বয়সে অনেক ছোট হলেও শেখ রাসেলের হৃদয়-মন ছিল অনেক বড়। মানুষের উপকার করার জন্য সে যেন সবসময় এক পায়েই দাঁড়িয়ে থাকতো। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের প্রতি তার ছিল গভীর ভালোবাসা। শুধুু তাই নয়, তার শিশু সূলভ সব আচরণ বা কর্মকান্ডের মধ্যে কেবলই সরলতাই নয়, আদর্শিক ও দার্শনিক একটা ভাবও ছিল। কোন বিষয়ে কঠিন অবস্থানে থাকলেও যুক্তি দিয়ে তাকে টলানো যেত।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলকে নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন, তার গৃহশিক্ষক বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গীতালি চক্রবর্তী । ১৯৭২-এর আগস্ট থেকে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তার গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি। সেই কালরাতের আগের প্রহরেও তিনি পড়িয়েছেন রাসেলকে যাকে আদর করে তিনি ডাকতেন বুঁচু। রাসেল তার শিক্ষককে সম্বোধন করতেন আপা, আপু এবং শেষ দিকে আপুমনি। খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছেন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব ও পরিবারের সদস্যদের। বিশেষ করে তার প্রিয় ছাত্র আদরের বুঁচিকে।
জন্মদিন সামনে রেখে শেখ রাসেলকে নিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন । গীতালি জানান, শেখ রাসেল ও তাঁর সম্পর্কটা ছিল এক বিচিত্র সুরে বাঁধা। পড়ানোর প্রথম দিনের স্মৃতিচারণ করে গীতালি বলেন, ‘সে দিন দোতলায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা (যাকে তিনি কাকিমা ডাকতেন) বেরিয়ে আসেন। তাকে দেখে হতবাক হয়ে যান গীতালি। তিনি বলেন, ‘কী সাধারণ! কোনো বিলাসিতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। পরনে ছিল হালকা ক্রিম কালারের পাড়ওয়ালা তাঁতের শাড়ি। শাড়িটি কুচি দিয়ে পরা। মাথায় ঘোমটা, হাতে দু’গাছা চুড়ি। মুখে পান। একটু পরে ছোট্ট রাসেল হাসি হাসি মুখে রমার সাথে বেরিয়ে এলো। বয়স ছয় কি সাড়ে ছয়, পরনে ছিল আকাশী রঙের ঘুমের পোশাক। মাথার চুল ছোট করে কাটা। কিছু কপালের ওপরে এসে পড়েছে, সিঁথির বালাই নেই।’
এসেই শিক্ষকের পাশের চেয়ারটাতে বসে রাসেল। রমার হাতে একটা স্কুলব্যাগ। রমা ব্যাগটা টি-টেবিলের ওপর রেখে দাঁড়িয়ে রইল উৎসুক চোখে। হয়তো বা নতুন ছাত্র ও নতুন টিচারের অবস্থা বোঝার জন্য। ‘ব্যাগ থেকে বই বের করে নিলাম আমি নিজেই। বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখেছি। দু-একটি প্রশ্ন ছিল সেদিন। যেমন- নাম, ক্লাস, কী কী করতে পারে? ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৫-২০ মিনিট পর রাসেলকে ছেড়ে দিলাম। ও হাসি হাসি মুখে ভেতরে চলে যাচ্ছিল। এর মধ্যে শ্রদ্ধেয়া ফজিলাতুন্নেছা বলে উঠলেন, ‘টিচারকে সালাম দিয়ে যাও।’ ও সালাম দিয়ে চলে গেল।’
তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের বাঙলা বিভাগের ছাত্রী। ১৯৭২ জুলাই কি আগস্ট মাস, তিনি তখন ছোট্ট রাসেলকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসাতেই পড়াতে যেতেন। শুধু পড়াশুনা নয়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এ ছাত্রশিক্ষকের মধ্যে ছিল খুনসুটি। পরিবারের যা জানতেন সবই শেয়ার করতেন প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে। আবার মান অভিমানও ছিল অনেক বেশি। গীতালি বলেন, ‘একদিন, বুঁচুকে ৫টি অঙ্ক দেয়া হয় করার জন্য। অঙ্কে ছিল ওর ভীষণ অনীহা। ৫টা অঙ্ক দেবার পর সে যখন অঙ্কগুলো করেছিল, তখন একটা অঙ্ক সাহায্য নিয়ে করা হয়েছিল বলে তিনি আরও একটা অঙ্ক করতে দেন। এতে বুঁচু ক্ষেপে গিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। একটু পরে সে মাকে সঙ্গে করে পড়ার ঘরে এলো। ঘরে ঢুকেই কাকীমা খুব রাগের সুরে গীতালিকে বললেন, ‘কি রে তুই না-কি রাসেলকে ৫টা অঙ্ক করার কথা বলে ৬টা অঙ্ক দিছিস?’ বলেই একটা চোখ টিপ দিলেন। এরপর বললেন, ‘এ রকম আর করবি না কখনও।’ আমিও মুখ ভার করে মন খারাপ করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।’
রাসেলের যখন পড়তে ইচ্ছে করত না তখন পড়ার জন্য জোর করলেই বলত, ‘কাল থিকা আপনি আর আসবেন না, আমি আপনার কাছে আর পড়ব না।’ গীতালিও ওর মতো মুখের ভাব করে বলতাম, ‘আচ্ছা আর আসব না। তবে, আজ যখন আসছি তখন কষ্ট করে একটু পড়। কাল থেকে আর আসব না। সেও বলত, ‘আসবেন না।’
তিনি বলেন, এরপরের ঘটনা আরও মজার ছিল। আসার সময় আমি সেই সিরিয়াস মুখ করে কাকীমাকে গিয়ে বলতাম, ‘কাকীমা কাল থেকে আর পড়াতে আসছি না, আজই শেষ।’ বলেই কাকীমাকে একটা প্রণাম করে ফেলতাম। রাসেল এ সময় কাকীমার শাড়ির ভেতওে লেপটে থাকত। ব্যাস শাড়ির ভেতর থেকে রাসেল কাকীমাকে ঠেলত আর বলত, ‘মা আসতে বল কালকে, আসতে বল।’ কাকীমা বলতেন, ‘গীতালি আসলে পড়বি তো, না কি?’ অপূর্ব অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সমাধান হয়ে যেতো সে মূর্হূতের নাটক। পরের দিন আবার পড়া চলত যথানিয়মে।
এক দিন শেখ রেহানার ঘরে রাসেলকে পড়াচ্ছিলেন তিনি। পড়ার মাঝখানে রোজ চা-জলখাবার দিয়ে যেত রমা বা ফরিদ। এরা দু’জনই বেশিরভাগ সময় চা-খাবারটা দিয়ে যেত। যেদিন চায়ের সাথে মিষ্টি থাকতো, সেদিন শুধু চা টাই খেতেন গীতালি। মাঝে মাঝে হয়তো বা একটা মিষ্টি খেয়ে নিতেন। হঠাৎ পড়তে পড়তে রাসেল জিজ্ঞেস করলো, আপা, আপনি এক দিনও মিষ্টি খান না কেন ? গীতালি বলেন,ক্যানো, খাইতো। জবাবে রাসেল বলে, মাঝে মাঝে খান। রোজ মিষ্টি খান না কেন ? আমি মিষ্টি পছন্দ করি না যে, তাই খাই না। রাসেলেরও তাৎক্ষণিক জবাব, ‘আমিওতো পড়তে পছন্দ করি না, তবে, আমারে রোজ রোজ পড়ান ক্যান?’পড়ার সংগে মিষ্টি খাওয়ার কি সম্পর্ক জানতে চাইলে দু’ঠোঁটে দুষ্টুমির মিষ্টি হাসি দিয়ে হাতের কাঠ পেন্সিলটা দু’আঙ্গুলের ফাঁকে, সেটা ডানে বামে দুলিয়ে দুলিয়ে বলে সম্পর্ক আছে। এসময় রাসেল রমাকে মিষ্টির প্লে¬টটা নিতে মানা করে বলে আপা মিষ্টি খাবে, তুই মিষ্টি নিবি না। তিনি মিষ্টিটা খাবেন না বলতেই রাসেল বলে আপনি মিষ্টি পছন্দ করেন না বলে মিষ্টি খান না, আমিওতো পড়তে পছন্দ করি না। তবে, আমিও পড়বো না, বলেই হাতের কাঠ পেন্সিলটা টেবিলের উপর রেখে বইখানা বন্ধ করে দেয়। এদিকে, মিষ্টির খবর কাকিমার কাছে যেতেই তিনি এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, রাসেল যখন কইছে, নে একটা মিষ্টি খা। না না, আপার দুইটাই খাইতে হবে, আবদার ছাত্রের। তা না হইলে তো আমি পড়বো না। রাসেলের এ ঘোষণার পর অগত্যা দুটো মিষ্টিই খেতে হয়েছিল সেদিন গীতালিকে। এর আগে পড়ালেখা কে আবিষ্কার করেছে, তা নিয়ে ছিল তার রীতিমত গবেষণা।
সাধারণ মানুষের প্রতি রাসেলের কেমন ভালোবাসা ও দায়িত্ব বোধ ছিল তার একটি ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরেছেন গীতালী। তিনি বলেন, তখন শীতের দিন। ৩২ নম্বরের পাশের বাড়িতে রাসেল নামে আর একটি শিশু ছিল। রাসেল প্রায় সময় তার সাথে খেলতো। এদিন এক বুড়ি পাশের বাড়িতে ভিক্ষা করতে আসেন। এসময় বাড়ি থেকে বলা হয়, ভিক্ষা নয়, বাড়ির কি একটা কাজ করে দিলে এক টাকা দেয়া হবে। বুড়ি রাজি হন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর বুড়িকে মাত্র ২৫ পয়সা দেয়া হয়। এতে তিনি কান্নাকাটি করতে করতে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এ ঘটনা কিশোর রাসেলের মনে সাংঘাতিক দাগ কাটে এবং কষ্ট দেয়। রাসেল সেই বুড়িমাকে পরম যত্নে তুলে এনে গেটের সামনে বসিয়ে রাখে। বলেন আব্বা (বঙ্গবন্ধু) এলে কথা বলিয়ে দিবেন। বিচার চাইতে হবে। তিনি বিচার করে দেবেন। দুপুরে তাকে খাবারও দেয়া হয়। এ দিকে শীতে বুড়িমার জুবুথুবু অবস্থা। কখন কি হয় বলা যায় না। কিন্তু রাসেলের এক কথা ‘আব্বা আসলে বিচার হবে। তার পর বুড়িমা যাবেন।’
গীতালি বলেন, এ অবস্থায় কাকিমা তাকে বলেন, তোর ছাত্র চারদিক থেকে জ্বালাচ্ছে। সকালে টিফিন, দুপুরে ভাত। তোর কাকা আসলে দেখা করিয়ে দিবে। কাকা কখন আসবেন ঠিক ঠিকানা নেই। তখন পর্যন্ত বুড়ি কী এই শীতে গেইটের সামনে বসে থাকবে? পরে সম্ভবত ‘বেশি টাকা দেয়া হবে, এই প্রস্তাবে রাসেল বুড়িকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। তবে, আব্বা এলে বুড়ির পক্ষ থেকে এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বিচার চাওয়া হবে বলে জানান দিয়ে রাখে সে।
কোল্ডড্রিংকস বিশেষ করে কোকের প্রতি রাসেলের ছিল সাংঘাতিক দুর্বলতা। প্রতিদিন একটি করে কোক তার জন্য বরাদ্ধ থাকতো। তবে, প্রতিদিন যাতে রাসেল কোক না খায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করতেন গীতালি। বুঝাতেন কোকে দাঁত নষ্ট হয়ে যায়। আরো আরো অনেক ক্ষতি হয়। পরে সিদ্ধান্ত হলো প্রতিদিন খাওয়া হবে না। যেদিন খাবেন অর্ধেক। আর শর্ত দিল গীতালিকে বাকী অর্ধেক খেতে হবে। পরের দিকে দেখা যেতো ফ্রিজে কোক থাকতো না। শেখ জামাল ফ্রিজে রাখা রাসেলের জন্য বরাদ্ধকৃত কোক কখনো কখনো খেয়ে ফেলতেন। এ নিয়ে রাসেল ‘জামাল ভাইয়া তার কোক খেয়ে ফেলে,’ এমন অনুযোগ করতো আপুর (গীতালি) কাছে। একসময় জামাল ভাইয়ের কোক খাওয়া বন্ধের জন্য অভিনব এক পন্থা আবিষ্কার করে রাসেল। নিচে নেমে লাউ গাছের বড় পাতা ছিড়ে এনে, তা দিয়ে ঢেকে রাখতেন কোকের বোতল। যাতে জামাল ভাইয়া দেখতে না পান এর ভেতর কোক আছে।
এর পরেই গীতালি কোক এবং রাসেলকে নিয়ে তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টের গল্পটি বর্ননা করেন । যে ঘটনা আজও তাকে আপ্লুত করে । মনে হলে ভারাক্রান্ত হন তিনি। বেদনায় নীল হয়ে যান। মাঝে মাঝে নিজেকে অভিসম্পাতও দেন । ঘটনাটা পঁচাত্তরের ১৪ আগস্ট। এদিনেই ছিল রাসেলকে পড়ানোর শেষ দিন। পরের দিন আর শুযোগ হয়নি পড়ানোর। কারন এদিন কাল রাতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মত এই নিষ্পাপ শিশুকেও ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়।
