প্রতিবাদেরও দরকার আছে, তবে..
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম আপডেট: ০৮.১০.২০২০ ১:৫২ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীর ওপর নির্যাতন এবং তার বিবস্ত্র ভিডিও নিয়ে দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়া ক’দিন ধরে বেশ ক’টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য প্রতিটি ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে- বেগমগঞ্জের নারীর বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র ধর্ষকদের শাস্তি ফাঁসি এ দাবিতে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায়। এই প্রতিবাদের ইতিবাচক একটি দিক রয়েছে, সেটি হলো ধর্ষকরা যাতে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে না যেতে পারে। জনগণ যদি কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে, তাহলে সেটাকে সবাই গুরুত্ব দেয়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘ধৈর্য ধরুন, প্রতিবাদ করার দরকার নেই।’ কথাটি দু’ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। তবে প্রতিবাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রতিবাদের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সজাগ করে দেওয়া সম্ভব। আবার প্রতিবাদ না থাকলে অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। একই সঙ্গে অপরাধীরাও আশকারা পেয়ে যায়। আর একটি কথা হলো অতীতে প্রতিবাদের মাধ্যমেই জাতির অনেক ভালো অর্জন রয়েছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবাদ টনিকের মত কাজ করে। এটাই হলো শুভদিক। কিন্তু অন্যদিকটাও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার দাবি রাখে। সামান্য ঘটনাকে ইস্যু করে অশুভ শক্তি নানান পায়তারা শুরু করতে পারে। তারা প্রতিবাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে পারে। এ কারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিবাদের বিষয়ে কথাটি বলেছেন। আমরা স্মরণ করতে পারি, বেশ ক’মাস আগে রাজধানীতে একজন শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা গেলে এই হত্যাকা-ের বিচার চেয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়। প্রথম দিকে হত্যাকা-ের বিচার প্রত্যাশিত হলেও পরবর্তীতে সেটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলে। ষড়যন্ত্রকারীরা এই আন্দোলনের নামে গোটা রাজধানী পরিকল্পিতভাবে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। যদিও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। তবে টানা কয়েক দিন রাজধানীবাসীকে উৎকন্ঠার সঙ্গে দিন পার করতে হয়েছে।
আর একটি কথা যে এ ঘটনায় সরকারের কোনো হাত নেই। সেই ঘটনার জন্য হরহামেশাই সরকারকে দায়ি করা হচ্ছে। বেগমগঞ্জের নারীর অত্যাচারের ঘটনা অতীতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। শাহবাগে যারা নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে, তারা যে দাবি তুলেছে তার মধ্যে যদি ধর্ষকের শাস্তি ফাঁসির দাবিতে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে এটা ধন্যবাদ না জানানোর কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু ধর্ষকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে একটি অচল অবস্থা সৃষ্টির পায়তারা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আমরা বুঝতে পারি না, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এইসব অপচেষ্টাকারীদের কেন শাহবাগে জড়ো হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়’ ধর্ষণের মহোৎসব চলছে’। মির্জা ফকরুলের বক্তব্য এতটা খেল হবে আমরা ভাবতে পারিনি। দেশে যখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে, ফখরুল তথা বিএনপি তখণ ধর্ষণ নিয়ে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিষয়টি শুধু হালকা নয় ভীষণভাবে সস্তা করে তুলল। অবশ্য আমরা একথা বলতে চাই না যে ইতিহাসের পাতা থেকে চোখ এড়ানো যায় না। তাই বলতে হচ্ছে তাদের আমলের কথা। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সে সময় শেখ হাসিনা সরকারের আমলের চেয়ে বেশি নারী ধর্ষিত হয়েছে। তাহলে কি কেউ বলবে বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় সে সব ধর্ষণ হয়েছিল? হতে পারে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপির নেতাকর্মী কেউ ধর্ষক ছিল, কোনো অসহায় নারীর ওপর অত্যাচার করেছে।
বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যতদিন ক্ষমতায় ছিল- ততদিন দেশের শান্তি কতটা ভালো ছিল মানুষ তা এখনো ভুলে যায়নি। তবে বর্তমান সরকারের আমলে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে-এগুলো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত কিনা যাচাই করে দেখতে হবে। আমরা ক’দিন আগেই বলেছি- যেসব নেতা দলে জামায়াতকে ঢুকিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের ওপর প্রতিশোধ নিতে তারা সমূর্তিতে বের আসছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কথা একটাই প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় একটি ধর্ষণকারীও যেন ছাড় না পায়।
আর যেসব অপশক্তি ঘোলাজলে মাছ শিকারের ব্যস্ত আছে। তারা যে আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছে তা বলাই বাহুল্য। ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই অপশক্তি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। এটা যাতে কোনোভাবেই তারা সফল না হয় তার জন্য এই উপশক্তিকে কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। শাহবাগে যেসব ব্যক্তি ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়েছে, তাদের মধ্যে কতভাগ জামায়াত ও বিএনপির লোক রয়েছে, সেটাও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বের করা উচিত ছিল। তবে সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো-বিএনপি-জামায়াত যে কোনো ওছিলায় আবারও দেশকে অচল করতে চায়। এখন করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খুঁজছে।