প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২০ এএম আপডেট: ২৯.০৯.২০২০ ১:১৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সাল ২০০৯। সংসদে বাজেট বিতর্কে বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংহ তীব্র কটাক্ষ ছুড়লেন, ‘প্রবীণ নাগরিকদের যেটুকু কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে এক বোতল হুইস্কিও কেনা যাবে না।’ হাসতে হাসতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘কিক দ্য বটল।’৮২ বছর বয়সে গতকাল প্রয়াত হলেন যশোবন্ত। প্রণববাবুর মতোই জাতীয় রাজনীতির সেই বিরল ব্যক্তিত্বদের তিনি অন্যতম, যাঁরা বিদেশ, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। আবার ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে দার্জিলিং থেকে বিজেপি জিতিয়ে এনেছিল যশোবন্তকে। ২০১৪-র আগস্টে বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান যশোবন্ত।
ভর্তি করা হয় নয়াদিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে। চলে যান কোমায়। গত ২৫ জুন ফের ভর্তি হন সেনা হাসপাতালে। গতকাল সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি মারা যান। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবাণী, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
‘মধ্যবিত্তের দল’ বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়া সত্ত্বেও যশোবন্ত ছিলেন সেই দলেরই অভিজাত মুখ। সঙ্ঘ থেকে উঠে আসেননি। উগ্র হিন্দুত্বের বদলে উদারপন্থী চিন্তাধারাতেই ছিল তাঁর বিচরণ। তাই প্রভাব ফেলেছিলেন বিজেপির শহুরে ভোটব্যাঙ্কে। হিন্দি আর ইংরেজি, দু’টোই ঝরঝরে বলতেন, বই লিখতেন। ‘ট্রেডমার্ক’ ছিল জলদগম্ভীর গলা, সূক্ষ্ম রসবোধ আর কাঁধে ফ্ল্যাপ-দেওয়া শার্ট। তাঁর এবং স্ত্রী শীতল কুমারীর দুই পুত্রের অন্যতম মানবেন্দ্র প্রাক্তন সাংসদ। ১৯৩৮ সালের ৩ জানুয়ারি রাজস্থানের বাড়মেরের জসোল গ্রামে জন্ম। সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। ১৯৮০ থেকে পাঁচ বার রাজ্যসভার সাংসদ থেকেছেন, চার বার লোকসভায়।
ভারতের ইতিহাসে চিরস্থায়ী প্রভাব রেখে যাওয়া কয়েকটি অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অটলবিহারী বাজপেয়ীর অগাধ আস্থাভাজন যশোবন্তের নাম।তবু নিজের দল থেকেই যশোবন্ত বহিষ্কৃত হয়েছেন দু’বার। ২০০৯ সালে তাঁর বই ‘জিন্না: ইন্ডিয়া, পার্টিশন, ইন্ডিপেন্ডেন্স’-এ মহম্মদ আলি জিন্নার প্রশংসা করে প্রথম বার বহিষ্কৃত হন। বইটি গুজরাতে নিষিদ্ধ করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।