প্রকাশ: বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের সড়ক, মহাসড়কে ফিটেনসবিহীন গাড়ীর নৈরাজ্য চলছে, বিশেষ করে ঢাকার সড়কে। জনসংখ্যার বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার ২য় বৃহত্তম শহর, এবং পৃথিবীর ৭তম মেগাসিটি ঢাকা শহরের সড়কে তীব্র যানজট ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে এক নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে যানবাহনচালক এবং পথচারীদের নিয়মনীতি অমান্য হর-হামেসা দেখা যাচ্ছে । ”পুলিশ বিশেষ ট্রাফিক” এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বিশেষ অভিযান চালালেও সড়কে নৈরাজ্য একটুও কমছে না।
ফিটনেসবিহীন গণপরিবহনের রাজত্বে সড়কের চারপাশে বাতাসে প্রচন্ডভাবে কার্বনডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি ও অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে, ফলে সাধারণ জনগণের রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় শ্বাসকষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। এবং বাসা থেকে বের হয়ে অফিস, ও অনন্য কাজ করতে বের হওয়া মানুষের সাধারণ ভাবে চলাচলের সমস্যা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
রাজধানীর ব্যস্ত বাসস্ট্যান্ড এলাকা গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বাসচালকেরা যত্রতত্র যাত্রী নামাচ্ছেন-ওঠাচ্ছেন। একই পথের বিভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি হচ্ছে। বাসের পাদানিতেও অতিরিক্ত যাত্রী। আইন না মেনে উল্টো পথে গাড়ি চালানো থেমে নেই। পদচারী-সেতু ব্যবহার না করে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। মুঠোফোন ব্যবহার করছেন চালকেরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের মধ্যেও যাত্রী এবং গাড়ীর চালকদের ভিতর মাক্স ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না।
ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, বিমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিশেষ অভিযান নিয়মিত পরিচালনাকরা হচ্ছে। তারপরও গাড়ীর চালকরা সচেতনতা অবলম্বন করছে না। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ এক সাজেন্ট বলেন, যাত্রী ও চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা রাস্তায় থেকে রাতদিন প্ররিশ্রম করে যাচ্ছি। তবে জনগণের মধ্যেও আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে না উঠলে আমরা যতোই চেষ্টা করি না কেন কোন কাজে আসবে না। সুতারাং সাধারণ জনগণের মধ্যেও আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে উঠতে হবে।
গতকাল রাজধানীর গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সড়কের মাঝামাঝি চলে এসেছেন। একটি বাস এলে যাত্রীরা তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। বাসচালকেরা সড়কের মাঝখানেই বাস থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন, ওঠাচ্ছেন। পেছনে অন্য বাস, গাড়ি অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসকে দেখা যায় চলন্ত অবস্থাতেই যাত্রীদের নামাচ্ছে, আবার চলন্ত বাসেই যাত্রীরা লাফিয়ে উঠছেন। এর মধ্যে পেছনে এসে দাঁড়ায় এম এম লাভলী পরিবহনের একটি বাস। দুটি বাসের চালকের সহকারীরা ‘ফার্মগেট, ফার্মগেট’ বলে যাত্রী তুলছেন। এম এম লাভলী পরিবহনের চালক বিপজ্জনকভাবে লাব্বাইক পরিবহনের বাসটি ওভারটেক করেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হকার্সরা সড়কের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে এসেছে। এতে করে নিউমার্কেট এলাকার সড়কের যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। এবং বাস চালকরা নিউমার্কেটের নির্দিষ্ট বাস স্টপসে বাস না থামিয়ে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছেন। এবং দেখা যায় মৌমিতা পরিবহনের এক চালক রাস্তার পাশে বাস থামিয়ে বসে আছে , আর হেলপার সাভার, নবীনগর বলে চিৎকার করছে। আর পিছন থেকে অনন্য কোম্পানির বাস অনবরত হর্ণ বাজাচ্ছে তারপরও সাইট দিচ্ছে না মৌমিতা পরিবহন। এতে আরও অনেক যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বেস্ত রোডগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় প্রত্যেক জায়গায় একই অবস্থা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, সরকার সড়কপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় নানা উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু এই খাতে ব্যাপক এবং কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। "বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে পরিবহনের জন্য সরকারি বা রাষ্ট্রীয়ভাবে সড়কপথে সে ধরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিকভাবে এই পরিবহন ব্যবস্থাটা বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভর করে। যখনই বেসরকারি খাতের ওপর একটা সেক্টর পুরোপুরি নির্ভর করবে, তখন সেখানে পুরো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন ব্যাপার।"