নিখোঁজের পর উদ্ধার সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার তাকে অপরহরণের পর নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন। চারজন চোখে বেঁধে, কানে হেডফোন গুজে দিয়ে বেল্ট দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে জানিয়ে সরওয়ার বলেন, ‘তারা বারবার বলছিলেন, একে এমনভাবে মারতে হবে যাতে বাকি সাংবাদিকদের একটা শিক্ষা দেওয়া যায়।’ সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গণমাধ্যমকে এসব বলেন গোলাম সরওয়ার। সরওয়ারের বুক থেকে নিচে বেশ কিছু মারধরের চিহ্ন রয়েছে।
সরওয়ার বলেন, ‘মোট চারটা কণ্ঠস্বর শুনেছি। চারজনের মধ্যে তিনজনকে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে শোনা গেলেও একজন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন।’ যে ঘরে সরওয়ারকে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে ট্রেন চলার শব্দ শুনতেন বলেও জানিয়েছেন সরওয়ার।
গোলাম সরোয়ার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোর নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি চট্টগ্রাম নগরের ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য।
রোববার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা এলাকার এক খালের পাশে সাংবাদিক সরওয়ারকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা চলছে।
সরওয়ার বলেন, তাকে ধরে অজ্ঞাত একটি স্থানে নিয়ে শরীরে কাপড় জাতীয় কিছু একটা মুড়িয়ে কাঠের তক্তা ও বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। চার দিনের মধ্যে দুই দিন তারা আমাকে মারধর করে। ‘আর নিউজ করবি কি না’ বলতে বলতে মারধর করে। পাশাপাশি বলতে থাকে- তোদের কোনো নিরাপত্তা নাই, তোরা কী করতে পারবি? কোন সংবাদের কারণে জানতে চাইলে সরওয়ার বলেন, তা তিনি জানেন না।
সরওয়ার বলেন, মারধরের সময় ওই ঘরে থাকা লোকজন বাইরের কারও সঙ্গে ‘স্যার’ সম্বোধন করে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। তারা বলছিল- ‘স্যার রাখব নাকি ফেলে দিব?’ অপর প্রান্ত থেকে বলে- ফেলতে হবে না, তারে দিয়ে অন্যদের থ্রেট দেওয়া দরকার, সে ‘তেনাফাডা সাংবাদিক’ তাকে কেন মারবি? তারে আনা হয়েছে সে বেশি উড়ছে সে জন্য।
সরওয়ার বলেন, চন্দনাইশ উপজেলায় নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য বুধবার রাত ১২টার দিকে নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হন তিনি। বাস ধরতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় যাওয়ার জন্য ১০০ টাকায় একটি ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেলে উঠেছিলেন। সেখানে আরেকজন লোক উঠে তাকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে পেছন থেকে আরেক জন লোক উঠে পড়ে। কিছু একটা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ফেলার পর অজ্ঞান হই। মোটরসাইকেল থেকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স জাতীয় কোনো গাড়িতে করে আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়।
একটি বাসায় নিয়ে চোখ বেঁধে মারধর করা হয় বলে সরওয়ার জানান। আটকে রাখা ঘর থেকে ট্রেনের শব্দ শোনার কথাও জানান তিনি।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন সোমবার বলেন, তার সঙ্গে বেশি কথা বলা সম্ভব হয়নি। আমরা আবার হাসপাতালে যাচ্ছি কথা বলতে। তার বলা প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি। আগের করা সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করে নিয়ে সরোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে।