প্রকাশ: শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৬:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বিক্রির হাত থেকে রক্ষা পেল ১৮ বছর বয়সী এক তরুনী। শুক্রবার দিনগত রাতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী সংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে ওই তরুনীকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভুমি) মো. রফিকুল ইসলাম। উদ্ধার হওয়া তরুনীরর বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায়।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন মামলা বা অন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যায়নি অভিযোগ উঠেছে। উদ্ধারের সময় পুলিশ সঙ্গে না থাকায় তরুনীকে পাচার করে আনা চক্রের কোন সদস্যকেও আটক করা সম্ভব হয়নি।
শনিবার বিকেলে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় উদ্ধার হওয়া তরুনী জানায়, তিন বছর আগে রিয়াদ হোসেন রাফি নামে এক ব্যক্তির সাথে তার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। নানা কারণে বছর খানেক আগে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বাবার বাড়িতে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার বাসিন্দা লিনা নামের এক মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। আমাদের মধ্যে একাধিক বার দেখা-স্বাক্ষাতও হয়। লিনার জন্মদিন উপলক্ষে সে আমাকে তাদের বাড়িতে আসতে বলে। এ জন্য লিনা টিটো (২১) নামের এক যুবককে তাকে আনতে পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার টিটো আমাকে তার সাথে করে এনে দৌলতদিয়ার একটি বাড়িতে রেখে যায়। এক পর্যায়ে সে জানতে পারে তাকে যৌনপল্লীতে পাচারের জন্য এখানে আনা হয়েছে। তবে সেটা কার বাড়ী আমি তা জানি না।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ওই তরুনীকে উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া তরুনীর পরিবারের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়। তাঁর নির্দেশে রাতে ওই তরুনীকে স্থানীয় একটি এনজিও মুক্তি মহিলা সমিতি (এমএমএস) পরিচালিত সেভ হোমে রাখা হয়। কার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত বলতে পারব না, কারণ যে কাগজে নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেটা এখন আমার কাছে নেই।
মুক্তি মহিলা সমিতির কর্মকর্তা আতাউর রহমান খান জানান, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আমরা ওই তরুনীকে সেভ হোমে রাখি। তাদের নির্দেশেই শনিবার ওই তরুনীকে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় পৌছে দেই।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, শনিবার ভোর ৩ টার দিকে পুলিশের জাতীয় সেবা কেন্দ্র ৯৯৯ থেকে ফোনে ওই তরুনীকে উদ্ধারের নির্দেশনা আসে। দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে ওই তরুনীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে মুক্তি মহিলা সমিতি থেকে বলা হয় সহকারী কমিশনার (ভুমি) ওই তরুনীকে রেখে গেছেন, তাই এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করতে। একপর্যায়ে পুলিশ সেখান থেকে ফিরে আসে। শনিবার দুপুরে মুক্তি মহিলা সমিতির দুই কর্মী দিয়ে ওই তরুনীকে থানায় পাঠিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। অভিযানের সময় পুলিশ থাকলে পাচার চক্রের সদস্যদের আটক করা সহজ ছিল। তাছাড়া নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে অবশ্যই নারী পুলিশ সদস্য সঙ্গে থাকা বাঞ্চনীয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।