প্রকাশ: বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
‘শুনশান নিরবতা, পাহাড়ের এই নিস্তব্ধতা বলে দেয় এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ। দু'পাশের পাহাড়, মূল সড়কে বড় করে লেখা সতর্কবার্তা ‘হাতির বিচরণ এলাকা’। এই পাহাড়ি সৌন্দর্যের সড়কে সতর্কবার্তার পরিবর্তে লেখা থাকার কথা ছিল ‘পাহাড়ী সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে আপনাকে স্বাগতম’। বলছি শেরপুরের পাহাড়ি পর্যটন এলাকা ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী সংযোগ সড়কের কথা, যেই সড়কে যাতায়াত মধুটিলা ইকোপার্ক, নাকুগাঁও স্থাল বন্দর ও গজনী অবকাশে।
এই সড়কে দু’পাশের পাহাড়ে প্রশান্তি অনুভব করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে অসংখ্য পর্যটক, অথচ অনেকে জানেই না এই সড়কের উত্তর পাশের পাহাড়টি হাতির আতংকে ঝুঁকিপূর্ণ। সন্ধ্যা হলেই লুকালয়ে অবাধে নেমে আসে হাতি; এই আতংকে তেমন বসতবাড়িও নেই পাহাড়ের আশেপাশে, কিছুটা দূরে গিয়ে দেখা মিলে কয়কজন স্থানীয় বাসিন্দার, কথা হয় তাদের সাথে। স্থানীয়দের দাবী; হাতির আতংক নিরসনের হাতি প্রতিরোধ করতে সরকারের আরও বেশী উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ, হাতির উপদ্রব কমাতে পারলে সড়কের দু'পাশের পাহাড়কে পর্যটনকেন্দ্র হিসবে গড়ে তোলা সম্ভব।
ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় লুকালয়ে নেমে আসে হাতি, বিশেষ করে ধান কাঠাল পাকার সময় লুকালয়ে আক্রমণে নামে হাতি; কেড়ে নেয় মানুষের প্রাণ, নষ্ট করে কৃষকের ক্ষেতের ফসল, ভেঙে ফেলে বসতবাড়ি। বন বিভাগের শেরপুর জেলা বন অফিসের তথ্যানুসারে এখন পর্যন্ত হাতির তান্ডবে মৃত্যু হয়েছে ৫২জনের আহত হয়ে ৫শতাধিকের বেশী মানুষ। হাতির আক্রমনে নিহত হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে সরকার থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে নগদ ১লক্ষ টাকা এবং আহত হওয়া ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকা ।
হাতির এই আক্রমণ ঠেকাতে ১০বছর আগেও ঢাকঢোল বাজিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে হাতি তারাতেন এলাকাবাসী। এরপর হাতির উপদ্রব প্রতিরোধ করতে; শ্রীলঙ্কা নেপাল ভারতসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী দেশগুলোর মতো শেরপুরে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে ১৩ কিলোমিটার জুড়ে সৌরবিদ্যুৎ এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিকস্পর্শ ঘের নির্মাণ করে বন বিভাগ। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের দক্ষ জনবল না থাকায় অযত্ন অবহেলায় প্রায়ই অকেজোর পথে হাতি তারানোর সৌরবিদ্যুত এর বৈদ্যুতিকস্পর্শ ঘের।
ঝিনাইগাতী উপজেলার নওকুচি উত্তরপাড়া আদিবাসী দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আকাব্বর আলী বলেন, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে সরকারিভাবে যা পেয়েছিলাম সবকিছুই নষ্ট হয়ে পরে আছে, আমাদের এলাকায় বিদ্যুতিক বেড়া নেই। ধান পাক ধরেছে আমরা প্রতি রাতে আতংকে থাকি এই বুঁঝি হাতি নেমে এসেছে, গত ২ নভেম্বর সোমবার রাতে ১৪হাতির একটি দল এসেছিল, আমরা খুব কষ্ট তারিয়েছি, হাতি আসলে মাইকে ডাকাডাকি করে গ্রামবাসীকে সচেতন করি, আমরা সারা রাত ঘুমাই না, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় মশাল জ্বালিয়ে হৈচৈ করে হাতি তারাতে হচ্ছে।
এই বিষয় নিয়ে কথা হয়, ময়মনসিংহ বন বিভাগ এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ. কে. এম রুহুল আমিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অকেজো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিকস্পর্শ ঘের ঠিক করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। এছাড়াও হাতি তারানোর সেই ঘের ১৩ কিলোমিটারের সাথে নতুন করে আরও ৮কিলোমিটার নির্মাণ করা হবে শীঘ্রই।