকাল ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর,শহীদ নূর হোসেন দিবস। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের শেষ ইট টি খসে পড়ে যাঁর রক্তের বিনিময়ে সেই পুরাতন ঢাকার যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন আমাদের আন্দোলন - সংগ্রামের প্রেরণা!
১৯৯৩ সাল। আমি তখন সাপ্তাহিক সন্দীপ পত্রিকায় ষ্টাফ রিপোর্টার, সোহেল সানি ভাই নির্বাহী সম্পাদক এবং শাবান মাহমুদ ভাই প্রধান প্রতিবেদক। তখন বয়সে ছোট ও পেশায় অপেক্ষাকৃত জুনিয়র হলেও প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহে আমার উপরই মূল প্রতিবেদন( কভার ষ্টোরি) তৈরির গুরু দায়িত্ব টি অর্পণ করতেন সানি ভাই ও শাবান ভাই। আমাকে খুবই স্নেহ করতেন ছোট ভাইয়ের মতো, আস্থা রাখতেন আমার উপর।
সানি ভাই ও শাবান ভাই কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে মূল প্রতিবেদন তৈরির অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব নিয়ে ১৯৯৩ সালের ৫ নভেম্বর নূর হোসেন এর পৈত্রিক বাড়ি পুরাতন ঢাকার বনগ্রাম যাই। সাথে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, ছাত্রলীগ নেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আবুল ফজল রাজু ভাই ও একটি পুরাতন ক্যামেরা। নূর হোসেনের বাসায় পৌঁছে তার বাবা মরহুম মজিবুর রহমান, মা মরিয়ম বিবি,বড় ভাই আলী হোসেন ( তদানিন্তন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ড্রাইভার), ছোট বোন, কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশীর সাক্ষাতকার নেই,ছবি তুলি তারপর সেই কঠিন কাজ- জুরাইন কবরস্থানে শহীদ নূর হোসেনের কবর চিন্হিত করা- মনে পড়ে আমি ও রাজু ভাই কমপক্ষে ১৫/২০ জন স্থানীয় লোক কে নূর হোসেনের কবর দেখিয়ে দিতে বলি, সবাই বলে' এইডা'। এ',ভাবে ২৭ টি কবর কে চিন্হিত করতে হয় শহীদ নূর হোসেনের কবর হিসেবে, ক্যামেরা রাজু ভাইয়ের হাতে, একের পর এক কবরের ছবি তোলায় ব্যস্ত রাজু ভাই। অবশেষে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে একটি কবর কে শহীদ নূর হোসেনের কবর হিসেবে চিন্হিত করতে সক্ষম হই- যার পক্ষে ব্যাপক তথ্য - উপাত্ত সংগ্রহ করেন স্হানীয় এক যুবলীগ নেতা। শহীদ হওয়ার ৩ বছরের মাথায় নূর হোসেনের কবর সাধারণ কবরের সাথে মিশে যায়, হয়ে যায় চিন্হ বিহীন! মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে আমার ও রাজু ভাইয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি আমি তখন সাংবাদিকতা পেশায়ও যুক্ত।
পরদিন সাপ্তাহিক সন্দীপ অফিসে এসে সানি ভাই ও শাবান মাহমুদ ভাই ব্যাপক তথ্য- উপাত্ত ও ছবি সম্বলিত রিপোর্ট টি হস্তান্তর করি- যা " শহীদ নূর হোসেন দিবস " এ ছাপা হয় কভার ষ্টোরি হিসেবে।মনে পড়ে শাবান ভাই খুবই খুশি হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন আমাকে।
শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা শহীদ নূর হোসেন! তোমার রক্ত বৃথা যায়নি! '৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে গনতন্ত্রের ভিত আবারও তৈরি হয় তোমার পবিত্র রক্তের বিনিময়ে। '৭৫ পরবর্তী প্রজন্মের বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান তুমি।
লেখক পরিচিতি: সাবেক সদস্য, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ কমিটি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা,সাংবাদিক, কলাম লেখক ও গবেষক।