#শেখ হাসিনা শত ষড়যন্ত্র নির্মূল করে অদম্য অগ্রযাত্রায় নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে: অধ্যাপক আলী আশরাফ।
#করোনার সাথে আরও ৪টি প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন শেখ হাসিনা: এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম।
#বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে: নুরে জামাল খোকন।
উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। এক সময়কার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এই দেশটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির বিস্ময়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির শুরুটা হয়েছিল শূন্য থেকে। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি- এর প্রমাণ রেখেছে প্রতি পলে পলে। বাঙালির উদ্যম আর কঠোর পরিশ্রমে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জনের পথে। সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। অর্থনীতি ও শিল্পায়নে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এসব শিল্পাঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই একের পর এক মেগা প্রকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৪১ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বুধবার (২৮ অক্টোবর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম, বার্সেলোনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সভাপতি নুরে জামাল খোকন। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভোরের পাতাকে এই সুন্দর সংলাপটি আয়োজন করার জন্য। ইতিমধ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন করছি সাথে সাথে সারা পৃথিবীতে এক মহা বিপর্যয় করোনার হানা দেখা দিল। সেটাকে নিয়ে আমরা যুদ্ধ করছি। আমার স্নেহ পরায়ণ ভাই শ. ম রেজাউল করিম ইতিমধ্যে এই বিষয়ে বিস্তর আলোকপাত করেছেন। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। শোষণ বৈষম্যর অবসান ঘটিয়ে প্রত্যেক মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। তিনি বাংলাদেশকে সৃষ্টি করে গিয়েছেন বলেই আজকে সারা বিশ্বে অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ নামে জানতে পারছে সবাই। সারা বিশ্বয় এখন বাংলাদেশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার ছোট বেলার কথায় বলছি। ছোট বেলায় নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমার শৈশব কাটিয়েছি। এই বাংলার চিত্র ছিল অনেক করুণ। স্বাধীনতার যুদ্ধে যখন গেলাম তখন মানুষের শরীরে একটা ছ্যারা কাপর দেখতাম, জমিতে ফসল ছিলোনা, বন্যায় ভেসে যেত সব। এতো সব প্রতিকূল অবস্থা থেকে দেশটাকে তুলে সোজা করে দাঁড়াবার ক্ষমতাবান করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যোগ্য পিতার সুযোগ্য কন্যা। তাঁর ধমনীতে জাতির পিতার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তাঁকে কোনোভাবে দাবিয়ে রাখা যায়নি। তিনি জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গর্জিয়ে উঠেছিলেন। শপথ নিয়েছিলেন গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে। তিনি পিতার ন্যায় বাংলার আনাচে-কানাচে, গ্রাম-গঞ্জ ও শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সামরিক শাসক ও সামরিক আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য জনগণকে সংগঠিত করেন। এ লক্ষ্যে জনমত তৈরির জন্য সমাবেশ মিছিল, হরতাল ঘেরাও ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে দাবি মানার জন্য চাপ অব্যাহত রাখেন। এইসময় তাকে ১৯বার হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি পিছপা হননি, শত ষড়যন্ত্র নির্মূল করে তিনি অদম্য অগ্রগতিতে দেশটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে গিয়েছেন।
এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ শব্দটার একটা প্রতিশব্দ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু। একটি বলতে গেলে আরেকটি স্বাভাবিক ভাবেই এসে যায়। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই দেখেননি। সেই ১৯৪৭ সাল থেকে বিভিন্ন ধারাবাহিকতায় তিনি এই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। একটা সময় বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যখন বিভিন্ন কারণে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেলেন তখন দেশের রাজনীতিতে স্থবির হয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির হাল হাতে নিতে হলো। একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে তিনি এই রাজনীতির হাল ধরেন। এরপর বিভিন্ন ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, আইয়ুবের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এইভাবেই কিন্তু ধীরে ধীরে অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকেও বঙ্গবন্ধু সকল প্রস্তুতি আমাদেরকে দিয়ে গেলেন। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করার পূর্বেই স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্থপতি মহাকালের মহাপুরুষকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, শিশু রাসেল ও নারীসদস্যসহ পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি করে তারা হত্যার রাজনীতির অবতারণা করে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে। এরপর ২১বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কিন্তু রাজপথের বাইরে ছিলনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই ২১ বছর এইসময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে কিভাবে বিন্যাস করে দেওয়া যাবে এবং বাংলাদেশকে সেই পূর্ব পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে তার সকল প্রচেষ্টায় চালাচ্ছিল স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্ররা। তখন নামটাই ছিল বাংলাদেশ কিন্তু সব কার্যত ছিল পাকিস্তান পন্থায়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগকে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনলো। সেখান থেকেই তিনি আলোর পথে অভিযাত্রী হয়ে সামনের দিকে গোটা জাতিকে নিয়ে এগুতে শুরু করলো। তারপরে উনি আবার যখন ২০১৯ সালের সরকার গঠন করলেন উনি আবার এই অভিযাত্রা শুরু করলেন। এরপরে থেকেই তলাবিহীন ঝুড়ির রাষ্ট্র আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র, উন্নয়নের রোল মডেলের রাষ্ট্র, বিশ্বের কাছ মেজেসিয়ান হিসেবে, মানবতার জননী এইরকম নানাভাবে নানা অভিধানে স্বীকৃত হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নুরে জামাল খোকন বলেন,অনুষ্ঠানের শুরুতেই যারা আমাকে আজকের এই ভোরের পাতা সংলাপের কথা বলার জন্য সুযোগ দিয়েছেন তার জন্য আমি সঞ্চালক এবং ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসান ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টে শহীদ, ৩ নভেম্বর শহীদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা বোন যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নিহত হওয়া ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কথা বলছি। আমারা যখন ইউরোপে এসেছিলাম তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন কিন্তু আসার পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে যখন বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসলো তাদের সেই ভয়ঙ্কর তাণ্ডব লীলা আমরা স্বচক্ষে দেখতে পারিনি, কিন্তু যখন ১/১১ এর সময় আসলো তখন ভাবতেও পারিনি যে এখানে বসেও দেশের জন্য সংগ্রাম চালাতে হবে। যখন ছাত্র রাজনীতি করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম যে আর হয়তো এইরকম সংগ্রাম করতে হবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ পাইনি কিন্তু আমরা গর্ববোধ করি এইজন্য যে আমরা ১/১১ একটি সময় পেয়েছিলাম যখন দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। ১/১১ সময়ে যখন দেখলাম দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাথে বরেণ্য রাজনীতিবিদের চরিত্রহননের চেষ্টা চলছিল তখন আমরা এই ইউরোপের বিভিন্ন জনাকীর্ণ জায়গায় যারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তখন এই নেতাকর্মীদেরকে সমন্বয় করে ইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাস গুপ্ত এবং আমাদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার গনি সাহেব সহ আরও বিজ্ঞ নেতাকর্মীরা আমাদেরকে নানাভাবে মোটিভেট করেছিল। আজ সেই বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার, যার কারণে আজকে প্রায় ১০০% ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, আজকে শিক্ষার হার প্রায় ৭৫%, শিশু শিক্ষার হার প্রায় ১০০%। আজ থকে ১২ বছর আগে বিদ্যুৎ এর উৎপাদন ছিল ৩৫০০ মেগাওয়াট যা এখন ২৬০০০ মেগাওয়াটে রুপান্তরিত হয়েছে। আজ এই করোনাকালীন সময়ে দেশে ২ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে, আজকের এই বাংলাদেশে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। এই সবকিছুর নেপথ্যের নায়ক আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে সংগ্রাম, কষ্ট, ত্যাগ, তিতিক্ষা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশটাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অবস্থায় দাড় করিয়েছে। এই বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এটাকে আমরা পৃথিবীর যে যেখানে আছেন এটাকে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। আজকে স্পেনে যেসব বিভিন্ন কোম্পানি আছে সেখানে যে কাপড় আছে সেখানে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখাটা দেখলে বুকটা গর্ভে ভরে যায়।