প্রকাশ: শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের চিন্তা করছে বিএনপি। নিষ্ক্রিয় এবং বয়স্ক ও অবিস্বস্ত নেতাদের বাদ দিয়ে আস্থাভাজন এবং দলে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিতদের ওইসব পদে বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এমনকি দলের মহাসচিব পদেও পরিবর্তনের গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি আস্থা রয়েছে হাইকমান্ডের। করোনাপরবর্তী রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ভবিষ্যতে ভাঙন থেকে দলকে রক্ষা করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে এসব পদে পরিবর্তন কাউন্সিলের আগে না পরে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে হাইকমান্ডের।
দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। মামলাজট কাটিয়ে এবং সুস্থ হয়ে পুনরায় তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া কঠিন। শীর্ষ নেতৃত্বে তিনি থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে দলের মূল নিয়ন্ত্রণ থাকবে দন্ডপ্রাপ্ত পালাতক ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতেই। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমানও তার নিজের মতো করে দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তারেক রহমান বিরোধী হিসেবে পরিচিতদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। এসব পদে তারেক অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের বসানো হতে পারে। বিশেষ করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে এ পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ কমিটিতে যারা নিষ্ক্রিয় এবং বয়সের ভারে ন্যুব্জ তাদের সরিয়ে দেয়া হবে। তাদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই দেয়া হতে পারে।
নীতিনির্ধারকরা জানান, সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছেন। তবে তাদের অনেককেই তারেক রহমান তার নিজের লোক মনে করেন না। অনেককে বিশ্বাসও করেন না। এজন্য এমন নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে চান, যারা তার বলয়ের ও তার বিশ্বস্ত। যাতে দলে নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এছাড়া দলের ভাঙনরোধে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও এ পরিবর্তন আনা হবে। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের কথা মাথায় রেখেই সবকিছু করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে দলের মধ্যে কেউ ভাঙন সৃষ্টি করতে না পারেন।
সূত্র জানায়, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসছে সেরকম ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর স্থায়ী কমিটির ফাঁকা পদে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দলের মধ্যে তারা কট্টরপন্থী এবং তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। হঠাৎ করে মহাসচিব পদে পরিবর্তনের গুঞ্জনকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, এ মুহূর্তে মির্জা ফখরুলের বিকল্প কেউ তৈরি হয়নি। দেশে এবং দেশের বাইরে তার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা এ মুহূর্তে অন্য কারও নেই। কূটনীতিকদের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া দলের মধ্যে যে দ্বিধাবিভক্তি, তাতে এখন মহাসচিব পরিবর্তন করলে তা আরও তীব্র হবে। সবকিছু বিবেচনায় দলের হাইকমান্ড এখন পর্যন্ত মির্জা ফখরুলের প্রতি আস্থাশীল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠন স্থগিত ছিল। সম্প্রতি তা শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কাউন্সিলের আগে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়। আমরা এখন সেটাই করছি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা কাউন্সিলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করব। কাউন্সিল হলে তো বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম এমনিতেই থাকে না। নতুন কমিটি করতে হয়। কাউন্সিলের আগে পদগুলো পূরণ করা হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মহাসচিব পরিবর্তন নিয়ে দলের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই।
জানা গেছে, শুধু স্থায়ী কমিটি নয়, নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ এমনকি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বেও কট্টরপন্থীদের জায়গা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতদের এসব পদে বসানো হচ্ছে। দলের পাশাপাশি অন্যান্য উপকমিটিতেও তারেক রহমানের প্রতি আস্থাভাজনরাই পাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘদিন পর দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম কাউন্সিলের একটা অংশ। প্রতিটি জেলা, উপজেলা বা থানা কমিটিগুলো কাউন্সিলের আগেই সম্পন্ন করতে হয়। সেই কাজটা আমাদের শুরু হয়েছে। কাউন্সিল তো একটা সময় হবেই। তবে করোনা পরিস্থিতি দেখেই আমরা কাউন্সিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।