এদিন, সন্ধ্যার আগে গীতালি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পড়াতে যান তখন রাসেল বাড়িতে ছিলেন না। মায়ের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। গীতালি একা একা অপেক্ষা করছিলেন। একটা সময় চলে যাওয়ার কথাও ভাবেন। এমন সময় বঙ্গবন্ধু উপরে এসে স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে বলে উঠেন, ‘মাস্টার তুই একা কেন। ছাত্র কোথায়?’ বঙ্গবন্ধু গীতালিকে মাস্টার বলে ডাকতেন। রাসেল বাড়িতে নেই শুনে তিনি গীতালিকে নিচে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি আছে, তাতে করে চলে যাওয়ার কথা বলেন। তখন রমা বলে রাসেল আপুকে থাকতে বলেছেন। এসে পড়বে। বঙ্গবন্ধু তখন ফোন করে জেনে নেন এবং গীতালিকে আবার উচ্চস্বরে বলেন ‘মাস্টার তোমার ছুটি নাই। তোমার ছাত্র আসতেছে।’
গীতালি জানান, এসময় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বড় কোন মিটিং হচ্ছিল। একটু পরে রাসেল বাড়িতে আসে। গীতালি সাধারণত শেখ রেহানার ঘরেই রাসেলকে পড়াতেন। শেষ পড়ানোটা হয়েছিল সম্ভবত শেখ রেহানার কক্ষে। পড়তে এসেই রাসেল আপুকে জানায় ‘ওদিনতো কোক খাইতে দেন নাই। আইজ কোকটা আনি?
সেদিন রাসেলকে কোকটা খেতে দেয়া হয়নি। পরের দিন খাওয়ার কথা বলা হয়। পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। তবে, কোক খাওয়া না হলেও শাস্তি হিসাবে দুটো কানমলা খেতে হয়েছিল রাসেলকে। কানমলা এবং কানধরে উঠবস করার শাস্তিটাও কিন্তু রাসেল নিজেই নির্ধারণ করেছিল। তবে, কথা ছিল শাস্তির সময় দরজা বন্ধ থাকবে এবং বড়রা যাতে কেউ না দেখে। গীতালি বলেন, রাসেল যখন নিজেই নিজেই কানমলা দিত তখন কান লাল হয়ে যেতো। কখনো ফাঁকি দিতে চাইতো না। এজন্য গীতালিই বেশির ভাগ কান মলে দিতেন। ’৭৫-এর ১৪ আগস্টের এ রাতেও অংক ভুল করে রাসেল। এজন্য কানমলা না কানধরে উঠবস করতে হবে জানতে চায় রাসেল। গীতালি বলেন, তিনিই কানমলা দেবেন। রাসেল তখন হাসতে হাসতে বলে, আপনার কান মলাতো পিপড়ার কামড়ের মত। কোন ব্যথাই পাওয়া যায় না।’
গীতালি জানান, এদিন তিনি মোট দুটো কানমলা দিয়েছিলেন রাসেলকে। রাত সাড়ে ১১টায় তিনি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে রওনা দেন। সে রাতে তিনি ৭ নং মিন্টুরোডে তার জ্যাঠামশায় তখনকার খাদ্যমন্ত্রী ফণিভূষন মজুমদারের বাসায় অবস্থান করেন। ৩২ নম্বর ছাড়ার আগে ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, এ বাড়িতে এটাই তার শেষ পদচিহৃ। নতুন মন্ত্রীপরিষদ গঠনের পরেই তিনি পুরো ঘটনা জানতে পারেন। এর আগে তিনি ফণিভূষণের বাসায় হাউজ এরেস্ট অবস্থায় ছিলেন। ভোরে সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণ হয়েছে শোনার পর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে টেলিফোন করেছিলেন গীতালি। কিন্তু কেউ ধরেনি। গীতালি বলেন, তখনো তার বিশ্বাস ছিল রাসেল, দুই বউ এবং শাশুড়ি বেঁচে আছেন।
অনেক বড় একটা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে গীতালি বললেন, তবে কি জানেন, রাসেলের সেই লাউপাতায় মোড়ানো কোকাকোলার কাচের বোতলটি কিন্তু ছিল অক্ষত। যা পরে ফ্রিজে পাওয়া গেছে। এর পরেই টেলিফোনের ঐ প্রান্ত স্তব্দ। আর কোন সাড়াশব্দ নেই। চাপা চাপা একটু কান্নার রেশও মনে হয় তখন ছিল। হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার আকাশ জুড়ে তখন বৃষ্টি ছিল। গীতালীও হয়তো সেই অঝোর ধারা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিলেন।