যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এবার চলছে নতুন জল্পনা-কল্পনা । কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তির নাম নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। কাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করতে চান সে বিষয়ে বাইডেন অবশ্য তেমন কোনো ইঙ্গিত দেননি। জানা গেছে, জো বাইডেন নিজে একজন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ। সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
মার্কিন রাজনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- মার্কিন গণমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধে উঠে আসছে অনেক সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেলাওয়ারের সিনেটর ক্রিস কুনস। ডেলাওয়ারেই এক সময় সিনেটর ছিলেন বাইডেন।
ক্রিস কুনস তার উত্তরসূরি। জুইশ ইনসাইডার, ফরেইন অ্যাফেয়ার্স, ওয়াশিংটন পোস্টসহ একাধিক পত্রপত্রিকায় ক্রিস কুনসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কলাম প্রকাশিত হয়েছে। কুনসের সমর্থকরা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সপক্ষে যুক্তি দিয়ে একটি বিশেষ নথিও প্রস্তুত করেছে। কুনস নিজেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে উঠে এসেছে কানেকটিকাটের সিনেটর ক্রিস মারফির নামও। সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্যানেলগুলোয় প্রায় তার মুখ দেখা যায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়ে বেশ লেখালেখিও করেন তিনি। তার সহকারী বলেন, মারফি বহুদিন ধরে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলে আসছেন। তিনি এ বিষয়ে বেশ আগ্রহী।
তার কর্মকাণ্ড বাইডেন শিবিরের নজর এড়ায়নি। ডেমোক্র্যাটের প্রগতিশীলদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। সম্প্রতি বছরগুলোয় নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিও বাড়িয়েছেন তিনি।
সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটিতে ইয়েমেনের মতো দেশগুলোয় চলমান সংঘাত নিয়ে কাজ করার প্রতি জোর দিয়েছেন। দলের প্রগতিশীল অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেও ক্রিস মারফি জায়গা পেতে পারেন।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও পুনরায় পদটি গ্রহণের চেষ্টায় আছেন বলে জানা গেছে।
গত মাসের শেষের দিকে এক প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে পলিটিকো জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যাতে পান সেজন্য হিলারি নিজেরও পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
বাইডেনের ঘনিষ্ঠ চক্রের কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা সুজান রাইস। তিনি বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন বলেও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।
সুজান রাইস প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ছিলেন। পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েছিলেন। পররাষ্ট্র, কূটনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে অভিজ্ঞ এ কৃষ্ণাঙ্গ নারীও হয়ে যেতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এছাড়া সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের নামও তালিকায় রয়েছে। বাইডেনের নির্বাচনী শিবিরের অন্যতম জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তিনি।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ও অর্থনৈতিক মন্দা সামলাতে হবে- এমন চিন্তা থেকে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কাউকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে পারেন বাইডেন।
এমনটা হলে হিলারি ক্লিনটন ও রাইসের পদটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হিলারি আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে সিদ্ধহস্ত রাইস।
তার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং আফ্রিকায় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক, জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা- সব স্তরেই তার কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এছাড়া বাইডেনের সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্কও রয়েছে। হিলারি ছাড়াও রাইসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বাইডেনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও নির্বাচনী শিবিরের অন্যতম কর্মকর্তা।
তার বাবা ছিলেন একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। নিজে কাজ করেছেন সাংবাদিক ও আইনজীবী হিসেবে। বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামার প্রশাসনেও গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন।
সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির ডেমোক্র্যাট স্টাফ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।
বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আরও কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ওবামা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা।
তাদের হলেন- সামান্থা পাওয়ার। তিনি আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করেছেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও রয়েছেন টম ডনিলন। ওবামা প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বাইডেনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে তার।
সবশেষে রয়েছে ওয়েন্ডি শেরমানের নাম। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করার পেছনে তিনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
অন্য জনপ্রিয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- প্রবীণ ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা উইলিয়াম বার্নস। ওবামার আমলে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
বর্তমানে কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। বার্নসের মতো আরেকজন প্রার্থী হচ্ছেন নিকোলাস বার্নস।