#ইসলাম মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে: মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী।
#ইসলাম মানতে হলে আগে জানতে হবে: আবুল কাসেম মোঃ ছফিউল্লাহ।
#ইসলামের সম্পূর্ণ বিধান মানতে পারলে সঠিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবো: আতিয়ার রসুল কিটন।
ইসলাম মানবতা ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম সকল ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার কথা বলেছে। একই সাথে প্রতিবেশী হিসাবে কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ, এটা না দেখে মানুষ হিসাবে সহায়তা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসলামে। ইসলামই সকল ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নয় অমুসলিমদের জন্যও স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলে দাবি করেছেন আলোচকরা। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৪৩ তম পর্বে ইসলাম ও মানবতা বিষয়ে শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান , বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম এর সহকারী অধ্যাপক, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ডের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আবুল কাসেম মোঃ ছফিউল্লাহ, ইতালী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রসুল কিটন। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, সঞ্চালক ও দর্শকবৃন্দ যারা যেখান থেকে আজকের এই আলোচনা অনুষ্ঠান দেখছেন সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক মোবারকবাদ। পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল ইসলামের ইতিহাসে প্রত্যেকটি মুসলমানের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই মাসেই রাসুলে আকরাম (সাঃ) দুনিয়াতে এসেছিলেন, এই মাসেই রাসুলে আকরাম (সাঃ) এর জীবনে হিজরত সংঘটিত হয়েছিল এবং এই মাসেই রাসুলে আকরাম (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। সকল নবী রাসুলগণ মানুষের মনোজগৎকে পরিবর্তন করার জন্য দাওয়াতি কাজ করেছিলেন। একজন মানুষের মনোজগৎে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তার মধ্যে ভালো কাজের উৎকর্ষ সাধিত হয়। মানুষের দেহের মধ্যে এমন একটি অঙ্গ রয়েছে যেটি পরিশুদ্ধ হলে মানুষের সকল কার্য শুদ্ধ হয়। আর সেই অঙ্গটি যদি বিনষ্ট হয় তাহলে তার সকল কর্মকাণ্ড ক্ষতি বা অকল্যাণকর কাজের দিকে ধাবিত হয়। এবং সেটি হলো মানুষের কলপ বা অন্তর। সকল নবী রাসুলগণ এই কলপের শুদ্ধির চেষ্টা করেছিলেন দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে। এবং এইজন্যই ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা হয়। ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটি অতি সত্য ও বাস্তব কথা। আমাদের ধর্ম ইসলামের নামকরণ সিলম ও সালাম তথা শান্তি শব্দ থেকে এসেছে। সালামই এ ধর্মের পরিচয় ও নিদর্শন। শান্তিই এর আহ্বান ও পথ-পন্থা। সালামের এ ধর্মই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন। ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ [সূরা মায়িদা : ০৩] যে কেউ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন, তাঁর দাওয়াতই ছিল শান্তি ও সালামের প্রতি। নবুয়তের আগে-পরে সর্বদাই তাঁর জীবনের প্রধান ও মুখ্য চাওয়া ছিল শান্তি ও সালাম। তিনি জীবনের প্রাথমিক সময়গুলোতেই অংশগ্রহণ করেছিলেন উত্তম চরিত্র, মানুষে মানুষে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া এবং মজলুমের সাহায্যের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। অংশ নিয়েছেন হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠায়। হাদিস শরীফে রাসুলে আকরাম (সাঃ) আরও বলেছেন, প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তির কথায় এবং কাজে অন্য মানুষ শান্তি পাবে, নিরাপত্তা পাবে। মুসলিম মানেই হল শান্তি বিধানকারী শান্তি রক্ষাকারী, আর মুমিন মানে হচ্ছে নিরাপত্তা বিধানকারী। ইসলাম একজন মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে তাকে মুমিন করে তুলে।
আবুল কাসেম মোঃ ছফিউল্লাহ বলেন, আমি সঞ্চালকের মাধ্যমে সবার কাছে সবার কাছে এই কথাটি তুলে ধরতে চায় যে, আমি কিছুদিন আগে একটি বই পড়েছিলাম। সে বইতে বলা হয়েছিল ইসলাম সারা বিশ্বের সব থেকে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং রিলেজিয়াম। এর কারণ আমরা পড়া লেখা করিনা, কেবলমাত্র শুনে শুনে কথা বলি। অমুক স্যার বলেছেন, তমুক হুজুর বলেছেন, এভাবেই আমারা আমাদের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে রাখি। অথচ কোরআনে কারিমে আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম শব্দটি নাযিল করেছেন ইকরা যার অর্থ পড়। অর্থাৎ আমাকে আপনাকে পড়তে হবে জানতে হবে। এবং আল্লাহ আরও বললেন ফানা অর্থ জানো। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন লিল্লাহ নেই এই জ্ঞানটা আগে তুমি জানো অর্জন করো। আমরা অনেকেই বলি জানার নাম ইসলাম না, মানার নাম ইসলাম। এটা একবারেই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আমি যে কি মানবো এটাকেই তো আমাকে জানতে হবে। আমি যদি জানতে চায় তাহলে আমাকে পড়া লেখা করতে হবে। আল্লাহ তালা কোরআনে কারিমে বলেছেন, যারা জানে এবং যারা জানেন না তারা সমান না। এজন্যই আমাকে আপনাকে জানতে হবে। ইসলামের যে সৌন্দর্য আছে, ইসলামের যে আউটলুক আছে, ইসলামের যে সার্বিক চমৎকার বিধি বিধান আছে যা মানুষ প্রদত্ত না, কোন রাষ্ট্র প্রদত্ত না, এই বিধানগুলো সরাসরি আল্লাহ প্রদত্ত। এই বিধান গুলো হচ্ছে আমার আপনার জন্য চিরন্তন সত্য যেখানে সামান্যতম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে কাউকে অনর্থক আঘাত করা নিষেধ। ইসলামের শিক্ষা হলো, অমুসলিম যেই হোক তাকে আদর-আপ্যায়ন করে, সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দীনের পথে আনতে হবে। আমার আল্লাহর কাছে ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। উনি সব জানেন, তার কাছে কোন অতীত নেই তার কাছে পুরোটায় বর্তমান। উনি জানেন কি হবে, সুতরাং তার দেওয়া সমাধান হচ্ছে সর্বোত্তম সমাধান। মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং জীবনের সকল অঙ্গনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও বিধানের চর্চা ও বিস্তারে ব্রতী হওয়া। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের জীবনে পূর্ণ শান্তি বিরাজ করবে এবং ইসলাম শান্তির ধর্ম কথাটির সত্যতা ও যথার্থতা বাস্তবরূপে প্রতিফলিত হবে। আমরা যদি জ্ঞান অর্জন করতে পারি তাহলে তাহলে ইসলাম নিয়ে যেসব ফোবিয়ার কথা বললেন, ফ্রান্স নিয়ে কথা বললেন এবং তা নিয়ে আমরা যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি তা কোনটায় হতোনা যদি আমাদের জ্ঞানকে আমরা শাণিত করতে পারতাম, আমাদের জ্ঞানকে আরও বাড়াতে পারতাম।
আতিয়ার রসুল কিটন বলেন, আজকে একটি বিশেষ দিন কারণ আজকের এইদিনে আমাদের মহামানব নবী করীম (সাঃ) এই দুনিয়াই এসেছেন। আমরা মুসলমানরা পৃথিবীর যে যেখানেই থাকি না কেন, আমদের মহানবী (সাঃ), যিনি আমাদের শান্তির দ্যূত, তিনি যে নিয়ম কানুন দিয়ে গেছেন তা মেনেই চলতে চায়। ইতালিতে আমি আজ থেকে ৩০ বছর আগে এসেছি আমার যতটুকু মনে আছে এখানে কোন মসজিদ ছিলোনা। যেহেতু কোন মসজিদ ছিলোনা তায় এখানে জুম্মার নামাজ পড়ার তেমন সুযোগ ছিলোনা। এরপর আস্তে আস্তে এখানে একটি সেন্ট্রাল মসজিদ হলো। সেন্ট্রাল মসজিদ হওয়ার সময় তখন আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন হোসাইন মোহাম্মাদ এরশাদ। বাংলাদেশের পক্ষে উনার কিছু অবদান এখানে আছে বলেই সম্ভবত কারণে তার নামটা এখানে আছে। আজকে ত্রিশ বছর পরে শুধু রোমেই ত্রিশটির মত মসজিদ আছে। এর মধ্যে ৫টি মসজিদের তত্ত্বাবধানে আছে ইজিপ্ট এর লোকেরা আর বাকি ২৫টির মত মসজিদ বাঙালিদের তত্ত্বাবধানে আছে। এজন্য আমরা কিন্তু খুবই গর্ববোধ করি। একজন মুসলমান হিসেবে আমরা বাঙালিরা এখানে যারা আছি তাদের জন্য এটা বিরাট গর্বের বিষয়। আসলে আমার আগের বক্তা একটা কথা বলছেন জানার আসলেই একটা বিষয় আছে, শুনে বলা আর জেনে বলা এর মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। আমার রাসুল কিন্তু বলে গেছেন, ইসলাম জঙ্গিবাদের শিক্ষা দেই না। কেউ অন্যায় করলে সেটা তুমি নিজের হাতেই বিচার করো, এটা ইসলাম শিক্ষা দেইনি। পবিত্র কোরআন পাকে যেসব বিধান রয়েছে তা যদি আমরা পরিপূর্ণ ভাবে মানতে পারি তাহলে কিন্তু একদিকে আমরা পরিপূর্ণ মুসলমান হতে পারবো আরেকদিকে মানুষ হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলতে পারবো।