#সামাজিক আন্দোলনের সাথে রাজনীতি করার কোন ভিত্তিই নেই: ফাইয়াজুল হক রাজু।
#সামাজিক আন্দোলনে রাজনৈতিক কূটকৌশল বয়কট করতে হবে: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
#সরকারের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা আছে বলেই দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে: সাজ্জাদ আলম খান তপু।
প্রকাশ: শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১০:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সম্প্রতি দেশে হয়ে যাওয়া কিছু বর্বরিত ঘটনা গুলো আমাদেরকে খুবই মর্মাহত করেছে। ধর্ষকদের ক্ষেত্রে কোন মানবাধিকারের আশ্রয়ের প্রশ্নই আসেনা। এদের স্তব্ধ করতে হবে, এদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণবিরোধী যেসব আন্দোলন হচ্ছে, এই আন্দোলন যদি রাজনীতির দিকে প্রবাহিত করা হয় তাহলে আমাদের মা-বোনদের সাথেই প্রতারণা করা হবে। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১২৩ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। শনিবার (১০ অক্টোবর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, গত কিছুদিন ধরে দেশে হয়ে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক ও পৈশাচিক ঘটনাকে নিয়ে ফেসবুক সহ আরও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াই আমরা একটা আন্দোলনমুখী গ্রুপ দেখতে পাচ্ছি। এটা একটা ভালো দিক কারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে। আমাদের সমাজের একটা বড় দিক যদি সচেতন হয় এবং সোচ্চার থাকে তাহলে সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, ন্যায়-পরায়নতার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং এতে করে সরকার উদ্যমী হয়ে ভালো কাজের দিকে এবং জনবান্ধব যেসব নিয়মনীতি আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর থাকে। এটাই গণতন্ত্রের রীতি-নীতি। আমি নিজেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, আমি লিখেছি ধর্ষকের কোন দল থাকতে পারেনা, কোন সংঘটন থাকতে পারেনা। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাবো গত কিছুদিন ধরে দেশে ১৩টি ঘটনা ঘটেছে কিন্তু মাত্র দুটি ঘটনাই বেশী হাইলাইট হচ্ছে কারণ এই দুটি ঘটনার সাথে একটি ছাত্র সংঘটন জড়িত আছে। এই ছাত্র সংঘটন সোজা কথা বলতে এই ছাত্রলীগে কিন্তু সবাই ভালো তা নয় কারণ গত দশ বছরে অনেক ব্যত্যয় ঘটেছে এই সংঘটনে এবং এটা কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা অস্বীকার করছেন না। সাধারণ মানুষ এইসব আন্দোলনে যা বলছে আমি কিন্তু তাদের বিপক্ষে না, কিন্তু এইসব আন্দোলনে তাদেরকে মিসগাইড করে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক না। এই যে আরও ১১টি ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে চার্চের ফাদার, মসজিদের মোয়াজ্জেম, ৭০ বছরের বৃদ্ধ সহ আরও যে ঘটনা ঘটেছে এইগুলোও কিন্তু জঘন্যতম অপরাধ। আমরা যদি একচোখা নীতি অবলম্বন করি তাহলে কিন্তু বাকী ঘটনাগুলো হারিয়ে যায় সহজে। মূল যে সামাজিক ব্যাধিটা রয়েছে তা কিন্তু ঠিকয় রয়ে যাচ্ছে। আমাদের যারা সুশীল কুশীলবরা রয়েছে তারা কিন্তু অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। এই আন্দোলনের সাথে রাজনীতির কোন ভিত্তিই নেই। আপনি রাজনৈতিক মতামত দিতে পারবেন, রাজনৈতিক নির্দেশনা দিতে পারবেন, রাজনৈতিক চাওয়া জানাতে পারেন কিন্তু এটার সাথে সরকারকে উপড়ে ফেলার চিন্তাভাবনা, সরকারের পতনের চিন্তাভাবনা করছে তা মোটেও উচিত না।