প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২০ এএম আপডেট: ২৯.০৯.২০২০ ১:১৩ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দিয়েছেন । নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাম্পের নআয়কর ফাঁকির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও কোনো আয়কর দেননি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্ব তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন । খবর বিবিসির।
গত ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকানদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন ডোলান্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে প্রথম বছর ২০১৭ সাল মিলিয়ে ট্রাম্প মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দেন।নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, ট্রাম্প এবং তাঁর বিভিন্ন কোম্পানির দুই দশকের বেশি সময়ের কর দেওয়ার রেকর্ড তাদের হাতে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর মোটেও কোনো আয়কর দেননি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজের কোম্পানিগুলোর বারবার লোকসান দেখিয়েছেন এবং বছরের পর বছর ধরে আয়কর এড়িয়ে গেছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া খবর’ বলে মন্তব্য করেছেন।ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি আসলে কর দিয়েছি। আমার ট্যাক্স রিটার্ন দেখলেই এটি বুঝতে পারবেন। এটার অডিট এখন চলছে। অনেকদিন ধরেই এর অডিট চলছে।’ গত রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।আর এবার ট্রাম্প বলির পাঁঠা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর পরিসেবা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসকে (আইআরএস)। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আইআরএসের লোকজন আমাকে ভালো চোখে দেখে না। তারা আমাকে খুব খারাপভাবে দেখে। সেখানে অনেকের লোক আছে।’নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, তারা এমন উৎস থেকেই ট্রাম্পের কর সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে যেখানে বৈধ পথে তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ এর দশক থেকে তারা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর আয়কর নিরীক্ষা করেছে। এর পাশাপাশি ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আয়করের প্রতিবেদনও তাঁরা পেয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, দুই বছরে প্রেসিডেন্ট মাত্র ৭৫০ ডলার করে কর দিয়েছেন। গত ১৫ বছরের মধ্যে কার্যত ১০ বছরই তিনি কোনো আয়কর দেননি। আয়ের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ বেশি হওয়াকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে রীতিমতো একজন তারকা ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি ছিল ট্রাম্পের। আবাসন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী হিসেবেও তাঁকে তুলে ধরা হয় সে সময়। কিন্তু আইআরএসের উপাত্ত তুলে ধরে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, তিনি কোটি কোটি ডলার আয় করেছেন। তার চেয়ে লোকসানের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছেন শুধু কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য।
ট্রাম্প তাঁর জমা দেওয়া নথিতে উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৮ সালে তিনি অন্তত ৪৩৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। কিন্তু সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আয়কর রিটার্নের নথি বলছে তিনি সেখানে ৪৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার লোকসান দেখিয়েছেন।অথচ ধনকুবের ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন।যদিও আয়কর না দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্প বলেছৈন, তিনি ‘প্রচুর পরিমাণে’ আয়কর দিয়েছেন। তার দাবি, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সার্ভিসের আওতাধীন না থাকা অবস্থায় নিজের আয়করের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবেন। যদিও, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সার্ভিসের আওতায় থাকা অবস্থায় আয়করের তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ের সময় সিএনএন এর একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, কী পরিমাণ আয়কর তিনি দিয়েছেন? ট্রাম্প সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চিৎকার করে চলে গেছেন।এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে ট্রাম্পের আয়করের যে বিবরণী রয়েছে, তাতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের আয়করের কোনো তথ্য নেই।
দলভারির চেষ্টা :আগামী নভেম্বরেই নির্বাচন। তার আগে নিজের দল ভারী করার সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে তিনি মনোনীত করলেন অ্যামি কোনি ব্যারেটকে। বলা হচ্ছে, রক্ষণশীল ব্যারেটকে মনোনয়ন দেওয়ায় পাল্টে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের চালচলন। যদি ব্যারেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েই যান, তবে বদলে যাবে ইতিহাসও। স্থানীয় সময় ২৬ সেপ্টেম্বর অ্যামি কোনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে মনোনয়ন দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যারেট স্বভাবতই ট্রাম্পের অনুগত। বিবিসি বলছে, ২০১৭ সালে শিকাগোভিত্তিক সপ্তম সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে বিচারক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যারেট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। ইন্ডিয়ানার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি কিছুদিন এক বিচারকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
সব ঠিক থাকলে এবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে যাচ্ছেন ৪৮ বছর বয়সী ব্যারেট। আর ব্যারেটও হাঁটছেন ট্রাম্পের মতাদর্শিক পথেই। তিনি এর আগেও ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। যেমন ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে একসময় রুল দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র কেনা ও ব্যবহারের ব্যক্তিগত অধিকারের পরিধি বাড়ানোর পক্ষেও তিনি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছিলেন। রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যারেট ব্যাপক জনপ্রিয়। পিপল অব প্রেইস নামের একটি ক্যাথলিক গোষ্ঠীর সদস্য তিনি। এই গোষ্ঠী মনে করে, বিয়ে শুধু বিপরীত লিঙ্গের মধ্যেই হতে হবে। তাই এলজিবিটি গোষ্ঠীগুলোর কাছে ব্যারেট প্রতিকূল এক নাম। আবার গর্ভপাত বৈধ করার ১৯৭৩ সালের আইন পরিবর্তনের জন্যও ব্যারেটকে বড় অস্ত্র বলে মনে করে থাকে রক্ষণশীলেরা। তিনি বিচারপতি হলে উল্টে যেতে পারে ওবামাকেয়ারও। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।