রাখাইনদের উপর বর্মী সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশী রাখাইনদের মানববন্ধন
আরাকানে জাতিগত রাখাইনদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটের প্রতিবাদে আগামীকাল ঢাকায় বিশাল মানববন্ধন করবে রাখাইন কমিউনিটি অভ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বসবাসকারী সাত শতাধিক রাখাইন সম্প্রদায়ের জনগণ এই মানববন্ধনে অংশ নেবে। আগামীকাল ১১ অক্টোবর (রবিবার) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল এগারোটায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে বলে আয়োজকদের তরফ থেকে বলা হয়েছে।
রাখাইন কমিউনিটি অভ বাংলাদেশের মানববন্ধন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ক্যংঞিং পার্বত্যনিউজকে বলেন, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরগুনা ও পটুয়াখালি জেলার ৭ শতাধিক রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেবে। এদের মধ্যে রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব, ভান্তেগণ, মহিলা ও শিক্ষার্থীগণ রয়েছে।
মানববন্ধনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাখাইন কমিউনিটি অভ বাংলাদেশের আহ্বায়ক ক্যাঞিং পার্বত্যনিউজকে বলেন, আরাকানে বসবাসকারী জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায় ও আমরা ভাষা, ধর্ম ও জাতিগত দিক থেকে অভিন্ন সত্ত্বা। তাছাড়া আমাদের অনেকের পূর্বপুরুষ অতীতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসে বসবাস করেছে। তাই আমাদের অনেক জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও আত্মীয়-স্বজন সেখানে বসবাস করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের উপর যে গণহত্যা ও নারকীয় নির্যাতন চালাচ্ছে তা আমরা মুখ বুঁজে দেখে যেতে পারি না। তাই বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সেই নির্যাতন বন্ধে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
মানব বন্ধনের অন্যতম আয়োজক মং চিৎ হ্রি পার্বত্যনিউজকে বলেন, অনেকেই মনে করেন রাখাইনে শুধু রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এটা মোটেই ঠিক নয়।রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইনে জাতিগত বুড্ডিস্ট রাখাইনদের উপরও সমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। মূলত বার্মিজ সামরিক জান্তা রাখাইনে জাতিগত মুসলিম রোহিঙ্গা ও বুড্ডিস্ট রাখাইনদের অস্তিত্ব মুছে ফেলে বার্মিজদের স্যাটেল করাতে চায়। বার্মিজ সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই আমরা জাতিগত রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সোচ্চার হয়েছি।
মানববন্ধন আয়োজকদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় বলা হয়েছে, আমরা সচেতন নাগরিক পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের হোক না কেন যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন পূর্বক কর্মকাণ্ড কেউ যদি করে থাকে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা অথবা নিন্দা জ্ঞাপন করার সেই অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে আছে। তাই আমরা ঢাকার রাজধানীর বুকে শাহাবাগ চত্বরে এসে মানববন্ধন এই কারণে করছি যে, আমাদের পার্শ্বের রাষ্ট্র মিয়ানমার রাষ্ট্র, এই মিয়ানমার রাষ্ট্রের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। মিয়ানমার রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীরা কোভিড ১৯ এর অজুহাত দেখিয়ে সমগ্র দেশে লকডাউন ঘোষণা করে।
১। কোভিড- ১৯ কে প্রদর্শনপূর্বক ঘরবাড়ি হতে বাহির হতে না দেওয়া ও চলাফেরা উপর নিষেধাজ্ঞা জারী।
২। বর্তমান রাখাইন প্রদেশের সকল প্রকার ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়, কারণ রাখাইন প্রদেশের সকল প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিচ্ছন্ন করা এবং সকল গণহত্যর সংবাদ গোপনীয় রক্ষা করা একমাত্র তাদের উদ্দেশ্য।
৩। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীরা সু কৌশলে এবং পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে নির্যাতন, ধর্ষণ, লুন্ঠন, গুলিবর্ষণসহ বসতবাড়ীগুলোকে অগ্নিসংযোগ।
৪। বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমার রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীরা অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করাসহ সকল উসকানিমূলক কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে।
এই সকল কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার লক্ষে আমাদের এই মানববন্ধনের আয়োজন। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগের কারণে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ রাখাইনে জনগণ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায্য সংস্থাগুলোকে রাখাইন প্রদেশে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ করার প্রেক্ষিতে যার কারণে খাদ্য, ঔষধ, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার থেকে মানবিক বিপর্যয় চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মিয়ানমার রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর বার্মিজ সৈন্যরা অত্যাচার, নির্যাতন আজ থেকে নয় সেই ১৭৮৪ খ্রিঃ থেকে কুখ্যাত বার্মিজ সমর নায়ক মংওয়ান এর নেতৃত্বে তৎকালীন রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী জনগণকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্য করা হয়েছিল। এমনকি কোন ধর্মীয় স্থাপনা পর্যন্ত রেহাই পাই নাই। বর্তমান যা আজও বিদ্যামান। এরূপ অত্যাচার, জঘন্যতম অপরাধ কর্মকাণ্ড এবং মানবতা লংঘনকারীর বিরুদ্ধে আমরা যদি প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন না করি তাহলে তারা এই অমানবিক কর্মকাণ্ড আরও অব্যাহত থাকবে।
সেহেতু আমরা ঢাকা রাজধানীর বুকে সমাবেত হয়ে মিয়ানমার বর্বর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাজ্ঞাপন করতে বাধ্য হয়েছি। সুতরাং আমরা বিশ্ববাসী এবং জাতিসংঘ এর নিকট দাবি জানাতে চায় যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকার এর নির্যাতন ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, গুলিবর্ষণ, গ্রামের বসতবাড়ীর উপর বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ, জাহাজ থেকে ভারী বোমা নিক্ষেপ ও জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা এই সমস্ত অত্যাচার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।তার সাথে সাথে আরও আবেদনসহ দাবি জানাচ্ছি যে, ইউরোপিয়ান কমিশনসহ রাশিয়া, চায়না, আশিয়ান এবং সকল বিশ্ববাসীকে বলতে চাই, এইরূপ অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনি / আপনারা অতিসত্তর যদি কিছু বিহিত ব্যবস্থা না করেন তাহলে রাখাইন প্রদেশের সকল জনগণ অচিরেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আমাদের ধারণা।
ভোরের পাতা/এএ