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সময়ে ধর্ষণ একটি ইস্যু হয়ে সামনে চলে এসেছে। আমি প্রথমেই সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চায় এই জন্য যে, এমসি কলেজ ও বেগমগঞ্জের ঘটনার সাথে জড়িত সকলকেই দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের অধীনে নিয়ে আসার জন্য। শুধু এই ঘটনাগুলোই নয়, সরকার অন্যান্য এইসব ন্যাকারজনক যে ঘটনা গুলো ঘটেছে যা আমরা সোশ্যাল মিডিয়া বা গণমাধ্যমে দেখতে পেয়েছি, সেগুলোকেও সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জায়গায় সব থেকে বেশী সফল যে তিনি জনগণের ইম্পালস বুঝে দ্রুততম সময়ে এইসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পাশাপাশি তিনি আরও একটি জায়গায় ধন্যবাদ প্রাপ্ত এই জায়গায় যে, আগামী সংসদ অধিবেশনে তিনি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পাস করতে যাচ্ছে। আমরা সব জায়গায় দেখি অনেক সামাজিক আন্দোলনের সাথে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ছে যা মোটেও ঠিক না। সবার একটা রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে, একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়ের যে বিষয়গুলো রয়েছে সেক্ষেত্রে সবার একটা সুনির্দিষ্ট আদর্শ থাকতে হবে। যখন এই ধর্ষণের ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছে, বিক্ষোভ হচ্ছে তাতে আমরা স্বাগতম জানাচ্ছি তাদের প্রতি কিন্তু আমরা গণমাধ্যমের দ্বারা দেখতে পাচ্ছি যে, সেখানে কিছু কুৎসিত ভাষায়, বাংলাদেশের সরকার ও সরকার প্রধানকে নিয়ে যেসব আজে-বাজে কথা বলা হচ্ছে এই আন্দোলন, বিক্ষোভ, মানুষের আবেগকে অন্যদিকে প্রবাহিত করছে। আমরা প্রায়সময় দেখি কিছু মানুষ এইসব সামাজিক আন্দোলনকে ষড়যন্ত্রে দিকে প্রবাহিত করছে বা লিপ্ত হচ্ছে যা মোটেও ঠিক না। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোঠা বিরোধী আন্দোলনেও আমরা ঠিক এই একই ষড়যন্ত্র দেখতে পেয়েছি। এখন যে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে, এই আন্দোলনে যদি রাজনীতির দিকে প্রবাহিত করা হয় তাহলে আমাদের মা-বোনদের সাথেই প্রতারণা করা হবে। সুতরাং, রাজনীতি কূটকৌশল না করে, এইসব ধর্ষকের বিচার যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে পারে সেক্ষেত্রে সবাইকে একত্রিত হয়ে এইসব সামাজিক আন্দোলনে সুশৃঙ্খলভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।
সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, এই যে ধর্ষণের সাথে জড়িত অপরাধীদের এতো দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করেছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, অতএব বুজাই যাচ্ছে যে সরকারের স্বদিচ্ছা আছে বলেই তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের মনস্পটে এটাই কিন্তু সর্ব প্রথম এসেছে যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের স্পন্দন নিয়ে ঘটিত হয় যে সরকার সেটার জন্য সরকার জনবান্ধব নীতি কাঠামো তৈরি করে। সেজন্য কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই আমাদের আইনমন্ত্রী কিন্তু ঘোষণা দিয়েছেন আগামী সোমবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য এই আইনে একটি সংশোধনী আনা হচ্ছে। এরপর থেকে দেখা যাচ্ছে এটাকে কেন্দ্র করে একটি রাজনীতি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। এর সাথে কেউ কেউ সরকার পতনের কথা বলে আত্মতৃপ্তি নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ হয়তো আমাদের এই মুজিব কোর্টকে পদদলিত করে নিজেকে উচ্চ আসনে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের পতন ঘটানো, সামাজিক অবক্ষয়ের পতন ঘটানো না। যেকোনো বিষয়ের সাথে নিজের এইসব ইচ্ছাগুলো জড়িয়ে দিয়ে তাদের যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা বাস্তবায়ন করায় হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ। সরকারের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা আছে বলেই দ্রুত অপরাধকারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।