বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ক্রীড়াবিদ মরহুম জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরীর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ছিলেন বৃহত্তর দিনাজপুরের (দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও) রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার একমাত্র ছেলে দিনাজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সরকারের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
আব্দুর রৌফ চৌধুলী ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌরসভাধীন ধনতলার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর না ফেরার দেশে চলে যান মহান আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরী।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ২১ অক্টোবর বুধবার সকাল ৮টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মরহুমের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে দোয়া মাহফিল (মরহুমের সমাধিস্থল), সকাল ১০টায় আব্দুর রৌফ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে স্মরণ সভা ও দোয়া। আওয়ামী লীগ ছাড়াও আব্দুর রৌফ চৌধুরী ফাউন্ডেশনসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি ও মিলাদ আয়োজনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ১৯৫২ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে মেট্টিকুলেশন, এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। সিরাজগঞ্জে পড়ার সময়েই তিনি ভাষা আন্দোলনে একজন সক্রিয় সংগঠক ছিলেন এবং এজন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়। পরে এইচএসসি পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে। সেখানে পড়াবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দিনাজপুরে ফিরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন।
ভোরের পাতা/এএম
বৃহত্তর দিনাজপুর (দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলার ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব দেন। ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন পালন করেছেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব।
জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরী ১৯৮৯ সালে বোচাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ- কাহারোল) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৬ এর পূর্ববর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন একাধারে ১৫ বছর। ২০০২ সালে জোট সরকারের শাসনামলে ১৫ আগস্ট সেতাবগঞ্জে জাতীয় শোক দিবস কর্মসূচীতে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি।
এ আঘাত থেকে আর পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি এ নেতা। আন্দোলন ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধ আব্দুর রৌফ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে মুজীবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দূত হিসেবে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে। সেইসঙ্গে বোচাগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বোচাগঞ্জ উপজেলা পাক-হানাদার মুক্ত হয়।
ক্রীড়াজীবন
৫০ থেকে ৬০-এর দশকে ফুটবল খেলায় দিনাজপুরের জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছিলেন তিনি। তৎকালীন স্থানীয় ডি.এস.এ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় ছিলেন এবং দিনাজপুর ডি.এস.এ দলের হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী জেলায় নানাপ্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে আসেন।
সেই সময় উত্তরবঙ্গের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে ছিলেন। খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তিনি সফল ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। তার নির্দেশনায় অনেক কৃতী খেলোয়াড় গড়ে ওঠেন।