প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করেছিল খুনি মোশতাক এবং মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসাবে কাজ করা আরেক খুনি জিয়াউর রহমান। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৪৭ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম এবং জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনানারি কনস্যুলেট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। জাতীয় চার নেতাকে এই রাতেই হত্যা করা হয়। আমার মনে হয়, এ রাত কেয়ামতের রাত। পৃথিবীর ইতিহাসে জেলখানার হত্যাকাণ্ডের এমন ঘটনা বিরল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৮ দিন পরই আমাদের ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ কামালের শশুড়কে নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করেছিল। আমরা নিউ জেলে গিয়ে ২৩ জন মিলিত হই। ব্রিটিশ আমলে এটা ছিল ঘোড়া রাখার স্থান। পাকিস্তান আমলে এটা ছিল গোডাউন। ওই সময় জেলখানা প্রায় পরিপূর্ণ। তাই এই গোডাউনকেও জেলখানায় পরিণত করা হয়। আমরাই সেখানে কয়েদি হিসাবে গিয়েছিল। তিনটা রুম ছিল সেখানে। আমাদের ২৩ জন মিলে সেখানে থাকতাম। ৩ নভেম্বর রাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে রয়েছি। শেষ রাতে সাইরেন আর কাক আর চিলের আওয়াজে ভয়ানক এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এর কয়েক মিনিট পর আর্মিদের বুটের আওয়াজ পাই। নিউ জেলের রাস্তায় যে লাইটটা ছিল, সেটিও বন্ধ করে দিয়েছিল। সুবেদার ইদ্রিস প্রথম রুমটা খুলেই বললো, জাতীয় চার নেতা ছাড়া সবাই বেরিয়ে আসতে বললেন। অন্য সবার সাথে তাজউদ্দীন সাহেব বের হয়ে গিয়েছিলেন। তখন ইদ্রিস তার হাত ধরে আবারো রুমে নিয়ে যায়। ৩ নম্বর রুম থেকে ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদকে ১ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমাদের রুমে এসে আসে সুবেদার ইদ্রিস। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে। সে শুধু বললো, আর্মি। তখন কামরুজ্জামান সাহেব তাহাজ্জুদের নামাজ পরছিলেন। এরপর তাকেও ১ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জাতীয় ৪ নেতাকে ১ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কয়েকশ রাউন্ড গুলি করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারা চলে যায়। কয়েক মিনিট পরই আমরা গোঙানির আওয়াজ পাই। পানি পানি বলে আওয়াজ করছিলেন। তারপর জেলের রুমে বসা। একজন মারা যায়নি, এটা শোনার পর আবারো ১০ মিনিট পর গুলির আওয়াজ। তখন আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরও হত্যা করা হবে। এরপর আবারো ক্যাপ্টেন মনসুরকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তখনই ফজরের আযান পরে। আমরা তখন রক্তের একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের সমন্বয়ে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা এদেশ স্বাধীন করেছিল, তারা বেঁচে থাকলে ষড়যন্ত্রকারীদের নীলনকশা বাস্তবায়ন হবে না। ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত অনেক ঘটনা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। এটা এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে, ওই ৫ দিন কি ঘটেছিল তা জানার। জেলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে ঠিকই কিন্তু পরিকল্পনাকারীর বিচার এখনো হয়নি। তাদেরও বিচার করতে হবে।