প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নদী আক্তারের জন্ম ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে তার বয়স এখনো ১৩ হতেও বাকি আছে। অথচ বয়স ২৫ দেখিয়ে তাকে সৌদি পাঠায় রিক্রুটিং এজেন্সি। সেই নদী শনিবার ফিরেছে লাশ হয়ে।। তার শরীরে অজস্র আঘাতের চিহ্ন আছে বলে দাবি করেছে পরিবার। শনিবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৪টায় সৌদি এয়ারলাইন্সে করে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই কিশোরীর মরদেহ পৌঁছায়। তার সঙ্গে থাকা কাগজে আত্মহত্যা বলা হলেও তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। রবিবার দুপুরে ঢাকার খিলগাঁওয় কবরস্থানে নদীকে দাফন করা হয়। তার লাশ হয়ে ফিরে আসার সংবাদ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
নদীর মা বিউটি আক্তার বলেন, ‘মেয়েটা সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকেই সমস্যায় পড়ে। এজেন্সিকে বারবার বলা হলেও ওরা ব্যবস্থা নেয়নি। এখন ওরা আমার বাচ্চা মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে। কাগজে লেখা আত্মহত্যা, কিন্তু আমি দেখেছি আমার মেয়ের গলায় কোনো দাগ নেই। অথচ সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। আমি কার কাছে বিচার চাইবো?’
পরিবারের ভাষ্য ও জন্ম সনদ অনুযায়ী নদী আক্তারের জন্ম ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে তার বয়স এখনো ১৩ হয়নি। অথচ পাসপোর্টে অনুযায়ী তার বয়স এখন ২৭। পাসপোর্টে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে, ১৯৯৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। বাড়ি কুমিল্লা হলেও তার পাসপোর্ট করা হয় ময়মনসিংহ থেকে।
নদীর মা জানান, গত বছরের সৌদি যাওয়ার পর থেকেই নিয়োগকর্তা নদীকে নির্যাতন করতে শুরু করে। এমনকি কোনো বেতনও দেওয়া হয়নি।
সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ২৬ আগস্ট ঢাকায় যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১৪ আগস্ট মদিনায় নদী আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের কাছে খবর আসে। দূতাবাস থেকে সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রাওদাহ আল উহুদের মালিক মানসুর আল মাগামিসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদী আক্তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সৌদি আরবেই এই মরদেহ যেন দাফন করা হয় সেজন্য পরিবারের মতামত চাওয়া হয়।
তবে নদীর পরিবার স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য মত দেননি। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সৌদি আরবে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, মেয়েটির পরিবার স্থানীয়ভাবে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেননি। তারা চান মরদেহ যেন দেশে আসে। নদীর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করেছে পরিবার। ওই ঘটনার পর গত ১৮ অক্টোবর রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ রহমান লালনসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে কলাবাগান থানা পুলিশ।