ইউরোপে দ্বিতীয় ধাপে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় বিশ্ববাজারে আবারও সোনার দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে সোনার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবারই বেড়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এতে আবারও আউন্সপ্রতি সোনার দাম ১৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার সঙ্গে রুপার দামও বেড়েছে। শুক্রবার রূপার দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এতে সপ্তাহজুড়ে এই ধাতুটির দাম বাড়ল ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারি করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম অস্থির হয়ে ওঠে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সুদের হার কমানোয় এবং নির্বাচনের আগে আমেরিকা ডলার শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালানোয় মধ্যে সোনার দামে পতন ঘটে। কিন্তু এখন ইউরোপে দ্বিতীয় ধাপে মহামারি করোনাভাইরাস প্রকোপ বাড়ায় আবার সোনার দাম বাড়ছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ায় চলতি সপ্তাহেই দেশের বাজারেও দাম বাড়তে পারে বলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী সোমবার দেশের বাজারেও বাড়ানো হবে সোনার দাম।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিলো। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড ২ হাজার ৭৪ ডলারে ওঠে।
বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট দেশের বাজারে বাড়ানো হয় সোনার দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের সোনা ৭৪ হাজার ৬৬, ১৮ ক্যারেটের সোনা ৬৫ হাজার ৩১৮ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
৭ আগস্ট থেকে পতনের কবলে পড়ে উড়তে থাকা সোনার দাম। ১১ আগস্ট এসে বড় পতন হয় সোনার দামে। একদিনে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এর পরও চলতে থাকে সোনার দরপতন। এতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে ১ হাজার ৮শ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম পতনের মধ্যে পড়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারেও সোনার দাম কমানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের সোনা ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের সোনা ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে রেকর্ড করোনা রোগী শনাক্তের দিনে বিশ্ববাজারে সোনার দামেও বড় লাফ দিয়েছে। একদিনে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৫ দশমিক ৭৬ ডলার বা ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। এতে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১৯২৮ দশমিক ৮৫ ডলার।
সোনার দামের বড় উত্থানের দিনে রূপার দামেও বড় উত্থান হয়েছে। শুক্রবার প্রতি আউন্স রূপার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ ডলার বা ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মাধ্যমে প্রতি আউন্স রূপার দাম বেড়ে ২৪ দশমিক ৯৮ ডলারে উঠেছে।
যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গণমাধ্যমে বলেন, ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, কেউ ধারণা করতে পারছে না। অপরদিকে আমেরিকার নির্বাচনও কাছে চলে এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে সোনার যে দাম বেড়েছে তাতে বাংলাদেশে ভরিতে ৪ হাজার টাকা বাড়ানো উচিত। সোনার দাম বাড়ানোর জন্য আমার ওপর এক প্রকার চাপ আসছে। আমরা আগামী সোমবার দেখবো। যদি সোমবারও বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে দাম বাড়ানো হবে।
ভোরের পাতা/এএম