প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সংসদ প্রতিবেদক গতকাল বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকা- নিয়ে কেউ যেন ফায়দা লুঠতে না পারে, সেজন্য বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারকে নজরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছে। এর আগে আলোচিত ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গত আগস্ট মাসে কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও এ নিয়ে কথা তোলেন কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফারুক খান। কমিটির পরের বৈঠকে মেজর সিনহা হত্যাকা- নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ওই বৈঠকে সুপারিশ করা হয়।
সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে, কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার শুরু থেকে এসপি মাসুদ তদন্তের কাজে অসহযোগিতা ও বাধা দিয়ে আসছিলেন। এজন্য ঘটনার পরপরই সিনহার পরিবার এসপি মাসুদকে বদলির দাবি জানায়। সেনাসদরও সুষ্ঠু তদন্তের এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে বদলির পক্ষে বলেছিল। গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহত হওয়ার পর একে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।
টেকনাফের চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ নিহত হওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে সেখানে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানায়। এরপর সিনহার বোন পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করলে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফের তখনকার ওসি প্রদীপ কুমার দাস, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। পরে কক্সবাজারের এসপি মাসুদকেও বদলি করা হয়।
এসপি মাসুদ তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সিনহাকে গুলি করার ২০-২৫ মিনিটপরে ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে যায়। অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে পা দিয়ে চেপে মাটিতে পড়ে থাকা সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করে।’
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সদস্য ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা উঠলে আজ (গতকাল) আমি বলেছি এই বিচার কাজ সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে। কেউ যাতে এ থেকে ফায়দা লুটতে না পারে। মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, এ ঘটনার বিচারে যা যা করা দরকার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সবকিছু নজরে রেখেছে।’ সংসদীয় কমিটির সভায় সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সর্ম্পকে কোনরকম প্রভাব পড়বে না বলে উল্লেখ করা হয়। এবিষয়ে সিনহা হত্যাকা-ের পর সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ কক্সবাজার গিয়ে এক সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই ঘটনায় দুই বাহিনীর সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। এতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সেনা-পুলিশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পারস্পরিক আস্থা অটুট রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ফারুক খান, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, মোতাহার হোসেন, মো. নাসির উদ্দিন, মহিবুর রহমান ও নাহিদ ইজাহার খান অংশ নেন।