প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন :শিক্ষামন্ত্রীবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে’ পরীক্ষার মাধ্যমে
নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা হচ্ছে না। জেএসসি বা সমমানের এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড় মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে এর ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত জুম মিটিংয়ের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা বলেন। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়ায়ুল হকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন।
পাস করবেন সব পরীক্ষার্থী :করোনাভাইরাসের কারণে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা হবে না, সেই ঘোষণা জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে পরীক্ষার্থীর ফলাফল কী হবে সেটি ঠিক হবে তার জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। আগামী ডিসেম্বর এই মূল্যায়নের কাজটি করা হবে। আর এ পরীক্ষায় পাস করানো হবে সকল শিক্ষার্থীকেই। গণমাধ্যমকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘অবশ্যই সবাই পাস করবে। তবে ফলটা কী হবে সেটা নির্ভর করছে তার জেএসসি ও এসএসসির পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।’ এর আগে দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের এইচএসসি শিক্ষার্থীরা দুটিপাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মূল্যায়নের কাজটি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকবে। বিভাগ পরিবর্তনজনিত (যারা বিজ্ঞান থেকে মানবিক বা অন্য বিভাগ পরিবর্তন করেছে) কারণে যে সমস্যাটি হবে তা ঠিক করতেও বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি নভেম্বর মাসে তাদের পরামর্শ বা মতামত দেবে। এরপর ডিসেম্বরে এই মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রীও গতকাল বলেছেন, মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিভাগ পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ঠিক করবে। এ বছর ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন।
‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা :করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হলেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে মহামারির মধ্যে সেই পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হবে কি না, সেই সংশয়ের কথাও জানিয়ে রেখেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলছেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ফল ঘোষণা করা হবে, যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সমন্বিত পদ্ধতিতেই আমরা সব ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারব।’ সেই পরীক্ষাগুলো কীভাবে হবে, গুচ্ছ পদ্ধতি কেমন হবে, তখনকার কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কারণ এখনও তিন মাস বাকি আছে। তিন মাস পরে সেই মূল্যায়নের জন্য কী পরিস্থিতি হয় তার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৪৪০ জনের। সর্বশেষ এক দিনেও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনাক্ত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি রোগী। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ পরীক্ষার মূল্যায়ন তৈরিতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও মতামত দেবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমিটির পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ তারা পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পরীক্ষায় গিয়ে মেধা পুরোপুরি যাচাই হবে সে কথা যদি এখন আমি বলি, আমি কি এখন নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও সশরীরে দেওয়ার মত পরিস্থিতি হবে? আমরা আশা করছি পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলো কী পদ্ধতিতে নেওয়া হবে সেটি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।’ এ মুহূর্তে সেসব বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে যাওয়া ‘সমীচীন হবে না’ বলেও মত দেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান উচ্চ মাধ্যমিক পার হওয়া শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের এ দুর্ভোগ ও অভিভাবকদের ব্যয় লাঘবের জন্য গত কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তিতে তা সম্ভব না হওয়ায় গতবছর ইউজিসি কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ- এই চারটি গুচ্ছের আওতায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার কারণে সে উদ্যোগেও গতবার পুরোপুরি সফল হতে পারেনি ইউজিসি।