দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে সিছুয়ান চায়না কাউন্সিল ফর দ্যা প্রোমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিছুয়ান সিসিপিআইটি (শুক্রবার ২৫ সেপ্টেম্বর) এই অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও সরকারী নেতাদের সাথে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম “চায়না (সিছুয়ান)-সাউথ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়া বিজনেস লিডার্স অনলাইন কনফারেন্স ওপেনিং সেরেমনি অ্যান্ড ২০২০ অনলাইন প্রডাক্টস এক্সিবিশন ফর সাউথ অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়া কান্ট্রিজ” শীর্ষক সম্মেলনে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর ব্যবসায়িক সংস্থার একজন অন্যতম প্রতিনিধিদের হিসাবে মূল বক্তব্য প্রদান করেন।
মূল বক্তব্যে সিসিপিআইটিকে এই জাতীয় উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “এই বছর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (মুজিব বর্ষ) জন্মশতবর্ষ । বঙ্গবন্ধু আজকের কর্মসূচির মতো দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতা বহাল রাখার জন্য আরও অনেক কিছু করে গিয়েছেন।”
ফাহিম আরও বলেন, “বর্তমান কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাব অস্থিতিশীল এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার উপর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এফবিসিসিআই তার সক্রিয় এডভোকেসি এবং স্থানীয় আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে আর্থিক ও অ-আর্থিক ব্যবস্থা সহ আর্থ-সামাজিক এজেন্ডা নিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য আমরা একটি শক্তিশালী রোডম্যাপ প্রণয়নে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সৎ মনোভাবের অংশ হিসাবে, বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই বেশকিছু উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে যেমনটা ইতোমধ্যে সিসিপিআইটি বেইজিং-এর সাথে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বাড়ানো হয়েছে।”
মহামারী সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের তাত্ক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণ ও পুনরুদ্ধারে জোর দেওয়ার প্রশংসা করে ফাহিম বলেন, “আমরা যখন স্বাভাবিকতার দিকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি, তখন আমাদের অর্থনীতির বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। কেননা ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে ৫.২৪% প্রবৃদ্ধি, ৫.৪% রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি এবং ১০% বৈদেশিক রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাণিজ্যক্ষেত্রে পুনরুদ্ধারও বেশ শক্তিশালী।”
তিনি আরও বলেন, “অধিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য শীর্ষ পাঁচটি পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং আইপি সুরক্ষা সহ আমাদের আরওআই প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলেছে। প্রযুক্তি এবং জ্ঞান স্থানান্তরের মাধ্যমে চীন সহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উত্পাদন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে রাখা সহ, ডোমেস্টিক কনজিউমার বেস, আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ, বিনাশুল্কে ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে বাণিজ্য সুবিধা এবং এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট সুবিধা সহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সাথে যৌথ উদ্যোগ অথবা লাইসেন্সের আওতায় লাভজনক সম্ভাবনার পাশাপাশি কর, শুল্ক, প্রণোদনা, ১০০% মালিকানা, মুনাফা, লভ্যাংশ প্রত্যাবাসন ইত্যাদি বিনিয়োগ সুবিধাও পেতে পারে।”
একে অন্যের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি এফবিসিসিআই সভাপতি সিসিপিআইটি সিছুয়ান কাউন্সিলের সাথে জ্ঞান ও রিসোর্স আদান-প্রদানের বিষয়ে তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গ্যানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও)-এর সাবেক সভাপতি ও ন্যাশনাল সাউথ এশিয়ান স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (চেংডু) রিসার্স সেন্টার-এর সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিক কনসালটেন্ট ঝ্যাং শাওগাং; সার্ক সিসিআই-এর সভাপতি ইফতিখার আলী মালিক; আসিয়ান-এর ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ডিভিশনের ডিরেক্টর গুও চুয়ানওয়ে এবং সিসিপিআইটি সিছুয়ান কাউন্সিল-এর সভাপতি হুয়াং লি এতে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা মূল বক্তব্য রাখেন।