প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ফাদার রিগন বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পদকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরেছেন। তিনি ধর্ম জীবন এবং শিল্প জীবনকে পৃথক ভাবে দেখেননি। তারঁ মস্তকে ছিলো রবীন্দ্রনাথ আর অন্তরে ছিলো লালন। বাংলাদেশে শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং মনুষ্যত্ব বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন ফাদার রিগন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখায় তিনি পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা। ২০ অক্টোবর মঙ্গবার মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, শিক্ষানুরাগী, কবি-সাহিত্যিক-অনুবাদক ফাদার মারিনো রিগন এস এক্স-এর তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং সেবা সংস্থার আয়োজনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় মোংলার শেলাবুনিয়ায় ফাদার মারিনো রিগনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহি অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী, সেন্ট পল্স ধর্মপল্লীর পালক পুরোহিত ফাদার দানিয়েল মন্ডল, মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম সরোয়ার ও শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সুভাষ বিশ্বাস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোঃ নূর আলম শেখ, প্রভাষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস, মোঃ মনির হোসেন, সেবা সংস্থার মিনা হালদার, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্র নাথ হালদারসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, সুজন’র ভারপ্রাপ্ত সভাপদি অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলাম প্রমূখ।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ফাদার মারিনো রিগন স্মরণে মোংলার মালগাজী মিশনবাড়ীর মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং সেবা সংস্থা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগ বাগেরহাটের উপ-পরিচালক উপসচিব দেব প্রসাদ পাল, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহি অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী, শিক্ষাবিদ সুনীল কুমার বিশ্বাস, ফ্রান্সিস সুদান হালদার, মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম সরোয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, ফাদার রিগনের উপর নির্মিতব্য চলচ্চিত্র’র প্রযোজক আয়েশা আক্তার লিজা, পরিচালক হেমন্ত সাদিক, চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা মোঃ তারিকুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নূর আলম শেখ, সেবা সংস্থার নির্বাহি পরিচালক মিনা হালদার, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্র নাথ হালদার, সুজন’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শেখ নজরুল ইসলাম প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে ফাদার রিগন স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
উল্ল্যেখ্য ইতালিয়ান নাগরিক ফাদার মারিনো রিগন যাজকীয় দায়িত্বপালনের অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশ’র মোংলার মালগাজী গ্রামে প্রথমে আসেন। ফাদার মারিনো রিগন যাজকীয় দায়িত্ব পালনের বাইরে এসে ইতালিয়ান ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের সাড়ে তিনশো গান, জসিম উদ্দিনের নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের অসংখ্য কবিতা অনুবাদ করেছেন। ফাদার মারিনো রিগনকে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া ফাদার রিগন ১৯৮২ সালে কবি জসিম উদ্দিন একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন।