পরকীয়ার জেরে ২ সন্তানের জননী খুন; থানা হাজতে ঘাতকের আত্মহত্যার ২ দিন পরে প্রেমিক বাবার আত্মহত্যা!
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে পরকীয়ার জেরে প্রেমিকের ছেলের হাতে খুন হয়েছে ২ সন্তানের জননী। এ ঘটনায় আটক প্রেমিকের ছেলে ঘাতক থানা হাজতে আত্মহত্যার ২ দিন পর তার বাবা প্রেমিক আত্মহত্যা করেছে। একটি অনৈতিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ২টি পরিবারের ৩টি জীবন চলে যাওয়ায় শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের ঢালী পাড়া এলাকায় চলছে সমালোচনা।
গত শনিবার সন্ধায় ওই এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী ইয়াকুব ঢালীর স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩২) নিখোঁজ হয়। এর আগের দিনই রাজিয়া বেগমের মেয়ের বিয়ে হয়। সোমবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলা খ্রিষ্টানপাড়া এলাকার একটি বাঁশের ঝোপ থেকে রাজিয়া বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে রাজিয়া বেগমের পরকীয়া প্রেমিক আবুল মিস্ত্রির ছেলে মামুন (২৮) কে সোমবার বিকালে শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর থেকে আটক করা হয়। ওই দিন রাতেই শ্রীনগর থানা পুলিশ তাকে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মামুন সেখানে হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর পরই থানা হাজতে পরনের লুঙ্গি পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার ২ দিন পর বৃহস্পতিবার আবুল মিস্ত্রি ঢাকার লালবাগ এলাকায় তার ভাইয়ের বাসায় বিষপান করে আতœহত্যা করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে রাজিয়া বেগমের স্বজনরা তার লাশ সনাক্ত করে। এর আগে শুক্রবার দিন রাজিয়া বেগেমর মেয়ে সুমাইয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মালয়েশিয়া প্রবাসী ইয়াকুব ঢালী কয়েক বছর আগে তার বসতবাড়ি থেকে একটু দুরে হাঁসাড়া-আলমপুর সড়কের পাশে নতুন বাড়ি করেন। প্রায় ৪ বছর আগে বাড়িটি অটো রিক্সার গ্যারেজ হিসাবে ভাড়া নেন ওই এলাকার জামাই আবুল মিস্ত্রি (৫৫)। ইয়াকুবের স্ত্রী রাজিয়া বেগম প্রায়ই সেই বাড়িতে গোসল করতে যেত। এই সুযোগে আবুল মিস্ত্রি কৌশলে রাজিয়া বেগমের গোসলের চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে তাকে ব্ল্যাক মেইল করে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং তার সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত এক দেড় মাস আগে আবুল মিস্ত্রির ছেলে মামুনের হাতে তার বাবার মোবাইলটি পরলে সে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত রাজিয়া বেগম ও তার বাবার অনৈতিক সম্পর্কের বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও দেখতে পায়। এটাকে কাজে লাগিয়ে মামুন রাজিয়া বেগমের মেয়ে সুমাইয়াকে কুপ্রস্তাব দিয়ে ব্যার্থ হয় মামুন। এটা নিয়ে আবুল মিস্ত্রির সাথে তার স্ত্রী ও ছেলের হাতাহাতি হলে আবুল মিস্ত্রি ১১ দিন আগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
রাজিয়া বেগম শনিবার সন্ধ্যায় তাদের নতুন বাড়িতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। গোসল খানায় ভেজা কাপড় পরে থাকতে দেখে অনেকেই ধারনা করেন সে আবুল মিস্ত্রির হাত ধরে পালিয়ে গেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন একই সময় সেখানে মামুনের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে তাকে খোজ করতে থাকে। কিন্তু মামুন তার ফোন কল রিসিভ না করায় সে কোথায় আছে তা জানা সম্ভব হয়নি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামুন তার অটোরিক্সা নিয়ে এলাকায় ফিরলে এলাকাবাসী তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় মামুনের সারা শরীর ও মোবাইল ফোনটি ভেজা ছিল বলে স্থানীয়রা জানায়। তাৎক্ষনিক ভাবে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর এসে মামুনকে রক্ষা করে। সোমবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজিয়ার লাশের ছবির খবর প্রচার হলে মামুন ও তার মা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা মামুনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এসময় লস্করপুর এলাকার আব্দুল নামের এক নেতা মামুনকে ধরিয়ে দেওয়ায় রাজিয়ার পরিবারের লোকজনের উপর চড়াও হয় এবং তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে।
সোমবার রাত আট টার দিকে নবাবগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল জলিল মামুনকে শ্রীনগর থানা থেকে নিয়ে যায়। তিনি জানান, রাতে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। তিনি আরো জানান, থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় সে থানা হাজতের টয়লেটে গিয়ে পরনের লুঙ্গি খুলে ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে।
ঘাতক মামুনের মামা লস্করপুর এলাকার শাহ আলম জানান, মামুনের আত্মহত্যার পর তার বোনের স্বামী আবুল মিস্ত্রি আজ বিষপান করে আত্মহত্যা করে। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আবুল মিস্ত্রি ৩ সন্তানের জনক ছিলেন। সন্তানরা সবাই বিবাহিত।