প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
‘রাতের ঢাকা অনেকটাই ফাকা; শ্যামলী শিশু মেলার সামনে এক ভদ্র মহিলা অনবরত কাদঁছে, যেন শুনশান নিরবতাই তার কান্নার সঙ্গী, কৌতূহল নিয়ে আগবাড়িয়ে গেলাম, জিজ্ঞেস করলাম সমস্যা কী? কাদঁছেন কেন? বেশ কয়েকবার প্রশ্ন করার পর উত্তর দিয়েছিল, কিছুক্ষণ আগে ডিভোর্স লেটারে সাইন করে আসলাম। এই স্কুল শিক্ষিকা দু’ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, নেশাখোর স্বামীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিচ্ছেদের সীদ্ধান্ত নেন; প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের পর কান্না করে নিজেকে হালকা করছিলেন গল্পের ছলে এমনটিই বলেছিলেন তিনি।
সুখে দুঃখে আজীবন এক সাথে জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাবা মায়ের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা, টানাপোড়া সংসারে অশান্তি কলহ দেখা দেওয়ার পর, বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল সেদিন। ভালোবেসে ঘরবাধার রঙিন স্বপ্নগুলো যেন নিমিষেই হারিয়ে গেলো, এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা; কেন এমন হলো? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে বেড়ান বিচ্ছেদ হওয়া দম্পতির ওই মেয়েটি।
বাবা মায়ের পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে হয়েছিল গ্রামের সহজসরল সেই মেয়েটির, বেশ সুখেই দিন কাটছিল কিন্তু কিছুদিন পর হঠাৎ করেই স্বামীর আর ঠিকসময়মতো ঘরে ফিরে না, এই নিয়ে কিছু বলতে গেলেই চলে মেয়েটির উপর শারীরিক নির্যাতন, শেষমেষ বিচ্ছেদের শিকার হতে হয় সেই নারীর, তাকে বিচ্ছেদের পর নতুন আরেকটি বিয়ে করেন তার ওই স্বামী; বিচ্ছেদের মূল কারণই ছিল এটা দাবী ওই নারীর। এক ছেলে আর এক মেয়ের সন্তান নিয়ে দিন কাটছিল এক দম্পতির, রোজই কোন না কোন এক ইস্যু নিয়ে ঝামেলা বাধতো তাদের, একজন অপরজনের কথা জবাবে বাধতো তুমুল ঝগড়াও সেই থেকেই দুই সন্তানওয়ালা দম্পতির সিদ্ধান্ত হয় তারা আর একসাথে সংসার করবেনা।
৭ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েটির বাল্যবিয়ে হয়েছিল কাজির কারসাজি ও পরিবারের চতুরতায়, বিয়ের পর সংসারের দশদিক সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিল; ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী সংসার বুঝেনা বলেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে প্রায়ই, শেষমেষ বিচ্ছেদ এর সমাধান হয়। কয়েক বছরের সংসার জীবনে সন্তান আসছিলোনা বলে বিচ্ছেদের ঘটনা হরহামেশাই হয়ে থাকে। স্ত্রী জড়িয়ে পরছে পরকীয়ায় স্বামীর এই জেড় বা অভিযোগে বিচ্ছেদের সংখ্যাটাও বেশ জোড়ালো। বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হওয়া একজন আরও জানিয়েছেন আত্মীয়স্বজনদের কানপড়ায় আমাদের কলহের সৃষ্টি হয় আর সেই থেকে গড়িয়ে যায় বিবাহ বিচ্ছেদের; এখন প্রতিদিনিই আফসোস করেন এই দম্পত্যি।
ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরীপুর ইউপি সচিব শাহনাজ পারভীন বলেন, করোনার প্রকোপ থাকার পরও এবছর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে শতাধিক যার অন্যতম কারণ পারিবারিক কলহ। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন যদি এই ছোট্ট ইউনিয়নে শতাধিক হয়ে থাকে দেশের বাকী ইউনিয়ন থানা ও আদালতের অবস্থা আরও আশংকাজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ একটি সমাজিক সমস্যা, এই সমস্যাটির প্রধান কারণ অল্প সময়ে একটি অপরিকল্পিত নগরায়ন, আগে পরিবার বড় ছিল এখন ছোট পরিবার হয়ে মানুষ আলাদা হয়ে যাচ্ছে সেই আলাদা জীবন যাপন সন্দেহপ্রবল হচ্ছে সংসার জীবনে কলহ সৃষ্টি হচ্ছে আর বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটছে’।