মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ
জননেত্রী বিশ্বনেত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উত্থান, সামাজিক সুরক্ষা, গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ তাঁর বহুমাত্রিক অবদান শুধু লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি ভিশনারী লিডার, আপোষহীন নেত্রী, গণমানুষের নেতা, উন্নয়নের রোল মডেল এবং সকল ক্ষেত্রে আমাদের আস্থার প্রতীক। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্বশ্রদ্ধ অভিনন্দন।
তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের আদর্শ, রাজনৈতিক দর্শন, মানবিকতা এবং প্রগতিশীল ধ্যানধারণা নিয়ে জনকল্যাণ এবং জনসেবার ব্রত নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা নেন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি পরিবারের সাথে ঢাকায় এসে চলে আসেন। ঢাকার মোগলটুলীর রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে ১৯৫৪ সালের পর ঢাকায় টিকাটুলীর নারী শিক্ষা মন্দিরে (বর্তমানে শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ) ভর্তি হন তিনি। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। কলেজ জীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্য যখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেন তখন শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাসায়। পিতা, মাতা ও ভাইদের হারানোর শোকগ্রস্ত শেখ হাসিনা আশ্রয় নেন ভারতে। তিনি ছয় বছর ভারতে থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন। এর আগেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরনো ও বৃহৎ দলের সভাপতির দায়িত্ব নেন। তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, দলের অভ্যন্তরে অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার বিরোধিতাসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে দিশেহারা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপরে দাঁড় করান। ফলে ১৯৯৬ সালে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী আছেন শেখ হাসিনা। এ সময়ে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক অর্জন হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধে জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা কৃষক এবং দুঃস্থ, ভূমিহীন এবং দারিদ্র্য-পীড়িত কৃষকদের কল্যাণে অনেক নব এবং বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুস্থ এবং বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক লোকের জন্য শান্তিনিবাস স্থাপন, গৃহহীন মানুষদেরকে আশ্রয় দানের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্নের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যারা ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ব্যাপক হত্যা, নির্যাতন এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শান্তির সপক্ষে একটি শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি জীবনে কয়েকবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। সবচেয়ে মারাত্মক ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যখন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তার জনসভায় এক ডজনেরও বেশি উচ্চ-প্রযুক্তির গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল। এই সুপরিকল্পিত হামলায় তার দলের ২২ জন নেতা-কর্মী মারা যান এবং ৫০০ এর অধিক নেতা-কর্মী আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও ঐ হামলায় চোখে মারাত্মক আঘাত পান। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মিথ্যা এবং কাল্পনিক অভিযোগে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন এবং জেলে যান। দেশে-বিদেশে প্রবল জনমতের মুখে প্রায় এক বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুলাই শেখ হাসিনাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছিল।
১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর শাসনামলে তাঁর দূরদর্শী বৈদেশিক নীতি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সফল অংশগ্রহণ বিদেশে আমাদের দেশের ইমেজ উজ্জ্বল করেছিল। ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে শান্তির দূত শেখ হাসিনা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশ ভ্রমণ করেন এবং প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিস্ফোরোন্মুখ পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর ফলে বাংলাদেশের ইমেজ উজ্জ্বল হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাপক পরীক্ষা নিষেধাজ্ঞা চুক্তি (সিটিবিটি) স্বাক্ষর করে।
করোনা-মহামারিতে সংকটাপন্ন খেটেখাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সুচিন্তিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। যাতে কোনও মানুষই মৃত্যুবরণ না করেন, আর যাতে তারা আক্রান্ত না হন, সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন।আর এজন্য আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোর্বসে’ ২২ এপ্রিল (২০২০) প্রকাশিত কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবারগ-কক্স রচিত “8 (More) Women Leaders Facing The Coronavirus Crisis” শীর্ষক প্রবন্ধে করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে। নারী নেতৃত্বাধীন সিঙ্গাপুর, হংকং, জর্জিয়া, নামিবিয়া, নেপাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপর আলোকপাত করার সময় বলা হয়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশের মহামারির সংকট মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। কলামে বলা হয়েছে, এদেশের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তিনি গত ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেগুলো এক অর্থে যুক্তরাজ্যও করতে পারেনি। তবে একথা সত্য, বিশ্ব মিডিয়ায় প্রশংসা পাবার জন্য শেখ হাসিনা কাজ করেন না। তার দিনপঞ্জি জুড়ে আছে করোনা মোকাবেলার জন্য ব্যস্ত সময়ের কর্মকাণ্ড।
প্রায় চার দশকের মতো সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মতো আলো ছড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। মানবতার জননী, নির্লোভী, আপোষহীন, তেজী, দুরদৃষ্টি সম্পন্ন এই নেত্রী সংগ্রাম করেই আজ বিচক্ষণ এক রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। তার দিকেই তাকিয়ে থাকে সারা জাতি। তিনি জাতির শেষ ভরসার স্থল । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় তিনিও হতে চলেছেন তৃতীয় বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, মেহনতি মজলুম জনগণের বন্ধু মানবতার জননী। শেখ হাসিনার ৭৪ তম জন্মদিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা। গণমানুষের ভরসার স্থল, আস্থার প্রতীক, ভিশনারী লিডার শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ। তিনি অসীম সাহস, দৃঢ়প্রত্যয়, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের আগেই একটি উন্নত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন এই প্রত্যাশা ও বিশ্বাস আজ সকল প্রগতিশীল মানুষের।
লেখক: সাবেক সচিব