মালাউনের মেয়েকে ধর্ষণে পাপ নেই, মালাউন হত্যায়ও পাপ নাই । ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতের মানুষের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল তখন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল এমনটাই। কারণ রাষ্ট্রীয় মদদে ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট করলে ধরা পড়ার ভয় নেই, শাস্তির ভয় নাই। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে কমপক্ষে ২ শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। গোপনে কত ধর্ষণ, অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে তা কল্পনাতীত। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা জনবিচ্ছিন্ন দলটির প্রধান যখন দুর্নীতির দায়ে কারাবরণ করে তখন সেই দলের পক্ষ থেকে ধর্ষণের জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টায় ব্যস্ত। কিন্তু তারা তাদের দলের অতীতকে সম্পূর্ণরূপেই ভুলে গেছে এমন একটা ভাব করছে। যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষক যে দলেরই হোক না কেন, তাকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিচারও হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করারও উদ্যোগ নিয়েছেন। পক্ষান্তরে, বিএনপি-জামায়াত সরকার রাষ্ট্রীয় মদদে সংগঠিত ২ শতাধিক ধর্ষণের ঘটনায় কোনো বিচারই করেনি।
চলুন, দেখে নিই কয়েকটি ঘটনা যা বিএনপি-জামায়াত সরকারের সরাসরি মদদে ঘটেছিল:
পূর্নিমা রানী শীল। বয়স কতোই বা হবে? সবে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ছে। সবে নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি জামাট জোট সরকার জয়ী হয়েছে । চাপ পড়ছে হিন্দু পাড়াগুলোর ওপরে। মালাউনের বাচ্চা রা সব নৌকায় ছাপ মারছে। পূর্নিমা সেই রাতে বাড়িতেই ছিল। সদ্য বিজয়ী স্থানীয় নেতা রা হামলা করলো ওই মালাউনদের ছবক শেখাতে। ছবক যখন শেখাবে, বাদ যাবে কেন পূর্নিমা? মায়ের সামনেই ধর্ষণ করলো তাকে। এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা বলছিলো "বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, মরে যাবে।"
আসলেও তাই, ওতটুকু মেয়ে, ১০-১২ জনের এক দল যদি পালাক্রমে ধর্ষন করে, তবে মায়ের বাচার আশা নিয়েই শংকা করতে হয়। অসহায় বাবা দেখলো মেয়ের ধর্ষণ, মা আকুতি করলো। ধর্ষিত পূর্ণিমা অবশ্য সে রাতে মরেনি। আমাদের ধর্ষিত বোন পূর্নিমার ১১ বছর অপেক্ষো করতে হল তার সম্ভ্রম হারানোর বিচার পেতে। তখন তার মামলাও নেয়া হয়নি।
আচ্ছা, আপনাদের কি ছবি রানীর কথা মনে আছে? তিনি একজন সামান্য আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলেন। বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ শে অগাস্ট তৎকালীন জোট বাহিনীর ক্যাডার দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ক্যাডার ছবি রানীকে বাস স্ট্যান্ড থেকে কাপড় খুলে ফেলে। এর পর তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর একের পর এক ক্যাডার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হতে থাকেন। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। ছবি রানী যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন পাশের দোকানে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা বিড়ি ফুঁকছিল। তার চিৎকারে সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, পুলিশ ও সেদিন ফিরেও তাকায়নি। ছবি রানীকে বাঁচাতে সেদিন কেউ আসেনি। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে চলে যাবার পরে ছবি কোন মতে উঠে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। পাশের চায়ের দোকানদার খিতিশ সাহা তাকে সেই মুহূর্তে খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করান। খবর পেয়ে তৎকালীন এম পি বর্তমান খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সেখানে ছুটে যান। ছবির অবস্থা আশংকাজনক জেনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে খুলনায় ছুটে যান সেখানে। তিনি ছবির উচ্চ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনের বিদেশে নেবার কথা বলেন এবং দলের পক্ষ থেকে তিনি চিকিৎসা খরচ বহন করতে নির্দেশ দেন। ছবিকে খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবং উন্নত চিকিৎসায় তিনি খানিক সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ওই বছরই বাগেরহাটের যাত্রাপুরের ঠাকুর বাড়িতে এক রাতে ২৩ জন গৃহবধূকে জোট ক্যাডাররা ধর্ষণ করে। এবং সেখানে দুটো হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এটা কোন পরিসংখ্যান নয়। এরুপ হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায় জোট সরকার দ্বারা নির্যাতিত হন তৎকালীন সময়ে। সারা বাংলাদেশে তখন হিন্দুদের জন্য আতংকের দেশ হিসেবে পরিণত হয়।