গত ১৫ জুন রাতে চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহতের পর পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে নজরদারি বাড়িয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। চলছে ব্যাপক যুদ্ধ প্রস্তুতি। উঁচু পাহাড়ে ঘেরা দুর্গম সংঘাতের ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত পৌঁছনোর জন্য মোতায়েন করা হয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ও কমান্ডো বাহিনীকে। কাশ্মীর থেকে লাদাখে পাঠানো হয়েছে দুটি প্যারা কমান্ডো ইউনিটকে। এরমধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং দ্বিতীয়টি ইনফ্র্যান্টি ব্রিগেডের সঙ্গে ছিল। পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত সাত ব্যাটালিয়ন সেনাও। এবার পাঠানো হচ্ছে ভারতীয় সেনার ঘাতক বাহিনী বলে পরিচিত স্পেশাল কমান্ডোদের।
কারা এই ঘাতক বাহিনী?
সময়টা ২০১৫ সাল। মাত্র ৪০ মিনিটে মিয়ানমারে ঢুকে গোটা একটা জঙ্গি দলকে শেষ করে দিয়ে ফিরে এসেছিল এই ঘাতক বাহিনী। যেমন তাদের দক্ষতা, তেমনই ক্ষিপ্রতা। ইজরায়েলের বিশেষ কমান্ডোদের আদলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এই ঘাতক বাহিনী।
কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই খালি হাতে শত্রু নিধনের ক্ষমতা রাখেন এই বাহিনীর কম্যান্ডোরা। ক্ষিপ্র, ক্ষুরধার এই বাহিনীর কম্যান্ডোদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এই ধরনের স্ট্রাইকের জন্য। যে কাজ কেউ পারে না, তাও চোখের নিমেষে করে ফেলতে পারে এই ঘাতক বাহিনী।
পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল এই বাহিনী
প্রথমে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে প্যারাট্রুপ করে নামিয়ে দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে। সেখান থেকে জঙ্গলের পথে পায়ে হেঁটে তারপর পৌঁছে যাওয়া জঙ্গি ঘাঁটিতে। রাতের অন্ধকারে জঙ্গিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ভারতীয় সেনা বাহিনীর ঘাতক কমান্ডোরা।
উরিতে জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ নিয়ে ইতিহাস রচনা করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল এই ঘাতক বাহিনী। টেক অফ-প্যারা ট্রুপিং-স্ক্রোলিং-হাইডিং-অ্যাটাক এবং সবশেষে প্রত্যাবর্তন৷ নিখুঁত ভাবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাডগুলোকে ধ্বংস করেছিল এই ঘাতক বাহিনীই।
ঘাতক ট্রেনিং : ৩৫ কেজি ওজন কাঁধে ৪০ কিলোমিটার
বিভিন্ন রিপোর্টে জানা গেছে, কর্নাটকের বেলগামে ৪০ দিনের বেশি সময় ধরে ট্রেনিং দেওয়া হয় ঘাতক বাহিনীর কমান্ডোদের। দুর্গম এলাকায় অভিযানের জন্য শারীরিক ক্ষমতা ও ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণের সময় ৩৫ কেজি ওজন কাঁধে নিয়ে ৪০ কিলোমিটার দৌড়তে হয় এই কমান্ডোদের।
বিশেষ হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কমান্ডোদের প্রত্যেকেই মার্শাল আর্টে দক্ষ। ঘাতক কমান্ডো ইউনিটের প্রতিটিতে অতিরিক্ত রিজার্ভ দলও প্রস্তুত রাখা হয়।
‘হ্যান্ড টু হ্যান্ড’ কমব্যাটই জরুরি
গত ১৫ জুন গালওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-তে কাঁটাতার ও পেরেক বসানো লাঠি নিয়ে ভারতীয় সেনাদের আক্রমণ করেছিল চীনা লাল ফৌজ। হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলায় চীনা ফৌজের কমান্ডিং অফিসারসহ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মেনে নেয় বেইজিং।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সংখ্যাটা ৪৩ এর কাছাকাছি। সাম্প্রতিক কালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) পাথর, রড, লাঠি নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছে দু'দেশের সেনারা। উল্লেখ্য, ভারত ও চীন স্বাক্ষরিত ১৯৯৬ এবং ২০০৬ সালের সীমান্ত প্রোটোকল অনুযায়ী সীমান্তের দু'কিলোমিটারের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
এলএসিতে অপেক্ষায় চীনা মার্শাল আর্ট ফাইটাররা
গালওয়ান কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ভারতীয় সেনার মুখোমুখি মোতায়েনের জন্য দক্ষ পর্বতারোহী এবং মার্শাল আর্টে দক্ষ এমন সেনাদের সন্ধান শুরু করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি।
চীনের সরকারি গণমাধ্যমে জানানো হয়, তিব্বতের রাজধানী লাসায় পৌঁছেছে কুংফু ও তাইকোয়ান্দ প্রশিক্ষণ দল। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনা সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে তারা।