প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৩০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
লালমনিরহাটের বুড়িমারিতে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় হতবাক ঘটনার শিকার রংপুরের পূর্ব শালবনের বাসিন্দা শহিদুন্নবী জুয়েলের এলাকাবাসী স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের লাইব্রেরিয়ান চাকরি চলে যাওয়ার পর কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও নামাজসহ ইসলামী অনুশাসনের মেনে চলতেন জুয়েল। নৃশংস এই ঘটনায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও স্বজনসহ এলাকাবাসী শোকে স্তব্ধ।
রংপুর মহানগরীর পূর্ব শালবন এলাকার নবী ভিলা। মৃত আব্দুল ওযাজেদের এই বাড়িটি এক নামেই পরিচিতি এলাকায়। তারই ছেলে শহিদুন্নবী জুয়েল এক বছর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকেই লালমনিরহাটের বুড়িমারিতে পিটিয়ে হত্যার পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সুমন নামের এক বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জুয়েল।
জুয়েলের ছোট বোন শিল্পী ও বড় বোনের লিপির মত এ ঘটনায় হতবাক স্বজন ও এলাকাবাসী। কেউ মানতে পারছেন না জুয়েলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়ে মারা হয়েছে সেটা সঠিক। তারা বলছেন কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কুরআন তেলাওয়াতসহ ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালনে সক্রিয় ছিলেন জুয়েল। ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন তারা।
কুরআন অবমাননার দোহাই দিয়ে জুয়েলকে পুড়িয়ে মারার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল করিম মিলন। তিনি জানান, দু-দিন আগেও সকালে হাঁটতে বেরিয়ে সুস্থ মস্তিষ্কে সূরা বাকারার তরজমা শুদ্ধভাবে শুনিয়েছিলেন জুয়েল। তার এমন মৃত্যুর জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
বড় বোন লিপি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টায় জুয়েলের স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তোমার ভাই আবারও সারারাত ঘুমাচ্ছে না। সকাল সাড়ে সাত টার দিকে বাইরে গেছে। তখন আমি জুয়েলকে ফোন দেই। তিনবার ফোন দেয়ার পর অন্য একজন ফোন ধরে বলে আমার নাম সুমন, ওর বন্ধু, জুয়েল বাথরুমে গেছে। পরে জুয়েল আমাকে ফোন করে বলে, আপা তুই চিন্তা করিস না। আমি একটা দুর্নীতি ধরেছি। ডিসির মোড়ে আছি। ডিসিকে বিষয়টি জানাব। আমার সাথে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তুই চিন্তা করিস না। তারা আমকে প্রোটেকশন দেবে। আমাদের পরিবারকে প্রোটেকশন দিবে। তখন আমি ওকে বলি তোর ছেলেটা অসুস্থ। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। ওকে ওষুধ খাওয়াবি। তখন সে বলে আমার জন্য চিন্তা করিস না আমি আসতেছি। এই বলে ফোন কেটে দেয়। পরে বহুবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ধরেনি। যারা আমার ভাইকে যারা এভাবে মারল আমি তাদের ফাঁসি চাই।
১৯৮৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পার কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরী এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৯৬ সালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দেন। ২০১৯ সালে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে জুয়েল ছিলেন তৃতীয়। নৃশংস এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আখতার, এসএএস পরীক্ষার্থী কন্যা জেবা তাসনিয়া অনন্যা এবং সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আশিকুন্নবী অরন্য।
ভোরের পাতা/এএম