মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী/সচিবরা একনেক সভায় অংশ নেন। সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
ড্রেজিংয়ের বিষয়ে যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো দ্রুত একনেকে উপস্থাপনের জন্য অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ড্রেজিংয়ের বিষয়ে একটা স্থায়ী পরিবর্তনের এবং নিয়মিত ব্যবস্থাপনার জন্য একটা প্রকল্প নিতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনা বিভাগের সচিব।
প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা তুলে ধরে আসাদুল ইসলাম বলেন, নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নদীর প্রবাহ যেন ঠিক থাকে’। কারণ ভাঙনের প্রধান কারণ নদীর পানি যখন কমে যায় তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। ফলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘এসব বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে পুরো বছর একটা ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা থাকতে হবে’।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত চর জাগার কারণে যেসব নদীপথ পরিবর্তন হয় বা ভাঙে– এগুলো চিহ্নিত করে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে বর্ষাকালের পানি ধরে রাখার জন্য জোন তৈরি করতে হবে। যাতে পানির স্তর, অন্যান্য ব্যবস্থাপনা, পানির পরিমাণ বজায় থাকে– এ ব্যাপারে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘যমুনা নদীর ডান তীর ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ি, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
একই নদীতে এরকম ভাঙন রোধে একাধিক প্রকল্প নেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পানির ফ্লো (প্রবাহ) আসে, যে পরিমাণ বালু ও কাদামাটি নিয়ে আসে, এটা একদিকে আশীর্বাদ আরেক দিকে কষ্টের কারণ। আশীর্বাদ হলো নদীর পার্শ্ববর্তী কৃষিজমি, সেগুলোতে পলি পাচ্ছে। সমস্যা হলো, এর ফলে আমাদের নদীগুলোতে প্রতিনিয়ত চর পড়ছে। কারণ যখন চর তৈরি হয়, মাঝখানে চর তৈরি হলে পানি হয় ডান-বাম দিকে যাবে, নয়তো ভাগ হয়ে যাবে। যখন ভাগ হয়ে যায়, তখন দুদিকে ভাঙন সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা সচিব জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘নিয়মিত নদী খনন করতে হবে’। নিয়মিত খনন মজার বিষয় নয়। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রজেক্ট বেজড অ্যাপ্রোচ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজকে বলেছেন, প্রজেক্ট বেজড অ্যাপ্রোচ থেকে সরে এসে আমাদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে অ্যাজ মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং। সেখানে যেতে হলে পানিসম্পদ সচিব ও মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাতে আমাদের মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য নিজস্ব ড্রেজার দরকার। অর্থাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ড্রেজার দরকার। একটা ড্রেজারের দাম প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। আমাদের সচল ড্রেজার আছে মাত্র ৫-৬টা। তারা ভাড়া করে নিয়ে আসে। তাদের ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজারের একটা প্রকল্প দিয়েছে কিছুদিন আগে। এ প্রকল্পে ৬ হাজার কোটি টাকায় তারা ড্রেজার কিনবে মাত্র ৩২টা। সুতরাং সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কিন্তু বড় নদীগুলোতে আমরা স্টাডির মাধ্যমে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে যাব। সেই ক্ষেত্রে নদীর ডান ও বাম তীর সংরক্ষণের প্রকল্প যে ঘন ঘন আসছে, হয়তো তখন একই নদীতে এরকম এত প্রকল্প আসবে না।