প্রকাশ: সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
১৯৯২ সালে প্রথমবার উপনির্বাচনে সংসদ হয়েছিলেন। এরপর আরো চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। এমনকি ১০ সংসদে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। প্রতিমন্ত্রী হয়ে নিজ মেয়েকেই সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১৯৯০ সাল থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে আছেন। কথা হচ্ছিল রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে নিয়ে। তার কেরামতিতেই লুটেপুটে খাচ্ছে পুরো রাজবাড়ী শহরকে। এমপি কেরামতের ভয়ংকর কেরামতি নিয়ে ভোরের পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন পৌরসভাধীন ১১০/১৫৪ নং সজ্জনকান্দা মৌজার আর এস ৭৪ নং দাগের ৯০ শতাংশ সরকারি জমি এমপি কাজী কেরামত আলী, সাবেক সংরক্ষিত নারী এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, তার স্বামী রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুহম্মদ আলী চৌধুরী মিলে ২৭ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নিজেদের আত্নীয় স্বজনের নামে করিয়ে নিয়েছেন। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখিত সম্পত্তি গত ৭০ বছর ধরেই সরকারিভাবে ভোগ দখল হয়ে আসছিল। এই জমির মধ্যে ৭৯ শতংশ জমির এস এ হাল জরিপে বাংলাদেশ সরকারের খাস জমি রেকর্ড থাকার পরও এমপি কাজী কেরামত আলীর কেরামতিতে এখন তা নিজ আত্নীয় স্বজনদের নামে করিয়ে নিয়েছেন। ৯০ শতাংশের মধ্যে ১১ শতাংশ জমি এস এ হাল জরিপ নং ৩১৫ খতিয়ানে জনৈক অমরেশ সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। প্রতি শতাংশ জমির দাম ৩০ লাখ টাকা করে হলে মোট সম্পত্তির দাম দাঁড়ায় ২৭ কোটি টাকা। এই টাকার সম্পত্তি খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (ভিপি) তালিকায় (১৮৯/৭৭-৭৮) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি কেরামত-লাভলী-আলী চৌধুরী গং মিলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সুপারিশ করে স্থানীয় ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কৌশুলী (ভিপি) মো. রফিকুল ইসলাম সরকারি মালিকানাধীন উক্ত জমি ভিপি তালিকাভুক্তির বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন না করেই কথিত আবেদনকারী স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রতারক রেজাউল করিমের অনুকূলে রায়/ডিক্রি (ভিপি মামলা নং ৯৩৭/১৩) হাছিল করেন। যদিও রায়ে ৭৯ শতাংশ জমি সরকারি মালিকানাধীন সম্পত্তির কথা উল্লেখ রয়েছে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্রাইব্যুনাল আদালতে আপীল মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৪৬/২০১৪। উক্ত আদালতের পর্যবেক্ষণেও নালিমী ৯০ শতাংশ জমির মধ্যে ৭৯ শতাংশ জমি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ (ভিপি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিষয়টি বৈধ ভিত্তি দুষ্ট হয়না মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও ভূমিগ্রাসী চক্র রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সরকারি মালিকানাধীন সম্পত্তি সুকৌশলে ভিপি তালিকাভুক্ত করে কথিত আবেদনকারী প্রতারক রেজাউল করিম অনুকূলে ডিক্রি হাসিল করেন। উক্ত সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২৯-০৩-২০১৬ তারিখে ভিপি মামলা পরিচালনাকারী কৌশুলী মো. রফিকুল ইসলামের শ্যালক মো. সালাউদ্দিনের নামে ২৪৫২ নং কাবলা দলিল মূলে ১০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। পরবর্তীতে মো. সালাউদ্দিন উক্ত জমি তার বোন শিউলী আক্তার অর্থাৎ কৌশুলী রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর অনুকূলে দানপত্র দলিল হিসাবে রেজিস্ট্রি করে দেয়।
এছাড়া পৌরসভার মেয়র মুহম্মদ আলী চৌধুরীর শ্যালক ও সাবেক সংরক্ষিত এমপি কামরুন নাহার লাভলীর আপন ছোট ভাই কবীর চৌধুরী ওরফে লাবু চৌধুরীর নামে ৫৯ শতাংশ এবং এমপি কাজী কেরামত আলী বেনামে রাজবাড়ী পৌরসভার বিনোদপুর এলাকার সাবেক ছাত্রদল নেতা উজ্জ্বল কুমারের নামে ২১ শতাংশ জমি বাটোয়ারা করে নেয়। এমনকি সেখানে শাহাদাত হোসেন নামের একজন এবং কয়েকজন ব্যাংকার মিলে সেখানে ৬ শতাংশ সরকারি জমি ক্রয় করে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কেরামত আলীকে ভোরের পাতা অফিস থেকে সোমবার দুপুর ২ টা থেকেই কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনটি তাকে ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস)ও পাঠানো হয়।