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালে, অনেকে মামলা করেছে। অনেকে সে সাহসও পায়নি। অনেকে আবার লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনাও গোপন রেখেছে। এ জাতীয় অসংখ্য ঘটনা রয়ে গেছে লোকচৰুর অন্তরালে। ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী ভোলার চরফ্যাশনের সহিংসতার কিছু চিত্র আপনাদের মনে করিযে দিতে চাই। দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস যাবত চলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, বিশেষে করে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন, এমনকি সংবাদ মাধ্যমও নির্যাতনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোন অভিযোগ পর্যন্ত করেনি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারের মহিলারা ধর্ষিত হওয়ার পরও আইনের আশ্রয় নেয়নি বা বিষয়গুলো গোপন রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানলেও বা অনুমান করলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তা স্বীকার করেনি বা মৌন ছিল। ঘটনার ৯ বছর পর তদন্ত কমিশন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে অজানা অনেক নির্যাতনের কাহিনী তুলে এনেছে। ভুক্তভোগীরা অনেকে ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কেউ কেউ লিখিত বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে। এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন বলে অনেকে তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখতে তদন্ত কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। অনেকে নির্যাতনের পর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ বা দেশ ত্যাগ করেছেন। এমন অসংখ্য ঘটনার কয়েকটি মাত্র ঘটনা তুলে ধরা হলো।
চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জের উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের টিকেন্দ্র চন্দ্র দাস ওরফে আইচা রাম দাসের স্ত্রী অমীয় রাণী দাস বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় অবস্থান করছে। নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর চারদলীয় জোটের কিছু সন্ত্রাসী রাতে তাদের বাড়িতে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। এ সময় দশম শ্রেণী পড়ুয়া তার কন্যা শিল্পীকে সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা শুরু হওয়ার পর শিল্পীর পিতা-মাতা তাকে দাসকান্দি গ্রামে চাচার বাড়ি পাঠায়ে দেয় বলে সন্ত্রাসীরা তাকে সে রাতে পায়নি। তবে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িঘর লুটপাট করে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং মেয়েকে ফিরিয়ে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর পরিবারটি দুই মাস বাড়িছাড়া ছিল। পরে ভিটেমাটি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। উত্তর চরফ্যাশনের রঞ্জন কুমার দাসের স্ত্রী শোভা রানী দাস তদন্ত কমিশনকে জানায়, নির্বাচনের পরপরই কিছু সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাকে মারপিট করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নেই এবং অভিযোগ করতে রাজিও নয়। তার কথায় প্রতীয়মান হয় সন্ত্রাসীদের অনেককেই সে চেনে। কিন্তু নাম বলেনি। সে আরও বলে, আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় সকল বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে এবং অনেক মহিলা এ সময় ধর্ষিত হয়।উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের সুনীল কুমার রায়ের স্ত্রী আরতী বালা রায় জানায়, নির্বাচনের পর লুটপাট ও অত্যাচার শুরু হলে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ঘরের তেমন কিছু ক্ষতি না হলেও ৩৫টি হাঁস সন্ত্রাসীরা নিয়ে যায়। আরতী আরও জানায়, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে এলাকায় ফিরে জানতে পারে শোভা রানী সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিনাশ কুমার দাসের স্ত্রী সুজলা রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, নির্বাচনের পর সন্ত্রাসী দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কয়েক মাস পর তারা বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। তাদের বাড়ি মোট দুই দফায় আক্রমণ হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলার নাকের নাকফুল নিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঢুকে তারা তল্লাশি চালায় এবং সোনা-গহনা, হাঁস-মুরগি, গরম্ন-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। উল্লেখ্য, ওই এলাকায় নাকফুল নেয়ার অর্থ হলো মহিলার সম্ভ্রমহানি। পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে ধানৰেতে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং জোঁকের কামড়ের শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা মূলত সন্ধ্যার পর বাড়িঘরে আক্রমণ শুরু করত। এ ঘটনায় পরিবারটি ক্ষোভে, লজ্জায় বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি।
