প্রকাশ: শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
‘ধানের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে’নিজস্ব প্রতিবেদক
মাসের
শুরুতে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে আকাশচুম্বী হওয়ার মধ্যেই এবার ভোজ্যতেল ও
চালের দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে পামওয়েল ও খোলা সয়াবিন
তেলের দাম লিটারে অন্তত ১০ টাকা করে এবং সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ টাকা
করে বেড়েছে বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ভাষ্য। তেলের দাম বাড়ার পেছনে
কেউ কেউ বিশ্ববাজারের দোহাই দিলেও চালের দাম বাড়ার কোনো ‘যৌক্তিক কারণ’
দেখাতে পারছেন না বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর আলম
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, চারদিন ধরে পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম
অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তিনি জানান,
পাম তেল ও সয়াবিন তেল লিটারে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। খুচরায় ৭৩ টাকার পাম তেল
এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকায়। ৮৫ টাকার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।
জাহাঙ্গীর বলেন, এক সপ্তাহ আগে পামওয়েলের ড্রাম (৫ মণ) ছিল ১২ হাজার টাকা,
এখন সেটা হয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। সয়াবিন তেল আগে ছিল ১৫ হাজার এখন সেটা
হয়েছে ১৭ হাজার ৬০০ টাকা। পাশের আরেক মুদি দোকানি জানান, দাম বাড়ার পর এখন
সুপার সয়াবিন আর সয়াবিন একই দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি সুপার ৯৫ টাকায়।
মানের দিক থেকে সয়াবিনের চেয়ে একধাপ পিছিয়ে আছে সুপার। পুরান ঢাকার মৌলভী
বাজারে পাইকারি ভোজ্যতেল বিক্রেতা ও পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির
সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, গত সপ্তাহে কয়েকদিনের জন্য
ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পর এর প্রভাব দেশীয়
বাজারে পড়েছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ার পর গত তিনদিন আগে দেশের
পাইকারি বাজারেও দাম কমেছে। পাইকারিতে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম মণপ্রতি
আড়াইশ টাকা বা তার চেয়ে একটু বেশি বেড়েছিল। এখন কমে গেছে।
সরকারি
বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহ আগে খোলা সোয়াবিন তেল বিক্রি
হচ্ছিল প্রতি লিটার ৮৪ টাকা থেকে ৮৮ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা
থেকে ৯৩ টাকায়। পামওয়েল যেটা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে
সর্বোচ্চ ৮৪ টাকায়। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ৩৫ টাকার
পেঁয়াজের দাম হঠাৎ তিনগুণ বেড়ে ১১০ টাকায় গিয়েছিল। সরকারের পদক্ষেপের ফলে
দাম কিছুটা কমে ১০০ টাকার নিজে নামলেও দ্বিগুণের চেয়ে অনেক বেশি দামেই
বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে
প্রতিকেজি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ কোনো যৌক্তিক
কারণ ছাড়াই চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত দুই টাকা বেড়ে যায়। কারওয়ান
বাজারে রনি রাইস এজেন্সির মনিরুল ইসলাম জনি বললেন, এক সপ্তাহের মধ্যে
পাইজামের দর ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ টাকা হয়েছে। সাধারণ মানের মিনিকেট ৪৮
টাকা থেকে বেড়ে ৫১ টাকা হয়েছে। বিআর আটাশ সাড়ে ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা
হয়েছে।
রশিদ, মোজাম্মেল ও বিশ্বাসসহ অন্যান্য
নামি ব্র্যান্ডের মিনিকেটের ৫০ কেজির বস্তা ২৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৭০০ টাকায়
উঠেছে। মিরপুর-১ নম্বর পাইকারি বাজারের বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন বলেন,
সম্প্রতি ধানের দাম বেড়েছে বলে শুনছি। ধানের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে মিলাররা
চালের দাম বাড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহে সুগন্ধি চাল ছাড়া বাকি সব ধরনের চালের
দাম বস্তায় দেড়শ থেকে দুইশ টাকা করে বেড়েছে। মিল পর্যায়ে এখন মিনিকেট ২৭০০
টাকা, পাইজাম, লতা বিআর আটাশ ২৩৫০ টাকা, মোটা চাল ২২০০ টাকায় প্রতিবস্তা
বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাজারে আলুর দামও বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে
প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ৪০ টাকা, এক পাল্লা (৫ কেজি) ২০০ টাকা। তবে
এদিন আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি পাল্লা ১৭০ টাকা। খুচরায় প্রতি কেজির দাম
পড়ছিল ৩৪ টাকা।
বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে এবার প্রায়
তিনমাস ধরেই চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে শাক সবজি। বাজারে অধিকাংশ সবজির দামই এখন
প্রতিকেজি ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। বিগত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায়
আজও বড়বাগ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, ঝিঙা ৭০
টাকা, সিম ১৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই
সপ্তাহ ধরেই বাজারে নতুন আসা ফুল কপি ও বাঁধা কপি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছিল ৬০
টাকা। তবে এখন ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের মতোই এই
সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১১০ টাকা, হাসের ডিম
১৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১২৫ টাকা, লেয়ার ২৩০ টাকা থেকে ২৪০
টাকা, দেশি মোরগের দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা।