প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২০ এএম আপডেট: ২৯.০৯.২০২০ ১:১৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন সরকার ও রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে রাজপথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। তারা দেশটির বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এবং দেশটির বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা বর্তমান রাজা ভাজিরালংকর্নর বিরুদ্ধে অনাস্থা দেখাচ্ছেন। ২০১৬ সাল থেকেই দেশটির ক্ষমতায় আছেন রাজা ভাজিরালংকর্ন। যার অধিকাংশ সময়ই কাটে জার্মানিতে। কেন তিনি সেখানে দীর্ঘ সময় কাটান তার কোনো ব্যাখ্যা কারও জানা নেই। যদিও পাপারাজ্জিরা কখনও হয়তো জার্মানিতে রাজার বিলাসবহুল জীবন যাপনের কিছু ছবি প্রকাশ করতে সক্ষম হন।
এসব ছবিতে রাজা এবং তার হেরেমের সদস্যদের কিছু বিষয় প্রকাশ পায় তবে অধিকাংশই থাকে গোপনীয়তায় ঢাকা। থাইল্যান্ডের রাজপরিবার অতি-ধনী; অঢেল সম্পদের মালিকানা রয়েছে এই পরিবারের হাতে। দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে রাজপরিবারের অবস্থান। শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং দেশটির এলিট শ্রেণির ধনকুবেরদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেটিকে আছে রাজপরিবার। ২০১৬ সালে রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পর দেশটির সাংবিধানিক রাজা হন ৬৬ বছরের মহা ভাজিরালংকর্ন। তিনবার বিয়ে করেছেন এই থাই রাজা, রয়েছে সাত সন্তান। প্রায়ই বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ইয়ট কিংবা পুরো হোটেল ভাড়া নিয়ে ডজন ডজন রক্ষিতাসহ ওঠেন ভাজিরালংকর্ন।চলতি বছরের মার্চের দিকে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বাঁচার আশায় জার্মানিতে স্বেচ্ছা-আইসোলেশনে যান রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন। সেখানে বিলাসবহুল একটি হোটেলের পুরোটাই ভাড়া করেন তিনি। এ সময় সঙ্গে নিয়ে যান ২০ জন রক্ষিতাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ থাইল্যান্ডে রাজা, রানি, তাদের পরিবারের সদস্যদের সমালোচনা বা অপমানজনক কিছু বললে ১৫ বছরের কারাদন্ড ভোগের বিধান রয়েছে। অনেক রক্ষণশীল দেশটির রাজতন্ত্রকে অলঙ্ঘনীয় হিসেবে দেখে থাকেন।
গত জুলাই থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত। তবে গত ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মানুষও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা দেখিয়েছেন যে, তারা প্রায়ূন চান ওচা সরকারের কতটা বিরোধী। এই বিক্ষোভ থেকে থাই সরকারের প্রতি জনসাধারণের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। রাজধানী ব্যাংকক থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে থাই সরকারের পদত্যাগের পাশাপাশি সংসদ ভেঙে দেয়ারও দাবি ওঠে।২০১৪ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটাই সর্ববৃহৎ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ছয় বছর আগে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির ক্ষমতায় আসেন সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ূত চান ওচা। বিক্ষোভকারীরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান ওচা সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেছেন।বর্তমান রাজা ভাজিরালংকর্ন তার বাবার মত মোটেও জনপ্রিয় নন। তার বাবা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ ৭০ বছর থাইল্যান্ড শাসন করেছেন। তার শরীরের ট্যাটুগুলোর মতোই তার জীবন ছিল রঙীন, ঝকঝকে। দেশের মানুষের নজিরবিহীন ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি।
দেশটিতে সামাজিক মাধ্যমেও রাজপরিবারের সদস্যদের সমালোচনার সুযোগ নেই। গত জুলাই মাসে এক ব্যক্তি একটি টি-শার্ট গায়ে পরেছিলেন যেকানে লেখা ছিল ‘রাজতন্ত্রের ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে’। এই লেখার কারণে ওই ব্যক্তিকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।বিক্ষোভকারীরা সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন। তারা চান সংসদ ভেঙে দেয়া হোক, সরকারের সমালোচকদের হয়রানির অবসান এবং সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে সংশোধন আনা। সমালোচকরা বলছেন, সেনা-সমর্থিত এই সংবিধানেই গত বছরের নির্বাচনে প্রায়ূত চান ওচার দলের জয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়।