একই গ্রামের বলরাম দাসের স্ত্রী কণিকা রানী দাসের ব্যাপারে জানা যায় তাদের বাড়িতে ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর রাতে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে মালামাল লুট করে এবং তার সম্ভ্রমহানি ঘটায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় তারা পুলিশকে কিছু জানানোর সাহস পায়নি। অমর চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্যাণী দাস সম্পর্কে জানা যায়, গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িতে এসে ধান-চাল, জামাকাপড়সহ বাড়ির সকল মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা তার মেয়ের খোঁজ করে এবং মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেখানে নেই এ কথা শুনে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর সামনে কল্যাণীকে ধর্ষণ করে। স্বামী বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে উপযুপরি ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পরও ভয়ে ও লোকলজ্জার ভয়ে তারা থানায় কোন অভিযোগ করেনি। আসামিদের নাম বলতেও অস্বীকৃতি জানায়। সন্তোষ কুমার দাসের স্ত্রী শেফালী রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার বাড়িতে প্রবেশ করে। সন্ত্রাসী আক্রমণের বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন নিকটবর্তী বাজারে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। সন্ত্রাসীরা বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে চলে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে তারা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর রাতে আর একদল সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। এ সময় স্বামী-স্ত্রী দুজনকে তারা বেদম মারপিট করে এবং অবশিষ্ট মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় সন্ত্রাসীরা মুখে কাপড় বেঁধে আসে। এ ঘটনার কিছুদিন পর তারা সকলে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছে।
এছাড়াও প্রকৃতি রানী দাস, স্বামী লিটন দাস; রীতা রানী দাস, স্বামী-সুব্রত দাস; শোভা রানী দাস, স্বামী নিরঞ্জন দাস; শেফালী রানী দাস, স্বামী সন্তোষ কুমার দাস, সর্বসাং দশনাথ আলীগাঁও, উত্তর চরফ্যাশন, কর্তারহাট; ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতনের কারণে ক্ষোভে, ভয়ে, লজ্জায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। ঝর্ণা রানী দাস, স্বামী-সুনীল কুমার দাস, সাং-দশনাথ আলীগাঁও, বাড়িঘর ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এর কেউই বর্তমানে চরফ্যাশনে বসবাস করে না। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, নির্বাচনের পর চারদলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট ও মারধর করে। বাড়ির মহিলারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানায়। এলাকার অনেক পরিবারই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। কিন্তু ভয়ে কিংবা পুনরায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আক্রমণের শিকার হতে হবে মনে করে অধিকাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগ করছে না, আগেও করেনি
২০০১ সালে পূর্ণিমা শীলদের মতো শুধু যে সংখ্যালঘুদের ধর্ষণ করেছে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা তা ঠিক নয়। তারা নফুজা, রহিমাদের ধর্ষণ করা হয়েছিল শুধুমাত্র নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিসংখ্যানের ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ছাত্রদলের সীমান্ত, মিতুলরা। এরপর ধর্ষণ করেছিল। মেয়েটি আর কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। দিনাজপুরের ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার পর তার লাশের ওপর পা দিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চীনে গিয়েছিল বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগ দিতে। বিএনপি কখনোই এসব ধর্ষণ হত্যার বিচার করেনি। এখন সরকারের অনুকম্পায় জামিনে থাকা খালেদা জিয়া এবং তার দল বিএনপির নেতারা ধর্ষণের জন্য সরকারকে দায়ী করছে। অন্যদিকে সরকার দেশের জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পেরে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাব্বজীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করার উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে কোনোরূপ ধন্যবাদ না জানিয়ে, তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই ব্যস্ত।
