#শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন: ড. শ্রী বীরেন শিকদার।
#বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার পর থেকেই বাঙালির মধ্যে নতুন স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়েছে: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।
#দেশের মানবিকতা বিকাশে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করেছেন শেখ হাসিনা: মোস্তফা চৌধুরী।
অবশ্যই বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। তা না হলে ১৯৭১-এ রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হতো না। বাংলার কৃষক ও শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে, ফসলে তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন উদ্বৃত্ত খাদ্য ও বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ভরে উঠেছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ছে। চাষাবাদের জমি দিন দিন কমলেও ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মতো বাড়তি ফসল উৎপাদন করছে এ দেশের কৃষক। সামাজিক উন্নয়নে ভারতকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ছেন শেখ হাসিনা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৪২ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, যুদ্ধশিশু বিষয়ক গবেষক এবং কানাডা প্রবাসী মোস্তফা চৌধুরী। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, আজকে ভোরের পাতা লাইভ সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভোরের পাতা কর্তৃপক্ষসহ সঞ্চালক নাসির উদ্দিন আহমেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আজকে যে আলোচ্য বিষয় আমাদের সম্ভাবনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা পাকিস্তানিরা আগে থেকেই প্রচার করে গিয়েছিল। এই যে ভূখণ্ড রয়েছে এটা সম্পর্কে বাইরের দেশে ধারণা ছিল একবারেই কুটু। বাংলাদেশের মানুষেরা কোনভাবেই কোন কাজে যোগ্য নয় এটা তারা মনে করতো। তারা মনে করতো এরা শুধু ভাত খায়, গায়ে কোন শক্তি নাই তাই এদেরকে তৎকালীন সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে ভর্তি করা হলো। বাঙ্গালিকে সবসময় হেয়পতিপন্ন করা তাদের মূল কাজ ছিল। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসতো, এই দেশ নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। ১৯৫২ সালের পরেই বাঙালি বুঝতে পেরেছিল যে আমরা পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবো। কিন্তু সবকিছু ভুল প্রমাণ করে জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের ক্ষমতায় এই দেশটিকে মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু তার শাহাদাৎ বরণ এর পরে আমরা ২১ বছর অপেক্ষা করেছি। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই একের পর এক মেগা প্রকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বোরোতে। আজ দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ছে। চাষাবাদের জমি দিন দিন কমলেও ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মতো বাড়তি ফসল উৎপাদন করছে এ দেশের কৃষক। সামাজিক উন্নয়নে ভারতকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর। রপ্তানি ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যও রপ্তানি হচ্ছে। চা, চামড়া, সিরামিক থেকে শুরু করে মাছ, শুঁটকি, সবজি, পেয়ারা, চাল, টুপি, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেত শিল্পের তৈরি পণ্য, মৃৎ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। কয়েক বছর ধরে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পও বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে।
অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আজকের দৈনিক ভোরের পাতা সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ড. কাজী এরতেজা হাসান সহ অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শকদেরকে আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি। নাসির উদ্দিন সাহেব ইতিমধ্যে এই ভোরেরপাতার ১৪২টি সংলাপ উপলব্ধি করে ফেলেছেন। আমি নিশ্চিত যারা এই অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখেন তারা অবশ্যই বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন এবং পেয়ে আসছেন। এই সম্ভাবনার বাংলাদেশ সম্পর্কে সেই ব্রিটিশ আমলে থেকেই একটা প্রচলন হয়ে আসছিল যে, এখানকার মানুষ স্বার্থপর, এখানকার মানুষের করার কিছু নেই, আমাদের কিছু ভালো না। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের মধ্যে নতুন স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে এই জাতি সত্তার মধ্যে এই স্বপ্নের বীজ রোপণ করেছিল বলেই আজকের সম্ভাবনার বাংলাদেশ জাগ্রত হয়েছে। এবং এই স্বপ্নটার বাস্তব রূপটা দেখতে পারছি তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে মাঝখানে কিছু বছর বাদ দিয়ে আমরা লক্ষ্য করবো যেভাবে তিনি এই জাতি সত্তার মধ্যে এই স্বপ্নটিকে অনুপ্রবিষ্ট করতে পেরেছেন সেটিই সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আমি স্বপ্ন দেখতে পারতাম যে আমার অর্থেই পদ্মা সেতুর মত এইরকম একটা স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। আজকে সেই স্বপ্নটা ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি বাতিল করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এতে দেশে এক অভূতপূর্ব জনজাগরণের সৃষ্টি হয়। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এক অভিনব দেশাত্মবোধের উন্মেষ ঘটে। সকলেই ‘যার হাতে যা আছে’ তাই নিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই স্বপ্নটা একেবারেই সহজ ছিলোনা। এই স্বপ্ন যারা দেখাতে পারেন, যারা স্বপ্ন দেখিয়ে ১৬কোটি মানুষকে জাগাতে পারেন এবং এই স্বপ্ন যারা বাস্তবায়ন করতে পারেন তারাই এই সম্ভাবনার বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তর গড়ে দিয়েছেন।
মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমি যখন ১৯৭২ সালে কানাডায় আসলাম তখন আমার বয়স ছিল ২২বছর। তখন আমি এখানে বাংলাদেশের পরিচয় দিতাম তখন এখানকার মানুষেরা কিসিঞ্জার এর দেওয়া উপাধি তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবেই জানতো। কিন্তু এখন সেটা নেই। এখন সবাই বাংলাদেশকে অন্যভাবে চিনে। ১৯৭২ সালের যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরলেন তখন তার প্রথম কাজ ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তোলা। একই সাথে তিনি দেখলেন যুদ্ধের সময় যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের পরিত্যাগ করা হচ্ছিল তখন তিনি সেটাকেও অগ্রাধিকার দিলেন। সেই অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি কাজ শুরু করলেন। তিনি আইএসএস (ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিস) সংগঠন আছে সেখানে তিনি লেখলেন, তোমারা আমদেরকে একটা সুপারিশ দেও আমরা এদেরকে নিয়ে কি করবো কারণ তাদেরকে পরিত্যাগ করা হচ্ছে। তখন তারা বাংলাদেশে এসে তিন মাস স্টাডি করে একটা সুপারিশ দিল যে, তোমাদের দেশে যে মূল্যবোধ আছে এই মূল্যবোধে এদেরকে কখনোই গ্রহণ করা হবেনা। তারা এখানে অত্যন্ত নিগৃহীত অবস্থায় থাকবে। তাদেরকে যদি কোন ভাবে বিদেশে পাঠাতে পারো তাহলে দত্তক ব্যবস্থার মাধ্যমে তাহলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তখন দেশে কোন দত্তক আইন ছিলনা। তাই বঙ্গবন্ধু দেশে দত্তক আইন প্রণয়ন করেছিলেন। এই আইনটা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লেগেছিল। এই আইন করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছিল কিন্তু তিনি এই আইন বাস্তবায়ন করেছিলেন। তখন মিডিয়ার অনেক কাগজেই বলা হয়েছিল তারা শত্রুর সন্তান, জারজ সন্তান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তারা মানব সন্তান। তিনি সেভাবেই তাদেরকে ট্রিট করলেন। ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে।