সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
শিশুর খাদ্যনালি থেকে বের হলো স্পাইডারম্যান!
প্রকাশ: রোববার, ৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৫৭ পিএম আপডেট: ০৮.১১.২০২০ ৫:১৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

রমজান মাসের আট রোজা চলছে। ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত আম্বিয়া বেগম। খেলায় ব্যস্ত দুই ছেলে। হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে থাকে ছোট ছেলে ছয় মাস বয়সের আবু তালহা। তিন বছরের জোবায়ের খেলতে গিয়ে ছোটভাইকে প্লাস্টিকের খেলনা স্পাইডারম্যান খাইয়ে দিয়েছে।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক হাফিজুল ইসলাম ছেলেকে নিয়ে দৌড়ান জেলা সদরে। চার হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বার ঘুরে কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে পাড়ি জমান ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নয়টি হাসপাতাল ঘুরে চলে যায় চার মাস। মৃত প্রায় ছেলেকে নিয়ে অবশেষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে গেলে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে শিশুর একপাশের ফুসফুসের কাজ। জটিল অপারেশন শেষে হাসি ফোটে চিকিৎসকদের মুখে। শিশুর খাদ্যনালি থেকে বের করে আনা হয় খেলনা স্প্যাইডারম্যান। আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে আবু তালহা।
 
অপারেশনে চারজনের দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস বয়সে শিশুটি খেলনা স্প্যাইডারম্যান খেয়ে ফেলে। আমাদের কাছে আসে চার মাস পর। খেলনা খাদ্যনালিতে আটকে থাকায় খেতে পারছিল না শিশুটি। এক্স-রেতে দেখা যায় এর মধ্যেই শিশুর একপাশের ফুসফুস কাজ করছে না। অপারেশনের ধকল নেওয়ার মতো শিশুর শারীরিক পরিস্থিতি না থাকায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অবশেষে গলার মধ্যে টিউব দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় খেলনাটি বের করে আনা হয়। এখন ফুসফুসও কাজ করছে। শিশুটি মুখে খাবার খেতে পারছে। সুস্থ হওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে আবু তালহা।’ এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘শিশুদের খেলনা দেওয়ার সময় অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের ছোট প্লাস্টিক কিংবা রাবারের খেলনা, বোতলের ছিপি, পয়সা শিশুদের থেকে দূরে রাখতে হবে। নয়তো এসব খেলনা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।’

হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পলাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে শিশু আবু তালহাকে (১০ মাস) আমাদের হাসপাতালে ২০ অক্টোবর দুপুরে রেফার্ড করা হয়। তারা এর আগে আরও ১২টি হাসপাতালে ঘুরেছে শিশুটিকে নিয়ে। চার মাসের বেশি সময় খেলনা খাদ্যনালিতে আটকে থাকায় শিশুর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়েছিল। তার বাবা কৃষক হাফিজুল ইসলামের সামর্থ্য না থাকায় শিশুর অপারেশন, ওষুধ, থাকা, খাওয়া সবকিছু ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে।’ শিশুটির বাবা হাফিজুল ইসলাম বলেন, খেলতে গিয়ে ২ মে আমার বড় ছেলে শিশু তালহাকে প্লাস্টিকের খেলনা স্প্যাইডারম্যান খাইয়ে দেয়। এ ঘটনা জানার পর ফরিদপুর সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে যাই। কোনো সুরাহা না হওয়ায় ছেলেকে বাঁচাতে ঢাকায় আসি। প্রথমে ঢাকা শিশু হাসপাতালে যাই। ভর্তি করার পর চিকিৎসকরা বলেন, এখানে চিকিৎসা হবে না ঢাকা মেডিকেলে যেতে হবে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ১৪ দিন ভর্তি থাকার পর তারা মাতুয়াইল শিশু মাতৃ সদন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তারা আবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠান। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু বিভাগে পাঠান। সেখানে কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে যাই। 

ধীরে ধীরে আমার ছেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই খেতে পারত না। এরপর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করাই। সেখান থেকে আবার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আসি। ২৮ দিন ভর্তি থাকার পর তারা জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে পাঠান। তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে ১০ টাকায় টিকিট সংগ্রহ করি আর ১৫ টাকায় ভর্তি করি। ভর্তির পরের দিনই আমার ছেলের অপারেশন হয়। আগের হাসপাতালে ঘুরে আমাদের প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। অপারেশনের টাকার জোগান আমাদের ছিল না। পরিস্থিতি দেখে অপারেশন, থাকা, খাওয়াসহ পুরো চিকিৎসা বিনামূল্যে করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছেলে মুখে কিছুই খেতে পারছিল না। সবকিছু তরল করে খাওয়াতে হতো। আমাদের সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসকরা নিজেদের টাকায় ব্লেন্ডার কিনে দিয়েছে। ছেলে সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমরা আজ বাড়ি ফিরে যাব।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]