অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার আসামিপক্ষের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ২৭ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। এছাড়া পলাতক অপর দুই আসামি ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ও ভাই মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হলে মিজানকে কাঠগড়া থেকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক। আপনারা সঠিক কথা লিখবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটা অডিও বের করেছি। তাতেই এ অবস্থা। আরও তো অডিও বাকি আছে। খেলা আরও বাকি আছে।
শুনানি উপলক্ষে কারাগার থেকে মিজান ও তার ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ১টার দিকে শুনানি শুরু হয়। এ সময় ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘অসাধু উপায়ে অর্জনের’ বর্ণনা থাকতে হবে। নির্দিষ্ট করে কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা প্রসিকিউশন ডকুমেন্টে নেই। আইন অনুসারে দলিল যার নামে তিনি হলেন মালিক। আর মামলায় বলা হয়েছে ভাই, স্ত্রী ও ভাগ্নের নামের সম্পত্তির কথা। তদন্ত কর্মকর্তা যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। যে সম্পত্তি আমার না, তা আমার দখলে থাকল কীভাবে? টাকা অসাধু উপায়ে অর্জন করার কোনো বর্ণনা কোথাও নেই। মামলায় প্রসিকিউশন যে কথিত অভিযোগ এসেছে, তা বাস্তবে আইনের পরিপন্থী। মানিলন্ডারিং আইনে- হস্তান্তর, স্থানান্তর কিংবা রূপান্তরের মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আইনের ব্যাখ্যা অনুসারে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের কোনো সুযোগ নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যে সুনাম-খ্যাতি অর্জন করেছেন, তা নষ্ট করতে যে কোনো দুষ্টচক্রের ইঙ্গিতেই এ মামলাটি করা হয়েছে। কিন্তু প্রসিকিউশন সে অনুসারে কোনো ডকুমেন্ট দিতে পারেনি। এরপর আসামি এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম শুনানি করেন। শুনানিতে তিনিও মাহমুদুল হাসানকে নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি চান। আসামিপক্ষের শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণের যথেষ্ট ডকুমেন্ট আছে। ট্রায়ালে না গিয়ে এসব গ্রাউন্ডলেস বলা ঠিক হবে না। এরপর আদালতের আদেশে দুদকের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান। তারা দোষী না নির্দোষ- তা জানতে চান। জবাবে ডিআইজি মিজান বলেন, অবশ্যই আমি নির্দোষ। আমি ন্যায়বিচার চাই। যেন ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ না হয়। এসআই মাহমুদুল হাসানও জবাবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান রেখে অপর এক নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এছাড়া এক নারী সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ ওঠার পর তাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এর চার মাস পর তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
অনুসন্ধান শেষে গত বছরের ২৪ জুন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) কমিশনের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা, ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়। দুদকের একই কর্মকর্তা এ চার্জশিট দেন। ৯ ফেব্র“য়ারি আদালত ওই চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এ মামলায় গত ২ জুলাই ডিআইজি মিজান ও ৪ জুলাই তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর থেকে তারা কারাগারে আছেন। এছাড়া গত বছরের ২০ জুন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় ডিআইজি মিজানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাস) ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ডিআইজি মিজান ও দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে করা ঘুষ লেনদেনের পৃথক আরেকটি মামলা রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে থাকা মামালাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বিচারাধীন আছে।