অক্টোবরের ২০০১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এবং জামায়াত জোট হিন্দুদের উপর যে আক্রমণ করে তার বিভিন্ন খবরে ও প্রতিবেদনে অনেকবার উঠে এসেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট মতে, “২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভোট না দেয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামাত জোট একের পর এক হামলা করতে শুরু করে, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিলো যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারেরা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। নির্বাচনের পরের অবস্থা ছিলো আরো পরিকল্পিত, ছকবদ্ধ এবং গুরুতর। প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় সেসময় বিএনপি জোটের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিলো বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা ও নরসিংদী। ওই সময় আক্রমণকারীরা হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর, তাদের সম্পত্তি লুটপাট এবং অনেক হিন্দু নারীদের ধর্ষণও করে।”
ওইসময় ধর্ষণ সহিংসতা এবং ভয় দেখানোর প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনের মতে,ওই সময় হয়ত ১০০ জন নারীকে ধর্ষণের শিকার হয়। বিভিন্ন রিপোর্টের মতে এই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মীরাই দায়ি। ওই সময় কয়েকজন হিন্দু মেয়েকে অপহরণও করে তারা। অপহৃতরা এখনো তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন কি-না তা এখনো অজানা। আর হামলা এবং জীবনের ওপর হুমকির কারণে ওই সময়কালে শত শত হিন্দু পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায়। এমনকি দূরবর্তী আত্মীয়দের বাসায় গিয়েও আশ্রয় নেয়। সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকারে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলেছেন, তারা হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে মনে করেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ওই সময়টিতে হিন্দুদের মন্দিরও হামলার শিকার থেকে বাদ পড়েনি।
কানাডার ইমিগ্রেশন এবং শরণাথী বোর্ডের গবেষণা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার ঘটনাগুলো বিবিসি (১০ অক্টোবর ২০০১), গাল্ফ নিউজ (১২ ফেব্রুয়ারী ২০০২), প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (২০ অক্টোবর ২০০১), এবং প্যাক্স ক্রিস্টি (২৬ নভেম্বর, ২০০১) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় । এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ঘটনাগুলোতে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাটের পাশাপাশি হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতার শিকার হয়ে শত শত হিন্দু পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। দ্য ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়য়েন্স জানায় যে বেশিরভাগ সহিংসতা বিএনপির কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়... হিন্দুদের উপর আক্রমণগুলো সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় ঘটেছে।”
২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর বিএনপি জামায়াতের হামলার খবর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন ২০০৫-এ প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয় হিন্দুদের উপর সহিংস আচরণ করেছে যারা ঐতিহ্যগত ভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, লুট এবং নির্যাতনের কথা উল্লেখ ছিল।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘদের উপর হামলা অব্যাহত রয়েছে আর এ কারণেই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মন্দির এবং গির্জায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি প্রয়েজন পড়ছে। রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, প্রার্থনার স্থানে হামলা, ঘরবাড়ি নষ্ট, জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং উপাসনার সামগ্রী নষ্ট করে। এই অভিযোগগুলোও প্রতিবেদনের মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগের তদন্ত অনুযায়ী, দেখা গেছে (বিএনপি) এবং জামায়াতের ২৬,৩৫২ নেতা এবং সমর্থকদের ওই দাঙ্গায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয় গেছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২৬ জন মন্ত্রী এবং আইনপ্রণেতারা রয়েছেন। অভিযুক্ত ৬ মন্ত্রী হলেন: রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম পিন্টু, মতিউর রহমান নিজামী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম ও হাফিজউদ্দিন। তাদের মধ্যে, আলতাফ হোসেন চৌধুরী তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
ভোরের পাতা/এএম