প্রকাশ: বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০, ৬:০১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরিবারের আর্থিক স্বচ্চলতা ফিরিয়ে আনতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে ফেলে দীর্ঘ ১৪টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছিলেন রফিক । তবুও ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি সেখানে। কষ্টের সময় পার করে নিরাশ হয়ে দেশে ফিরে বাড়ির পাশের ২ একর অনাবাদি জমিতে গড়ে তুলেন মাল্টা বাগান। দৃষ্টিনন্দন ও উৎপাদনশীল এমনই একটি ফলজ বাগান ভাগ্যের চাকা ঘুরে জীবনে সফলতা পান ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল কৈতরবাড়ী গ্রামের নেয়ামোতুল্লাহর ছেলে বিদেশ ফেরত রফিকুল ইসলাম।
সে খুব বেশি পড়াশুনা করতে পারেনি। তাই পরিবারের আর্থিক স্বচ্চলতা ফিরিয়ে আনতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে ফেলে পাড়ি জমান সৌদি আরবের মরুপ্রান্তরে। ৫বছর পর সৌদি থেকে দেশে ফিরে আবার চলে যান মালয়শিয়াতে। সেখানে ফলের বাগান পরিচর্যার কাজ করেন দীর্ঘ ৯ বছর। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে বাড়ির পাশের ২ একর অনাবাদি বা অকৃষি চালার জমিতে গড়ে তুলেন “রফিক ফলজ ও কৃষি খামার”। বাগানে রোপন করেন মাল্টা, আমড়া, লিচু, আমলকি, উড়-বরই, আম, লেবু ও পেঁপেসহ নানা প্রজাতির ফলের চারা। কঠুর পরিশ্রম ও পরিচর্যার ফলে বছর দুই ঘুরতেই গাছগুলোতে ফল ধরতে শুরু করে। বর্তমানে ৮ একর জমির ওই বাগানে জামরুল, সুবেদা, আনার, ডালিম, আরবের খেজুর ও মসলা জাতীয় এলাচিসহ ২২ প্রজাতির ফলের স্থান পেয়েছে। গত ৬ বছরে দৃষ্টিনন্দন ও উৎপাদনশীল ওই ফলজ বাগানে ৮/১০ জন বেকার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
এ বছর ১২কাঠা জমির মাল্টা বিক্রি করেন ৩লক্ষ টাকার । পাশা পাশি প্রতিমাসে বারমাসি লেবু বিক্রি করেন ১লক্ষ টাকার। রফিক ফলজ ও কৃষি খামারে উৎপাদিত মাল্টা রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ বছর বিভিন্ন জাতের ফল-ফলাদি বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা। এবছর শীতকালিন সবজির জন্যও প্রস্তুত করেছেন প্রায় তিন একর জমি। বিভিন্ন ফলের চারাও বিক্রি করেন তিনি। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতিতে ও পুষ্টি চাহিদা পুরণে বিশেষ অবদান রাখায় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেশ ক’টি সম্মাননা কেষ্ট ও প্রশংসাপত্র কুড়িয়েছেন। রফিকের উৎপাদনধর্মী ফলজ বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন স্থানীয় কৃষক ফলজ বাগান করেছেন।
সফল ফল উৎপাদনকারী স্বনির্ভর রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি প্রবাসে অনেক পরিশ্রম করেও অর্থনৈতিক চাকা ঘুরাতে পারিনি। তবে দেশে এসে মাল্টা,লেবু ,পেপে,আমড়া,অরবড়ই,আনার,সুবেদা,আরবের খেজুরের চাষ করে আল্লাহর রহমতে অর্থনৈতিকভাবে সাবালম্বি হয়ে উঠেছি। পুষ্টি চাহিদা পুরনে ফরমালিন মুক্ত ফল বিক্রি করা আমার লক্ষ্য।রফিক জানান, ফলজ বাগানের পাশাপাশি বিরল প্রজাতির ১৫টি গারল পালনের খামার শুরু করেছি। রফিক এ প্রতিনিধিকে জানান আমার বাগান থেকে ২ কিলোমিটার কইতর বাড়ী এলাকার আট হাজার লোকের চলাচলের কোন ভাল রাস্তা নেই ।একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদায় পরিনত হয় । রাস্তা খারাপের কারনে পাইকাররা ফল নিতে আসেনা যার কারনে ফলের সঠিক মূল্য পাচ্ছিনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ জানান, আমিসহ কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়েছিলাম রফিকের ফলজ ও কৃষি খামারে। ওই বাগানে কোন প্রকার কেমিক্যাল বা রাসায়নিকবদ্র ব্যবহৃত হয় না। ফলগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। রফিকের উৎপাদনধর্মী ফলজ বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন স্থানীয় কৃষক ফলজ বাগান করেছেন। দেশের অর্থনীতিতে ও পুষ্টি চাহিদা পুরণে বিশেষ অবদান রাখছে রফিক।