প্রকাশ: সোমবার, ৩০ নভেম্বর, -০০০১, ১২:০০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে স্কিল ট্রেনিং করছিলেন আর একটু দুরে সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক নিজ কার্যালয়ে বসে ফোনে, ভিডিও কলে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন এলাকাবাসীর দাবি পূরণে। শোনা এবং সম্ভাব্য সমাধানের পথ খোঁজায় তিনি ছিলেন সেবকের ভুমিকায়। মাঠের সবাই শরীরকে ধারালো করায় ব্যস্ত হলেও পল্লবী ‘সি’ ব্লকে ১০ কেজিরও বেশি ওজন বৃদ্ধি নিয়েও খুব একটা আতঙ্কগ্রস্ত নন সাবেক অধিনায়ক। কারণ তিনি এখন জননেতা। তবে এলাকাবাসীকে তিনি শুনালেন আশার কথা। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ আত্মবিশ্বাস সেই আগের মতোই আছে মাশরাফি বিন মর্তুজার, ক্রিকেটীয় দৃশ্যপটে যিনি এখন নেই বললেই চলে।
অবশ্য ‘নেই’ বলারও উপায় নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ঘরোয়া ক্রিকেট স্থগিত থাকায় মাঠে নেই তিনি দীর্ঘকাল। কিন্তু আলোচনায় আছেন। কারো না কারোর মন্তব্যে মাঠ গরম হয়েছে মাশরাফিকে নিয়ে। সব শেষ গত সপ্তাহে ইউটিউব চ্যানেল ‘নোমান নট আউট’-এ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক ওয়ানডে অধিনায়কের অবসর পরিকল্পনা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সে রাতেই ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেন মাশরাফি। তাতে বোঝা যায় তিনি অনুষ্ঠানটি দেখেছেন, নিদেনপক্ষে নাজমুল হাসানের বক্তব্যের সারবত্তা কারো কাছ থেকে শুনেছেন।
এসব ক্ষেত্রে তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে পরোক্ষে প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে, তবে একটু গভীরভাবে ভেবে বুঝে নিতে হয়। ‘করোনায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। দেখেছেন, ওজন কত বেড়েছে? কমপক্ষে ১০ কেজি’, নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি।তবে কি ক্রিকেট শেষ? ‘প্রশ্নই আসে না। ওজন বেড়েছে যখন বুঝতে পারছি, তখন ওজন কমাতেও পারব। এই দেখেন না (মোবাইলে তোলা নিজের থ্রি প্যাক ফিগার), এটা আমার করোনা হওয়ার কয়েক দিন আগের ছবি। সেই আমার এখন ভুঁড়ি দেখা যায়’, হাসি দেখে মনে হলো আত্মবিশ্বাসে মেদ জমেনি। সহসাই বাসায় ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করবেন। মাঠে যাওয়ার দিনক্ষণ এখনো ঠিক করেননি। ‘এখন তো টেস্ট দলের প্রস্তুতি চলছে’, মানে বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কায় গেলে পরে মাঠের প্রস্তুতিও শুরু হবে মাশরাফির। ফিটনেসের মতো বোলিং নিয়ে অত দুশ্চিন্তা নেই তাঁর, ‘রিদম নিয়ে আমার কখনোই সমস্যা হয়নি, আশা করি এবারও হবে না।’সেই প্রস্তুতি কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যও নাকি শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য? প্রায় দুই দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়ে দেওয়া তিনি এ প্রশ্ন শুনে আর কাতর হন না, ‘আমি তো বাচ্চা ছেলে না যে বিশ্বকাপে (২০১৯) মাত্র এক উইকেট পাওয়ার পরও জাতীয় দলে না নিলে চেঁচামেচি করব?
তাই বলে আবার এটাও মনে করি না যে আমি শেষ। বিশ্বকাপের আগের তিনটি সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট আমারই। যাক, ওসব বলে লাভ নেই। আমি আমার চেষ্টা করে যাব। যারা দল গড়েন, বাকিটা তাঁদের ওপর। আসলে আমি অত দূর ভাবছিও না। অপেক্ষায় আছি কবে আবার ডমেস্টিক শুরু হবে...সেটার জন্য তৈরি হতে হবে।’সেখানে ভালো করে জাতীয় দলে ফেরার দাবি জানাবেন? ‘ভাই, রাজনীতিতে এসে এত দাবি-দাওয়া শুনি যে আর দাবি করতেও ভালো লাগে না’, হেসে খুন মাশরাফি। অবসর নিয়ে আগের অবস্থানেই তিনি, ‘আমার অবসরের আলোচনা তো নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালেই আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। এরপর আরো তিনবার মনে হয়েছে, এই বুঝি শেষ। কিন্তু আমি ফিরে এসেছি। এবারও পারব কি না জানি না। তবে আমি চেষ্টা করে যাব।’
কিন্তু আপনি এমন সফল একজন ক্রিকেটার, আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেবেন না? ‘যদি না নিই, আপনার অসুবিধা কী’, রসিকতা দিয়ে শুরুর পর সিরিয়াস মাশরাফি, ‘ধোনির অবসর নেওয়ার স্টাইলটা আমার দারুণ লেগেছে। তার মানে এই না যে আমিও একটি টুইট করব। আমার কাছে ঘটা করে অবসর নেওয়া অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিলে নেবে, না নিলে নাই।’ এভাবেই একদিন যতিচিহ্নও পড়বে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে।