প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০, ৮:১৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহিনুর ও ইয়াসিন দম্পতির জন্ম নেওয়া কন্যা শিশু মরিয়মের দাফনের সময় জীবিত ফেরার ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কিছুটা ব্যর্থতা ছিল। তবে তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেছেন ডিএমসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেলের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় চিকিৎসকদের কিছুটা ব্যর্থতা থাকলেও তাদের গাফলতি ছিল না। এটা ইচ্ছাকৃত ঘটনা নয়। তাদের প্রচেষ্টা ছিল শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুটি অপরিণত ছিল। প্রথমে শিশুটির মাকে বাঁচানো গেছে। তবে বাচ্চা বেঁচে ছিল এমন কোনো লক্ষণ তখন (লাইফ অফ সাইন) দেখা যায়নি। প্রটোকল অনুযায়ী ৪৫ মিনিট ধরে শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। যখন চিকিৎসকরা শিশুটির কোনো স্পন্দন পায়নি তখন তারা মৃত ঘোষণা করেছে। আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবজাতক, সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে এমন ঘটনা দেখা যায়। অনেকক্ষণ ধরেই বেঁচে আছে এমন লক্ষণ দেখা যায় না কিন্তু পরবর্তীতে তারা বেঁচে যায়। তবে তা খুব রেয়ার।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য কিছু সুপারিশও দেয়া হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তি সময়গুলোতে চিকিৎসকরা কাজ করবেন। যারা এই সময়ে কাজ করেছে তারা হয়তো অভিজ্ঞ নয়। তবে তাদের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিলো না।
ডিএমসি পরিচালক বলেন, বর্তমানে শিশুটিকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি। সেই সঙ্গে শিশুটির মাকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। আমরা চেষ্টা করছি বাচ্চাটিকে পুরোপুরি সুস্থ করে যাতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। এটি এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং কমিটমেন্ট। আপনারা জানেন এর মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে আদালতে একটি রিটও হয়েছে পরবর্তীতে যদি আরও তদন্ত করার বিষয় আসে সেগুলো করে তারপরেই হয়তো কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় সেই দিনই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন ঘটনা কেন ঘটলো সে কারণে সেই দিনে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। তদন্ত কমিটিতে ছিলো গাইনি বিভাগ থেকে প্রফেসর শিখা গাঙ্গুলী, নিউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি, প্রফেসর সুব্রত অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে সংযুক্ত করে তদন্ত কমিটি করেছিলাম। পুরোপুরি বিষয়ে তারা নিবিড়ভাবে দেখেছে এবং জানার চেষ্টা করেছে।
শিশুটি দাফনের সময় নড়ে ওঠার পর তার পরিবার থেকে ডিএমসিতে আনলে ওয়ার্ড বয়রা অন্যখানে ভর্তি করানোর কথা বলে এটি কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। তবে আপনারা জানেন আমাদের এন এস আই ইউ সবসময়ই রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে। শিশুটিকে যখন এনেছে তখনও বেড খালি ছিল না। তবে আমরা যখন জেনেছি তখন দ্রুত শিশুটিকে নেওয়া হয়েছে। তবে যারাই এমন করেছে ওই সব ওয়ার্ড বয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় শিশু বিভাগের ডাক্তার অধ্যাপক মনিষা ব্যানার্জী বলেন, আমাদের দেশে ২৮ সপ্তাহের আগে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয় না। তবে এই শিশুটি ২৬ সপ্তাহের ছিল। বাচ্চা জন্মের পর শ্বাস-প্রশ্বাস নড়াচড়া কিছুই ছিল না। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তদন্তকারী বোর্ডে আমরা যারা ছিলাম আমাদের কাছে মনে হয়েছে ডাক্তাররা আরও কিছু স্টেপ নিলে বাচ্চাটি বেঁচে আছে আমরা ডায়াগনোসিস করতে পারতাম। আমাদের এখানে যেসব চিকিৎসা মেশিনারিজ নেই সেগুলো যাতে প্রোভাইড করা যায় সেগুলো আমরা সুপারিশ করেছি। আসলে অনিচ্ছাকৃত একটি ভুলের মধ্যে এই বাচ্চাটি পড়েছে। বাচ্চা বেঁচে ওঠার ঘটনা মিরাকেল।
বাচ্চাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিশুটি এই মুহূর্তে অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছে। স্যালাইন চলছে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্ল্যান আছে বাচ্চাটি যদি এই অবস্থায় থাকে তবে আমরা আজ খুবই সামান্য পরিমাণ খাবার দিব। বাচ্চাটির অবস্থা আগের চেয়ে অবনতি হয়নি। তবে যদি শিশুটি সত্যি বেঁচে যায় তবে সেটি মিরাকেল হবে। তবে আমরা আশাবাদী।
ভোরের পাতা/এএম