মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আজ বুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ দফতরে ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কী হওয়া উচিত তার উত্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তো মনে করি ধর্ষণকারী যদি প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই তার ফাঁসি হওয়া উচিত’। ধর্ষণের প্রতিবাদে যারা রাস্তায় নেমেছে আমি তাদের স্বাগত জানাই। ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য তারা আন্দোলন করছে। কিন্তু এই আন্দোলনের পেছনে যাতে অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে।’
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আরো বলেন, ‘এদেশের ৫০ শতাংশ নারী। আমি নারীদের উদ্দেশ্যে বলব ধর্ষক, ধর্ষকই। তার কোন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক পরিচয় নেই। যে ধর্ষক সে নিশ্চয়ই সে কোন না কোন মায়ের সন্তান। আমি সেই মাকে আহবান জানাব, আপনি এই ধর্ষক পুত্রকে বর্জন করুন। নিশ্চয়ই ধর্ষণকারী কারো না কারো পিতা, আমি সন্তানদেরকে বলব, যাতে তারা ধর্ষণকারী পিতাকে বর্জন করে। ধর্ষণকারী নিশ্চয়ই আপনাদের আমাদের কারো না কারো ভাই, সেই ধর্ষণকারী ভাইকে যাতে তারা বর্জন করেন। আমি সমাজের প্রতি আহ্বান জানাব, সমাজ যাতে এই ধর্ষণকারীদের প্রত্যাখ্যান করেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি আহ্বান জানাব ধর্ষণকারীদের যাতে তারা বহিস্কার করে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একটি অসুস্থ মানসিকতা কাজ করে। সেজন্য দরকার সচেতনতা। এখানে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এভাবেই সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই নির্যাতন বন্ধ করতে পারব। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মা-বাবার। সন্তানেরা কোথায় যায়, কি করে, কার সাথে চলাফেরা করে সেটা তাদের জানতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা আরো জানান, যখনই কোন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে আমরা সংশ্লিষ্ঠ জেলার ডিসি, এসপি এবং ওসিকে ফোন করে আসামীদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভিকটিমের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে আইনগত সহায়তাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এসময় বাংলাদেশ সচিবালয়ে ইউনিসেফ কর্তৃক ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ‘এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ: আ প্রোফাইল অব প্রোগ্রেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ, যুগ্মসচিব মো মুহিবুজ্জামান ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন প্রমুখ।
ইউনিসেফের প্রাকাশনা অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা তার বক্তব্যে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, নারী ও শিশুর উন্নয়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ইউনিসেফ কর্তৃক প্রাকাশনা অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন যুক্তরাস্ট্র থেকে ইউনিসেফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ক্লডিয়া কাপ্পা। বাংলাদেশ থেকে যোগদান করেন ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ মিজ ভেরা মেনডোস্কা ওআইসি।
ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ভেরা মেনডোস্কা বলেন, বাল্য বিয়ে রোধে বাংলাদেশ যথেষ্ঠ উন্নতি করেছে। বাল্য বিয়ে শুধু মেয়ে ও তার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার জন্যও ক্ষতিকর।
ইউনিসেফের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে দেশের পুরো জনসংখ্যার মধ্যে ৩ কোটি ৮০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ (১৮ বছরের আগে বিয়ে) হয়েছে। এদের মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বাল্যবিবাহের শিকার শিশুদের বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ও গ্রামে বাস করে। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অবিবাহিত মেয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। বিবাহিত প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রতি পাঁচজন ১৮ বছরের আগে ও প্রতি ৮ জন ২০ বছরের আগে সন্তান জন্ম দেয়।
বাল্যবিবাহের কমানোর অগ্রগতি উচ্চবিত্ত ও ধনী শ্রেণির মধ্যে বেশি বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ, এখানে ৯০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, এই জেলায় বাল্যবিবাহের হার ৭৩ শতাংশ। বাল্যবিবাহ সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম জেলায় যা ৩৯ শতাংশ।