যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ। গোটা দেশজুড়ে ভোট গ্রহণ হলেও নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতে পারে হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যের ভোটের ফলাফলে। এসব রাজ্যকে এবারের নির্বাচনের ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। জাতীয় জনমত জরিপে বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। কিন্তু ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত ১৩টি রাজ্যে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান অল্প এবং এখানে ভোটারদের মনও দোদুল্যমান।
যদি এবারও ২০১৬ সালের নির্বাচনের মতো কিছু ঘটে তাহলে এই রাজ্যগুলোতে ভোটের সামান্য ব্যবধানই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন, তা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্ধারিত হবে না। সেটি নির্ধারিত হবে কোন প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজে অন্তত ২৭০ ভোট নিশ্চিত করতে পেরেছেন তার ওপর।
এবারের নির্বাচনে আগাম ভোট সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ভোটের আগেই প্রায় ১০ কোটি ভোট দেয়া হয়ে গেছে।
এবার ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে ১৩টি রাজ্যকে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষণকারী ওয়েসবাইট ফাইভথার্টিএইট এর তালিকা অনুযায়ী এবারের ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলো হল, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, পেনসিলভেইনিয়া, ওহাইও, জর্জিয়া, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা, মিনেসোটা, উইসকনসিন, আইওয়া, নেভাডা ও নিউ হ্যাম্পশায়ার।
এই ১৩টি রাজ্যের মোট ইলেকটোরাল ভোট ১৯৯টি। এরমধ্যে টেক্সাসে ৩৮, ফ্লোরিডায় ২৯, পেনসিলভেইনিয়ায় ২০, ওহাইওতে ১৮ এবং জর্জিয়া ও মিশিগানে ১৬টি করে ইলেকটোরাল ভোট আছে।
বাকি রাজ্যগুলো মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫, অ্যারিজোনায় ১১, মিনেসোটায় ও উইসকনসিনে ১০টি করে, আইওয়া ও নেভাডায় ৬টি করে এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে আছে ৪টি ইলেকটোরাল ভোট।
টেক্সাস
এই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট টেক্সাসে। সিবিএস নিউজের ব্যাটলগ্রাউন্ড ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, জনমত জরিপে এখানে বাইডেনের (৪৮%) চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প (৪৯%) ।
ফ্লোরিডা
ট্রাম্প অথবা বাইডেন, যিনিই ফ্লোরিডায় ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন হোয়াইট হাউসের তার থাকার সম্ভাবনাই জোরালো হবে। জনমত জরিপের ফল এখানে বাইডেনের (৫১%) দিকে ঝুঁকে থাকলেও ট্রাম্পও (৪৮%) খুব একটা পিছিয়ে নেই।
পেনসিলভেইনিয়া
২০টি ভোট নিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ মানচিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভেইনিয়া। এখানে জনমত জরিপে ৫৩ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ট্রাম্পের (৪৬%) চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থানে আছেন বাইডেন।
ওহাইও
ওহাইওতে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জনমত জরিপে আভাস মিলছে। ইলেকটোরাল কলেজে ১৮টি ভোট থাকা এই রাজ্যটিতে উভয় প্রার্থীর পক্ষে ৪৯ শতাংশ জনসমর্থনের ইঙ্গিত এসেছে ব্যাটলগ্রাউন্ড ট্র্যাকার এর জরিপে।
জর্জিয়া
জর্জিয়ায় ৫০ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন, জনমত জরিপে এখানে রিপাবলিকান ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৪৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। রাজ্যটিতে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে।
মিশিগান
জর্জিয়ার সমান ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকা ‘রাস্ট বেল্টের’ রাজ্য মিশিগানে বাইডেন, ট্রাম্পের চেয়ে ৬ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
নর্থ ক্যারোলাইনা
জনমত জরিপে নর্থ ক্যারোলাইনায় ৫০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে বাইডেন, ৪৮ শতাংশ সমর্থন থাকা ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ইলেকটোরাল কলেজে রাজ্যটির ভোট ১৫টি।
অ্যারিজোনা
১১টি ইলেকটোরাল ভোটের রাজ্য অ্যারিজোনায় জো বাইডেনের পক্ষে জনসমর্থন ৫১ শতাংশ এবং ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ।
মিনেসোটা
মিনেসোটায় ১৯৭২ সালের পর থেকে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয় পায়নি। এখানে বাইডেন (৫৩%) ট্রাম্পের চেয়ে (৪৪%) এগিয়ে আছেন। রাজ্যটিতে ইলেকটোরাল ভোট ১০টি।
উইসকনসিন
১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকা উইসকনসিনেও ট্রাম্পের চেয়ে ৫ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন।
আইওয়া
আইওয়ায় ৬টি ইলেকটোরাল ভোট এবং এখানে দুই প্রার্থীর অবস্থান সমানে সমানে। তাদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নেভাডা
নেভাডায় বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৯ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। ২০১৬ সালেও ট্রাম্প এখানে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।
নিউ হ্যাম্পশায়ার
জনমত জরিপ অনুযায়ী, নিউ হ্যাম্পশায়ারে বাইডেনের পক্ষে জনসমর্থন ৫৪ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ শতাংশ। চার বছর আগে রাজ্যটিতে অল্প ব্যবধানে হেরেছিলেন ট্রাম্প।
এই ১৩টি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজের মধ্যে ৬টি জয়-পরাজয় নির্ধারণের মূল ভূমিকা রাখতে পারে বলে সিবিএস নিউজের ব্যাটলগ্রাউন্ড ট্র্যাকারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। এই রাজ্যগুলো হল, অ্যারিজোনা, আইওয়া, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডা।